সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

পূজায় হোম করার পদ্ধতি



সরস্বতী পূজায় (সংক্ষিপ্ত) হোম
উপক্রম- পূর্বমুখে বসে আচমন, সামান্যার্ঘ্য স্থাপন, আসনশুদ্ধি ও গুর্বাদিপ্রণাম করবে। তারপর বালি দিয়ে হস্তপ্রমাণ চতুষ্কোণ স্থণ্ডিল রচনা করে সেই স্থণ্ডিলের মধ্যভাগে তর্জনী-অঙ্গুষ্ঠযোগে কুশমূল দিয়ে বিন্দুগর্ভ ত্রিকোণ (পুংদেবতা হলে ঊর্ধ্বমুখে, স্ত্রীদেবতা হলে অধোমুখে), তার বাইরে ষটকোণ, তার বাইরে
বৃত্ত এবং সেই বৃত্তকে অষ্টদল পদ্মের কর্ণিকারূপে কল্পনা করে তার আটদিকে আটটি দল আঁকবে, তার চারদিকে ভূপুর এঁকে তাতে অষ্টদল পদ্মের অগ্নিকোণে (পূর্ব-দক্ষিণ) ‘নমঃ’ মন্ত্রে অর্ধহস্ত পরিমিত উত্তরাগ্র তিনটি রেখা এবং বায়ুকোণে (উত্তর-পশ্চিম) পূর্বাগ্র তিনটি সরল রেখা আঁকবে।

স্থণ্ডিলপূজা- অতঃপর ‘ওঁ ঐং’ মূলমন্ত্রে স্থণ্ডিল বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশ দিয়ে তাড়ন, ‘হূঁ’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্ব তালত্রয়ে রক্ষণ, মূলমন্ত্রে পুষ্পাঞ্জলি দান ও প্রণবে (ওঁ) অভ্যুক্ষণ করবে।
যন্ত্রের মধ্যস্থলে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বহ্নের্যোগপীঠায় নমঃ’ মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে। পরে পূর্বাগ্র রেখা তিনটিতে যথাক্রমে পূজা করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মুকুন্দায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ঈশানায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে পুরন্দরায় নমঃ’। উত্তরাগ্র রেখা তিনটিতেও যথাক্রমে পূজা করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রহ্মণে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বৈবস্বতায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সরস্বতীস্থণ্ডিলায় নমঃ’ মন্ত্রে পূজা করবে।

বাগীশ্বরী ধ্যান- অতঃপর বাগীশ্বরী ধ্যান করবে-
ওঁ বাগীশ্বরীমৃতুস্নাতাং নীলেন্দীবরসন্নিভাম্। বাগীশ্বরেণ সংযুক্তাং ক্রীড়াভাবসমন্বিতাম্। সরস্বতীস্বরূপাম্।। [ যে দেবতার পূজা হবে তাঁর নাম যুক্ত হবে।] এবার সমিধ কাঠ সাজিয়ে নিতে হবে। পরে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে- ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে বাগীশ্বর্যৈ নমঃ। ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে বাগীশ্বরায় নমঃ।

অগ্নি শোধন-
যথাবিহিত অগ্নি এনে বিহিত পাত্রে (কাংস্যপাত্রে বা সমিধোপরি) স্থাপনপূর্বক মূলান্তে ‘ওঁ ঐঁ সরস্বত্যৈ বৌষট্’ মন্ত্রে বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশদ্বারা তাড়ন, ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘হূঁ’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন দ্বারা অগ্নি সংস্কার করে ‘রং’ মন্ত্রে কিঞ্চিন্মাত্র অগ্নি নিয়ে ‘হূঁ ফট্ ক্রব্যাদেভ্যঃ স্বাহা’ মন্ত্রে র্নৈঋত (দক্ষিণ-পশ্চিম) কোণে পরিত্যাগ করবে।

অগ্নি-স্থাপন-
অনন্তর ‘ওঁ’ মন্ত্রে দুই হাতে অগ্নি উত্তোলন করে মণ্ডলোপরি তিনবার দক্ষিণাবর্তে ঘুরিয়ে হাঁটু পেতে বিপরীত দিক থেকে আপনার অভিমুখে মণ্ডলমধ্যস্থলে সেই  বহ্নি স্থাপন করবে। পরে ‘রং বহ্নিমূর্তয়ে নমঃ, রং বহ্নিচৈতন্যায় নমঃ’ মন্ত্রদ্বয়ে গন্ধপুষ্প দিয়ে পূজা করবে এবং ‘ওঁ চিৎপিঙ্গল হন হন দহ দহ পচ পচ সর্বজ্ঞাজ্ঞাপয় স্বাহা’ মন্ত্রে জ্বালিনীমুদ্রা দেখিয়ে অগ্নি প্রজ্বলিত করবে ও করজোড়ে পাঠ করবে- ‘ওঁ অগ্নিং প্রজ্বলিতং বন্দে জাতবেদং হুতাশনম্। সুবর্ণবর্ণমমলং সমিদ্ধং বিশ্বতোমুখম্।। এরূপে উপাসনা করে অগ্নির নামকরণ করবে- ‘ওঁ অগ্নে ত্বং সরস্বতীনামাসি’ (যে দেবতার পূজা হবে তাঁর নাম বসবে)।

