বন-পাহাড়ের কোলে
[সদ্যপ্রয়াত জীববিজ্ঞানী, লেখক, অনুবাদক, নিসর্গবিদ শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মা-র প্রতি
শ্রদ্ধাঞ্জলি]
ছনের ছাউনি, ধবধবে মাটির দেয়ালঘেরা একটি চালাঘর, এক
চিলতে বারান্দা, ঝকমকে নিকোনো উঠোন, উঠোনের ওপাশে রাস্তা আগলে টংগীঘর, চারদিকে অনুচ্চ
পাঁচিল, তারপর নিবিড় বন। ছোট ছোট টিলায় ছবির মতো সুন্দর এক একটি বাড়ি। পিচাশ, শিয়ালমুত্রা,
লুটকী আর তারাফুলের পাশাপাশি টিলার কিনারার দিকে রয়েছে গল্লাবেতের ঝোপ, রামকলা আর মুলিবাঁশের
ঘনো বন। জারুল, গর্জন, নাগেশ্বরসহ হরেক রকম গাছগাছালিতে ভরা এক একটি টিলা। প্রকৃতি
নিপুণভাবে সাজিয়েছে টিলাগুলোকে। টিলা চুঁইয়ে পানি ঝরে অনুক্ষণ, সিক্ত থাকে টিলার পাদদেশ।
মওকা পেয়ে কৃষক ফসল তোলে বারো মাস। এখানেই বিপ্লবদের বাড়ি। বাড়ির পাশেই ঝরনা। পাথর
আর কাঁকড়ের উপর গড়িয়ে পড়া স্বচ্ছ জলধারা। এমন যে, কোথাও কোথাও পায়ের পাতাটুকুই তাতে
ডোবে, কিন্তু বৃষ্টি নামলেই প্রমত্তা, ঘোলা জলের ঢল গর্জে ছুটে চলে দু’কুল কাঁপিয়ে;
যেন ফনা তোলে তেড়ে আসে নাগরাজ। ঝরনার ও’কূল ঘেষে টিলার পর টিলা, পাহাড়ের পর পাহাড়-
সীমানাহীন, কে জানে কোথায় ঠেকেছে, হয়তো-বা হিমালয়ে। বিপ্লব ভাবে, ভাবনাগুলো তাকে কোন
সুদূরে নিয়ে যায়।