অগ্নি-আবাহন- অতঃপর আবাহনাদি পঞ্চমুদ্রায় অগ্নির আবাহন করবে- ওঁ সরস্বতীনামাগ্নে ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ। ইহ তিষ্ঠ, ইহ তিষ্ঠ। ইহ সন্নিধেহি, ইহ সন্নিধেহি। ইহ সন্নিরুদ্ধস্ব, ইহ সন্নিরুদ্ধস্ব। ইহ সম্মুখীভব, ইহ সম্মুখীভব। অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ।

অগ্নি-পূজা- পঞ্চোপচারে ঐ অগ্নির অর্চনা করবে-
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ গন্ধঃ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং সচন্দনপুষ্পং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ ধূপ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ দীপঃ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং তাম্বুলং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
পরে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অগ্নের্হিরণ্যাদিসপ্তজিহ্বাভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সহস্রার্চিষে হৃদয়ায় নমঃ ইত্যাদ্যগ্নিষড়ঙ্গেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অগ্নয়ে জাতবেদসে ইত্যাদ্যষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ।

বহির্দেশে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রাহ্ম্যাদ্যষ্টশক্তিভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে পদ্মাদ্যষ্টনিধিভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদিলোকপালেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বজ্রাদ্যস্ত্রেভ্যো নমঃ।

স্রুক-স্রুব সংস্কার-
স্রুক ও স্রুব (যা দিয়ে আহুতি দেওয় হয়) অধোমুখে অগ্নিতে তপ্ত করে উহা বামহস্তে রেখে তার অগ্র, মধ্য ও মূলদেশ কুশ দিয়ে মার্জন ও জল দিয়ে প্রোক্ষণপূর্বক পুনরায় তপ্ত করে মার্জিত কুশ অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে এবং নিজের দক্ষিণে কুশোপরি ঐ স্রুক ও স্রুব স্থাপন করবে।

ঘৃত-সংস্কার- কুশোপরি ঘৃতপাত্র স্থাপন ও ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ করে তাতে ঘৃত স্থাপন করবে। পরে বীজ (ওঁ ঐং) পাঠ করে ঐ ঘৃত বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশ দ্বারা তাড়ন, ‘হূঁ’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্ব তালত্রয়ে রক্ষণ ও ‘বং’ মন্ত্রে যোনিমুদ্রা প্রদর্শন করবে। পরে ঘৃত অগ্নিতে গলিয়ে দু’টি কুশ জ্বালিয়ে ‘হূঁ’ মন্ত্রে তার ওপর ঘুরিয়ে অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে। অনন্তর এক বিঘৎ (অর্ধহস্ত) পরিমিত দু’টি কুশ ঘৃতোপরি রেখে ঘৃতকে তিনভাগ করবে। বাম ভাগের ঘৃতকে ইড়া, মধ্য ভাগকে সুষুম্না ও দক্ষিণ ভাগকে পিঙ্গলারূপ ভাবনা করে হোম করবে।

আহুতি-প্রদান- ‘নমঃ’ মন্ত্রে দক্ষিণ ভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (১) ‘ওঁ অগ্নয়ে স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির দক্ষিণনেত্রে ( যে স্থানে অগ্নি অল্পমাত্র জ্বলছে) আহুতি দিবে ও দক্ষিণভাগে রক্ষিত কোন পাত্রে হুতশেষ রাখবে।
পরে ‘নমঃ’ মন্ত্রে বামভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (২) ‘ওঁ সোমায় স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির বামনেত্রে আহুতি দিবে ও হুতশেষ পূর্বোক্ত পাত্রে রাখবে। হুতশেষ প্রতিবারই রাখবে।
এবার ‘নমঃ’ মন্ত্রে মধ্যভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (৩) ‘ওঁ অগ্নীষোমাভ্যাং স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির ললাটনেত্রে আহুতি দিবে।
পুনরায় দক্ষিণ ভাগ থেকে ‘নমঃ’ মন্ত্রে ঘৃত নিয়ে (৪) ‘ওঁ অগ্নয়ে স্বিষ্টিকৃতে স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির মুখে (যে স্থানে অগ্নি অধিক জ্বলছে) আহুতি দিবে। প্রত্যেক আহুতির পর হুতশেষ রাখতে হয়।

মহাব্যাহৃতি হোম- ঘৃত দ্বারা এই চারটি মন্ত্রে আহুতি দিবে। (১) ওঁ ভূঃ স্বাহা, (২) ওঁ ভুবঃ স্বাহা, (৩) ওঁ স্বঃ স্বাহা, (৪) ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ স্বাহা।
তারপর ‘ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা’ মন্ত্রে তিনবার ঘৃতদ্বারা আহুতি দিবে।
অতঃপর বীজমন্ত্রের সহিত ‘স্বাহা’ পদ যোগ করে (ওঁ ঐং স্বাহা) ২৫ বার আহুতি দিবে এবং পরে আপনার সহিত অগ্নি ও দেবতার ঐক্য চিন্তা করে ঐ (ওঁ ঐং স্বাহা) মন্ত্রে ১১ বার আহুতি দিবে।

সঙ্কল্প- তাম্রপাত্রে ( কুশীতে ) মূল ও অগ্রভাগের সহিত তিনটি কুশ, তিল, তুলসী,  হরিতকী, গন্ধ, পুষ্প, আতপ চাল ও জল নিয়ে বীরাসনে (দক্ষিণ জানু পেতে ) পূর্বমুখী বসবে। বাম করতলে কুশী স্থাপন করে দক্ষিণ  করতল দ্বারা আচ্ছাদনপূর্বক পাঠ করবেঃ
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ
(যজমানের গোত্র ও নাম)] সরস্বতী প্রীতিকামঃ সরস্বতীপূজাকর্মণি ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাহা’ ইতি মন্ত্রেণ অষ্টোত্তরশত (বা অষ্টাবিংশতি) সংখ্যক-সাজ্যবিল্বপত্রৈঃ হোমমহং করিষ্যে (পরার্থে- করিষ্যামি )।
পরে হাতের পাত্রটি ঈশান কোণে উপুড় করে রেখে তার উপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে আতপ চাল ছড়াবে এবং ঘণ্টা বাজাবে-
ওঁ যজ্জাগ্রতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি।
দূরঙ্গমং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।
অতঃপর হবনীয় বিল্বপত্রে যথাযথভাবে অভ্যুক্ষণ ও অর্চনা করে পূর্বোক্ত ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাহা’ মন্ত্রে মৃগমুদ্রায় এক একটি সাজ্যবিল্বপত্র গ্রহণ করে আহুতি প্রদান করবে।
তারপর (১) ‘ওঁ ঐং সরস্বতীদেব্যা অঙ্গদেবতাভ্যঃ স্বাহা’, (২) ‘ওঁ ঐং সরস্বতীদেব্যা আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা’ মন্ত্রে এক একটি আহুতি দিবে। অতঃপর অন্যান্য (গুরু-গণেশাদি) পূজিত দেবতার প্রত্যেককে এক একটি আহুতি প্রদান করবে।

পূর্ণাহুতি- পান ও কলা (বা কোন বিহিত ফল) সহ ঘৃতপূর্ণ পাত্র (স্রুব) হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে পূর্ণাহুতি দিবে- ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাহা, ওঁ ইতঃপূর্বং প্রাণবুদ্ধিদেহধর্মাধিকারতো জাগ্রৎস্বপ্নসুষুপ্ত্যবস্থাসু মনসা বাচা কর্মণা হস্তাভ্যাং পদ্ভ্যামুদরেণ শিশ্না যৎকৃতং যদুক্তং যৎস্মৃতং তৎসর্বং ব্রহ্মার্পণং ভবতু স্বাহা, মাং মদীয়ঞ্চ সকলং সরস্বতীচরণে সমর্পয়ে’ বলে পাত্রের সকল ঘৃত প্রভৃতি অগ্নিতে দিয়ে মন্ত্র পাঠ করবে-
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। হরিঃ ওঁ তৎসৎ।

অগ্নিবিসর্জন- সংহারমুদ্রায় দেবতাকে অগ্নি থেকে নিজ হৃদয়ে এনে ‘ক্ষমস্ব’ মন্ত্রে অগ্নি বিসর্জন করবে এবং ‘ওঁ অগ্নে ত্বং সমুদ্রং গচ্ছ’ মন্ত্রে অগ্নিকে দক্ষিণদিকে চালিত করবে। পরে ‘ওঁ পৃথ্বি ত্বং শীতলা ভব’ মন্ত্রে অগ্নির ঈশান কোণে দধি বা দুগ্ধ (তদভাবে জল) নিক্ষেপ করে অগ্নি নির্বাপিত করবে।

পূর্ণপাত্র উৎসর্গ- ‘বং এতস্মৈ পূর্ণপাত্রায় (অথবা পূর্ণপাত্রানুকল্পায় ভোজ্যায়) নমঃ, ওঁ এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতৎসম্প্রদানায় ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ’ এইরূপে যথাবিধি অর্চনা করে নিম্নোক্ত মন্ত্রে উৎসর্গ করবে-
 বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা (পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ (যজমানের গোত্র ও নাম ) ] কৃতৈতৎ সরস্বতীপূজাঙ্গীভূতহোমকর্মণঃ সাঙ্গতার্থং ব্রহ্মদক্ষিণামিদং পূর্ণপাত্রং (অথবা পূর্ণপাত্রানুকল্পং ভোজ্যং) তস্মৈ ব্রহ্মণেহহং সম্প্রদদে (অপরের জন্য হলে- সম্প্রদদানি) বলে জলবিন্দু প্রক্ষেপ করে উৎসর্গ করবে। এই্ সময়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশে দক্ষিণা দান করতে হবে।
 দক্ষিণা- রজতখণ্ড বা স্বর্ণখণ্ড বা মুদ্রা (বা হরীতকী বা পুষ্প) কোন পাত্রে রেখে অর্চনা করবে। ‘বং এতস্মৈ কাঞ্চনমূল্যায় (রজতখণ্ডায় বা মুদ্রকায়) নমঃ’ মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজলে প্রোক্ষণ (চিৎ হস্তে জলের ছিটা) করবে। ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ কাঞ্চনমূল্যায় (রজতখণ্ডায়) নমঃ’, মন্ত্রে দক্ষিণাদ্রব্যের উপর গন্ধপুষ্প অর্পণ করবে। নিম্নোক্ত মন্ত্রে আবার গন্ধপুষ্পে পূজা করবে-
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতৎসম্প্রদানায় ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ। তারপর-
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ ( যজমানের গোত্র ও নাম ) ] সরস্বতী প্রীতিকামনায়া কৃতৈতৎ সরস্বতীপূজাকর্মণঃ সাঙ্গতার্থং দক্ষিণামিদং কাঞ্চনমূল্যং (রজতখণ্ডমর্চিতং) শ্রীবিষ্ণুদৈবতং সরস্বত্যৈ অহং সম্প্রদদে (অপরের জন্য হলে- সম্প্রদদানি) বলে অর্ঘ্যজলবিন্দু প্রক্ষেপ দ্বারা নিবেদনপূর্বক দেবতার উদ্দেশে প্রদান করবে। অতঃপর অচ্ছিদ্রাবধারণ ও বৈগুণ্য সমাধান করবে।

অচ্ছিদ্রাবধারণ ও বৈগুণ্য সমাধান- প্রথমে করজোড়ে বলবে- ‘ওঁ কৃতৈতৎসরস্বতীপূজাকর্মাচ্ছিদ্রমস্তু’। পরে দক্ষিণ হস্তে জল গণ্ডুষ নিয়ে বলবে- ‘ওঁ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ ( যজমানের গোত্র ও নাম ) ] কৃতেহস্মিন্ কর্মণি যদ্বৈগুণ্যং জাতং তদ্দোষপ্রশমনায় শ্রীবিষ্ণুস্মরণমহং করিষ্যে’ এবং ঐ জল সম্মুখস্থ জলপাত্রে ফেলবে। অনন্তর পাঠ করবে- ‘ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্। পাঠান্তে ‘ওঁ বিষ্ণুঃ’ এই মন্ত্র ১০ বার জপ করবে। করজোড়ে পাঠ করবে-
‘ওঁ প্রীয়তাং পুণ্ডরীকাক্ষঃ সর্বযজ্ঞেশ্বরো হরিঃ।
তস্মিংস্তুষ্টে জগত্তুষ্টং প্রীণিতে প্রীণিতং জগৎ’।
তারপরে হাতে এক গণ্ডুষ জল নিয়ে- ‘ওঁ এতৎ কর্ম শ্রীরামকৃষ্ণার্পণমস্তু’ মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশে ত্যাগ করবে।
 পরে দেবতাকে প্রণাম করবে এবং স্রুবলগ্ন ভস্ম দ্বারা তিলক করবে।
মন্ত্র- ‘হ্রীং ক্লীং সর্বশান্তিকরো ভব’।

ক্ষমাপ্রার্থনা-
করজোড়ে বলবে-
ওঁ বিধিহীনং ক্রিয়াহীনং মন্ত্রহীনং যদর্চিতং
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা পরিপূর্ণং তদস্তু মে।
কর্মণা মনসা বাচা ত্বত্তো নান্যো গতির্মম
অন্তশ্চারেণ ভূতানাং দ্র্রষ্টা ত্বং পরমেশ্বর।।
অতঃপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে আত্মসমর্পণকরতঃ চরণামৃত পান করে প্রসাদ ধারণ করবে।
ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে
বীণারঞ্জিত পুস্তকহস্তে ভগবতি ভারতি দেবি নমোহস্তুতে।।
ওঁ সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন