পূজাবিধি
দু’টি কথা
পূজাবিধি
প্রকাশিত হল। এতে পূজাবিধির একটি উদাহরণ হিসেবে শ্রীশ্রীসরস্বতীর সাধারণ ও বিশেষ
পূজাপদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ভক্ত সামবেদ অথবা যজুর্বেদ অনুযায়ী
পূজা করে থাকেন তাই এ দু’টি বেদোক্ত পূজা পদ্ধতি সন্নিবেশিত হল। সকল দেবদেবীর পূজা
একই প্রকার, কেবল মূল মন্ত্র, ধ্যান, প্রণাম ও স্তব বিভিন্ন। পরিশিষ্ট-১ এ শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে পূজা,
শ্রীশ্রীলক্ষ্মী পূজা ও শ্রীশ্রীমনসা পূজাপদ্ধতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিশিষ্ট-২ এ সন্নিবেশিত
করা হয়েছে- প্রশস্ত পুষ্প,
নিষিদ্ধ পুষ্পাদি, নিষিদ্ধ বাদ্য, প্রতিনিধি, উপচার নিবেদন বিধি, যজুর্বেদীয় পঞ্চগব্য
শোধনমন্ত্র, সামবেদীয় পঞ্চগব্য শোধন
মন্ত্র, পঞ্চামৃত
এবং ত্রিবেদীয় পঞ্চামৃত শোধন মন্ত্র প্রভৃতি।
এ গ্রন্থ প্রণয়নে পণ্ডিত সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য্য
সঙ্কলিত পুরোহিত-দর্পণ, কলিকাতা এবং শ্রীরামকৃষ্ণ পূজাপদ্ধতি, উদ্বোধন কার্যালয়,
কলকাতা, অক্টোবর, ১৯৯২ গ্রন্থ দু’খানাসহ আরও কিছু গ্রন্থের বিশেষ সহায়তা নেয়া
হয়েছে। এ সব গ্রন্থের লেখক ও প্রকাশককে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
পূজাবিধি ভক্তজনের উপকারে লাগলেই আমার প্রচেষ্টা
সার্থক হবে।
নির্মল চন্দ্র শর্মা
ফোন : ৮৮০১৭২০৮৪৯৭২৩
nspti61@gmail.com
শ্রীশ্রীসরস্বতী পূজাপদ্ধতি
উপবেশন ও আসন- সকালে স্নান-আহ্নিক সেরে
ইষ্টমন্ত্র জপ বা স্তব পাঠ করতে করতে পূজাস্থলে গিয়ে শুদ্ধাসনে পূর্বমুখে বা
উত্তরমুখে বসবেন।
১। আচমন- গরুর কানের ন্যায় হাতের তেলো করে, ডান হাতের বুড়ো
আঙ্গুলের গোড়ায় মাষকলাই ডুবতে পারে এমন পরিমাণ জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে তিনবার পান করে ডান অঙ্গুষ্ঠের মূল দেশ দিয়ে
মিলিত ঠোঁটদুটি ডান থেকে বামে দু’বার মার্জনা করবে ও হাত ধুয়ে ফেলবে।
এবারে
তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার মিলিত অগ্রভাগ দ্বারা ওষ্ঠ ও অধর স্পর্শ করবে। এভাবে
অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীর মিলিত অগ্রভাগ দিয়ে ডান ও বাম নাসাপুট, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকার
মিলিত অগ্রভাগ দিয়ে প্রথমে ডান ও পরে বাম চোখ, তারপরে ডান ও বাম কান ছোঁবে। এরপরে
অঙ্গুষ্ঠ ও কনিষ্ঠার অগ্রভাগ দিয়ে নাভি স্পর্শ করবে ও হাত ধুয়ে ফেলবে।
অতঃপর
করতল দিয়ে হৃদয়, সমস্ত আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে মাথা এবং ডান ও বাম বাহুমূল স্পর্শ
করবে ও হাত ধুয়ে হাত জোড় করে পাঠ করবে :
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা
পশ্যন্তি সূরয়ঃ
দিবীব চক্ষুরাততম্ ৼ
ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।
তান্ত্রিক আচমন- ওঁ আত্মতত্ত্বায় স্বাহা । ওঁ বিদ্যাতত্ত্বায় স্বাহা । ওঁ শিবতত্ত্বায় স্বাহা ।
ক্রমে এই তিনমন্ত্রে তিনবার জল পান করে আচমন করবে।
২। গন্ধাদির অর্চনা- ‘ওঁ এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ’ -মন্ত্রে পুষ্পপাত্রে সাজানো গন্ধ ও পুষ্পাদিতে জলের দ্বারা তিনবার প্রোক্ষণ ( চিৎ হাতে জলের
ছিটা ) করবে। পরে গন্ধপুষ্প নিয়ে ‘ওঁ এতে
গন্ধপুষ্পে এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ’ বলে পুষ্পপাত্রে দিবে এবং হাতে এক
একটি গন্ধপুষ্প নিয়ে নিচের এক একটি মন্ত্র বলে বলে গন্ধপুষ্প তাম্রকুণ্ডে দিয়ে
দিয়ে পূজা করবে।
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
এতৎসম্প্রদানেভ্যঃ পূজনীয়দেবতাভ্যো নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
শ্রীগুরবে নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
গণেশাদিপঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
নমো নারায়ণায় নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ব্রাহ্মণেভ্যো নমঃ’।
৩। সূর্যার্ঘ্য- কুশীতে জল, রক্তপুষ্প, রক্তচন্দন,
আতপ চাল, যব, তিল, সরিষা, কুশের অগ্র ও দুর্বা নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে নিবেদন করবে : ‘ওঁ নমো
বিবস্বতে ব্রহ্মন্ ভাস্বতে বিষ্ণুতেজসে।
জগৎসবিত্রে
শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িনে।
এষোহর্ঘ্যঃ
শ্রীসূর্যায় নমঃ’- মন্ত্রে
সন্মুখস্থ বাণেশ্বরাদি যন্ত্রের উপর দিবে ও নিচের মন্ত্রে প্রণাম করবে-
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ ।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।
[ জ্ঞাতব্যঃ রক্তপুষ্প, রক্তচন্দন, আতপ চাল, যব,
তিল, সরিষা, কুশের অগ্র ও দুর্বা সকল দেবতা বিষয়ক অর্ঘ্যেই প্রদান করা যায়।
অন্যান্য দ্রব্যের অভাব হলে শুধু আতপ চাল ও দুর্বা দ্বারা প্রদান করা যায়। ]
৪। স্বস্তিবাচন- ‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্
লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ পুণ্যাহং ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ
পুণ্যাহং’ তিনবার বলতে বলতে
ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে।
‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্
লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ স্বস্তি ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ
স্বস্তি’ তিনবার বলতে বলতে
ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে।
‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্
লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ
ঋদ্ধ্যতাম্’ তিনবার বলতে বলতে
ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে। পরে নিম্নোক্ত মন্ত্রপাঠ ও ঘণ্টাবাদনসহ আতপ চাল
ছড়াবে।
যজুর্বেদীয়-স্বস্তিবাচন- ওঁ স্বস্তি
ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ ।
স্বস্তি
নস্তার্ক্ষো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।
ওঁ স্বস্তি
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
সামবেদীয়-স্বস্তিবাচন- ওঁ
সোমং রাজানং বরুণমগ্নিমন্বারভামহে ।
আদিত্যং বিষ্ণুং সূর্য্যাং ব্রাহ্মণঞ্চ বৃহস্পতিম্।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
তান্ত্রিক-স্বস্তিবাচন- হ্রীঁ হূঁ স্বস্তি নঃ কাত্যায়নী অপর্ণবা
হ্রঁ স্বস্তি নঃ কালী মেধামৃতময়ী
হৌঁ স্বস্তি নঃ প্রত্যঙ্গিরা দেবতা দধাতু।
তারপর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ
সূর্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা।
পবনো
দিকপতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ।
ব্রাহ্ম্যং
শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।
ওঁ তৎসৎ
অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।
৫। সঙ্কল্প- তাম্রপাত্রে ( কুশীতে ) মূল ও অগ্রভাগের সহিত
তিনটি কুশ, তিল, তুলসী, হরিতকী, গন্ধ,
পুষ্প, আতপ চাল ও জল নিয়ে বীরাসনে (দক্ষিণ জানু পেতে ) পূর্বমুখী ( বা উত্তরমুখী )
বসবে। বাম করতলে কুশী স্থাপন করে দক্ষিণ
করতল দ্বারা আচ্ছাদনপূর্বক পাঠ করবে ।
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য
মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ
শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ (যজমানের গোত্র ও
নাম)] সরস্বতী প্রীতিকামনায়া গণপত্যাদি নানাদেবতাপূজাপূর্বক-লক্ষ্মী-মস্যাধার-লেখনী-সহিত
সরস্বতী পূজাকর্ম অহং করিষ্যে
( পরার্থে- করিষ্যামি
)।
পরে হাতের পাত্রটি ঈশান কোণে উপুড় করে রেখে তার
উপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে আতপ চাল ছড়াবে এবং ঘণ্টা
বাজাবে-
যজুর্বেদীয়
সঙ্কল্পসূক্ত- ওঁ যজ্জাগ্রতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি।
দূরঙ্গমং
জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।
সামবেদীয় সঙ্কল্পসূক্ত- ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদাঃ পূর্ণাং
বিবষ্ট্বাসিচম্।
উদ্বা সিঞ্চধব মূপ বা পৃণধ্ব-মাদিদ্বো দেব ওহতে।
ওঁ সঙ্কল্পিতার্থস্য সিদ্ধিরস্তু।
অতঃপর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ
সঙ্কল্পিতার্থাঃ সিধ্যন্তু সিদ্ধাঃ সন্তু মনোরথাঃ।
ভক্তিজ্ঞানোদয়ায়
অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।
হরিঃ ওঁ তৎসৎ।
৬। ঘটস্থাপন- অতঃপর নিম্নোক্ত রীতিতে সংক্ষেপে ঘটস্থাপন করা
যেতে পারে।
চিত্র :
সর্বতোভদ্রমণ্ডল
চিত্র : ভূপুরমধ্যগত অষ্টদল পদ্ম
ভূমিতে
সর্বতোভদ্রমণ্ডল
(হলুদের গুঁড়ি, আতপ চালের গুঁড়ি, লাল ফুলের গুঁড়ি, তুষ পুড়িয়ে গুঁড়ি, বেল পাতার
গুঁড়ি- এই পাঁচটি গুঁড়ি দিয়ে সর্বতোভদ্রমণ্ডল আঁকতে হয়।) অথবা ভূপুরমধ্যগত অষ্টদল
পদ্ম অথবা অষ্টদল পদ্ম (আতপ
চালের গুঁড়ি, আবির) এঁকে অঞ্জলি
পরিমান শুক্ল্যধান্যের ওপর ঘট বসাবে। ঘট মধ্যে জল, সোনা ও ঘটোপরি আম্রপল্লব বসিয়ে
তদুপরি একটি সশীষ ডাব অথবা কলা বা হরীতকী স্থাপন করবে। সম্ভব হলে ফলটি বস্ত্রখণ্ডে
আচ্ছাদিত করে তদুপরি একটি অর্ঘ্য (বিল্বপত্র, গন্ধপুষ্প, দুর্বা ও আতপ চাল) সাজিয়ে
দিবে। ঘটগাত্রে সিন্দুর দিয়ে একটি স্বস্তিক বা পুত্তলিকা অঙ্কন করবে। অনন্তর
করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম।
ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবি গণৈঃ সহ।
ঘটস্পর্শ করে পাঠ করবে- ওঁ স্থাং স্থীং স্থিরো ভব।
বৈদিক গায়ত্রী- ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ
প্রচোদয়াৎ ওঁ।। -এই মন্ত্রও ঘট স্পর্শ করে তিনবার পাঠ করবে।
(ক) বিশেষ পূজায় ঘটস্থাপন- পূর্বের বর্ণনা অনুযায়ী সুদৃশ্য ও অক্ষত ঘট
বসাতে হবে। পরে পাঠ করতে হবে-
যজুর্বেদীয়-ঘটস্থাপনের জন্য-
ভূমিতে হাত দিয়ে পাঠ করবে, --ওঁ ভূরসি
ভূমিরস্যদিতিরসি, বিশ্বধায়া বিশ্বস্য ভূবনস্য ধর্ত্রী। পৃথিবীং যচ্ছ, পৃথিবীং
দৃংহ, পৃথিবীং মা হিহঁসীঃ ।
ধান্যে হাত দিয়ে পাঠ করবে, --ওঁ ধান্যমসি ধিনুহি
দেবান্ ধিনুহি যজ্ঞং। ধিনুহি যজ্ঞপতিং ধিনুহি মাং যজ্ঞন্যম্।
ঘট ধরে পাঠ করবে, --ওঁ আ জিঘ্র কলশং মহ্যা ত্বা
বিশ্বন্ত্বিন্দবঃ। পুনরূর্জ্জা নিবর্ত্তস্ব, সা নঃ সহস্রং ধুক্ষ্বোরুধারা পয়স্বতী,
পুনর্মা বিশতাদ্রয়িঃ।
জলে হাত দিয়ে পাঠ করবে, --ওঁ বরুণস্যোত্তম্ভনমসি,
বরুণস্য স্কম্ভসর্জ্জনী স্থো বরুণস্য ঋতসদন্যসি বরুণস্য ঋতসদনমপি। বরুণস্য
ঋতসদনমাসীদ।
পল্লব ধরে পাঠ করবে, --ওঁ ধন্বনা গা ধন্বনাজিং
জয়েম, ধন্বনা তীব্রাঃ সমদো জয়েম। ধনুঃ শত্রোরপকামং কৃণোতি ধন্বনা সর্ব্বাঃ প্রদিশো
জয়েম।
ফল ধরে পাঠ করবে, --ওঁ যাঃ ফলিনীর্যা অফলা
অপুষ্পা যাশ্চ পুষ্পিণীঃ। বৃহস্পতিপ্রসূতান্ত্বা নো মুঞ্চন্ত্বংহসঃ।
সিন্দুর স্পর্শ করে পাঠ করবে, ---ওঁ সিন্ধোরিব
প্রাধ্বনে শূঘনাসো বাতপ্রমিয়ঃ পতয়ন্তি যহ্বাঃ। ঘৃতস্য ধারা অরুষো ন বাজী, কাষ্ঠা
ভিন্দন্নর্ম্মিভিঃ পিন্বমানঃ।
দূর্ব্বা ধরে পাঠ করবে, --- ওঁ কাণ্ডাৎ কাণ্ডাৎ
প্ররোহন্তি পরুষঃ পরুষঃ পরি। এবা নো দূর্ব্বে প্রতনু সহস্রেণ শতেন চ।
পুষ্প ধরে পাঠ করবে, --ওঁ শ্রীশ্চ তে লক্ষ্মীশ্চ
পত্ন্যা অহোরাত্রে পার্শ্বে নক্ষত্রাণি রূপমশ্বিনৌ ব্যাত্তম্। ইঞ্চন্নিষণামুম্ম
ইষাণ, সর্ব্ব লোকং ম ইষাণ।
গন্ধ স্পর্শ করে পাঠ করবে, --- ওঁ গন্ধদ্বারাং
দুরাধর্ষাং নিত্যপুষ্টাং করীষিণীম্। ঈশ্বরীং সর্ব্বভূতানাং ত্বামিহোপহ্বয়ে
শ্রিয়াম্।
বস্ত্র ধরে পাঠ করবে, ---ওঁ যুবা সুবাসাঃ পরিবীত
আগাৎ স উ শ্রেয়ান্ ভবতি জায়মানঃ। তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি সাধ্যো মনসা দেবয়ন্তঃ।
স্থিরীকরণ--- তারপর
হাত জোড় করে পাঠ করবে,
ওঁ সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম।
ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবি গণৈঃ সহ।
[দেব পূজায়,--তিষ্ঠ দেব গণৈঃ সহ।]
ঘটস্পর্শ করে
পাঠ করবে- ওঁ স্থাং স্থীং স্থিরো ভব
বিড্বঙ্গ আশুর্ভব বাজ্যর্ব্বন্ পৃথুর্ভব সুষদস্ত্বমগ্নেঃ পুরীষবাহণঃ। অতঃপর
গায়ত্রী পাঠ করবে।
কোন কোন কাজে ঘটের চারদিকে কাণ্ড চতুষ্টয়
আরোপণের (তীর পোঁতার) বিধি আছে এবং তাতে লাল রঙের সূতা বেষ্টন করা হয়।
কাণ্ড আরোপণের মন্ত্র--- ওঁ কাণ্ডাৎ কাণ্ডাৎ প্ররোহন্তি পরুষঃ পরুষঃ পরি।
এবা নো দূর্ব্বে প্রতনু সহস্রেণ শতেন চ।
সামবেদীয়-ঘটস্থাপনের
জন্য-
ভূমিতে হাত দিয়ে পাঠ করবে, --ওঁ ভূমিরন্তরীক্ষং
দ্যৌর্দ্বা ভূতায়াঃ।
ধান্যে হাত দিয়ে পাঠ করবে, --ওঁ ধানাবন্তং
করম্ভিণমপূপবন্তমূকথিনম্। ইন্দ্র প্রাতর্জুষস্ব নঃ।
ঘট ধরে পাঠ করবে, --ওঁ আবিশন্ কলশং সুতো বিশ্বা
অর্ষন্নভি শ্রিয়ঃ। ইন্দুরিন্দ্রায় ধীয়তে।
জলে হাত দিয়ে পাঠ করবে, --ওঁ আ নো মিত্রাবরুণা
ঘৃতৈর্গব্যূতি মুক্ষতং। মধ্বা রজাংসি শুক্রত।
পল্লব ধরে পাঠ করবে, --ওঁ অয়মূর্জ্জাবতো বৃক্ষ ।
ঊর্জ্জীবফলিনী ভব। পর্ণং বনস্পতে নুত্ত্বা নুত্ত্বা চ সূয়তাং রয়িঃ।
ফল ধরে পাঠ করবে, --ওঁ ইন্দ্রং নরো নেমধিতা
হবন্তে যৎ পার্য্যা যুনজতে ধিয়স্তাঃ। শূরো নৃযাতা শ্রবসশ্চ কাম আ গোমতি ব্রজে ভজা
ত্বং নঃ।
পুষ্প ধরে পাঠ করবে, --ওঁ পবমান ব্যশ্নুহি
রশ্মিভির্বাজসাতমঃ। দধৎ স্তোত্রে সুবীর্যম্।
সিন্দুর স্পর্শ করে পাঠ করবে, --ওঁ
সিন্ধোরুচ্ছ্বাসে পতয়ন্তমুক্ষণং হিরণ্যপাবাঃ পশুমপ্সু গৃভ্ণতে।
স্থিরীকরণ (ঘটে হাত দিয়ে পাঠ করবে),--ওঁ ত্বাবতঃ
পুরূবসো বয়মিন্দ্র প্রণেতঃ। স্মসি স্থাতর্হরীণাং।
হাত জোড় করে
পাঠ করবে, -- ওঁ
সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম।
ইমং
ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবি গণৈঃ সহ।
[দেব পূজায়,--তিষ্ঠ দেব গণৈঃ সহ।]
অতঃপর ঘটের উপর গায়ত্রী পাঠ করবে।
তান্ত্রিক ঘটস্থাপন--- ঘট শুদ্ধির জন্য “ক্লীং” এই
মন্ত্রে জল দ্বারা ঘট প্রোক্ষণ করবে। “ঐং” মন্ত্রে ঘট শোধন করবে। “হ্রীং” মন্ত্রে
ঘট স্থাপন করে “হ্রীং” মন্ত্রে ঘট জলপূর্ণ করবে। তারপর নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ করে
তীর্থন্যাস করবে। যথা-
ওঁ গঙ্গাদ্যাঃ
সরিতঃ সর্ব্বাঃ সরাংসি জলদা নদাঃ। হ্রদাঃ প্রস্রবণাঃ পুণ্যাঃ স্বর্গপাতালভূগতাঃ।
সর্ব্বতীর্থানি পুণ্যানি ঘটে কুর্ব্বন্তু সন্নিধিম্।
এরপর “শ্রীং” মন্ত্রে পল্লব দিবে। “হুং”
মন্ত্রে ফলদান করবে। “স্ত্রীং” মন্ত্রে স্থিরীকরণ করে “রং” মন্ত্রে মন্ত্রে
সিন্দুর দিয়ে “যং” মন্ত্রে পুষ্প দিবে। তারপর দেবতার মূলমন্ত্রে দূর্বা দিয়ে “ওঁ”
মন্ত্রে অভ্যুক্ষণ করে (জলের ছিটা দিয়ে) “হূং
ফট্ স্বাহা” এই মন্ত্রে কুশ দ্বারা তাড়ন করবে।
৭। সামান্যার্ঘ্যস্থাপন- নিজের সামনে একটু বামদিকের ভূমিতে অধোমুখ
ত্রিকোণ (পুং দেবতা হলে উর্ধমুখ), বৃত্ত ও চতুর্ভুজ মণ্ডল এঁকে তদুপরি পূজা করবে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
আধারশক্তাদিভ্যো নমঃ।
পরে ‘ফট্’
মন্ত্রে কোশা ধুয়ে মণ্ডলোপরি স্থাপন করে ‘নমঃ’
মন্ত্রে জলপূর্ণ করবে এবং ‘ওঁ’
মন্ত্রে কোশার অগ্রভাগে একটি অর্ঘ্য (বিল্বপত্র, গন্ধপুষ্প, দুর্বা ও আতপ চাল)
সাজিয়ে দিবে। ‘ওঁ’ মন্ত্রে
দূর্বা, অক্ষত বিল্বপত্র, চন্দন, পুষ্প, তুলসীপত্র, আতপ চাল কোশার জলে নিক্ষেপ
করবে। পরে অঙ্কুশ মুদ্রায় জল
স্পর্শ করে নিম্নোক্ত মন্ত্রে সূর্যমণ্ডল হতে তীর্থ আবাহন করবে-
ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু।।
অতঃপর ‘ওঁ
এতে গন্ধপুষ্পে তীর্থেভ্যো নমঃ’ মন্ত্রে জলে তীর্থপূজা করে ‘হূঁ’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা ও ‘বং’
মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক
মৎস্যমুদ্রায় জল আচ্ছাদন করে ১০ বার ‘ওঁ’ মন্ত্র জপ করবে।
এরপর সামান্যার্ঘ্যের জল নিজের মাথায় ও দ্বারদেশে
ছিটিয়ে দিয়ে দ্বারদেবতার পূজা করবে।
৮। দ্বারদেবতাপূজা- ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে দ্বারদেবতাভ্যো
নমঃ (নৈঋতকোণে); তাম্রকুণ্ডে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রহ্মণে নমঃ;
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বাস্তুপুরুষায়
নমঃ।
(খ) বিশেষ পূজায় ‘দ্বারদেবতাভ্যো’ –এর জায়গায় প্রত্যেক দেবতার পৃথক পূজা হবে। যথা-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বিঘ্নায় নমঃ,
ওঁ শ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে মহালক্ষ্ম্যৈ নমঃ, ওঁ ঐং এতে গন্ধপুষ্পে সরস্বত্যৈ
নমঃ, ওঁ এতে
গন্ধপুষ্পে বিঘ্নেশায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ক্ষেত্রপালায় নমঃ,
ওঁ গাং এতে গন্ধপুষ্পে গঙ্গায়ৈ নমঃ, ওঁ যাং এতে গন্ধপুষ্পে যমুনায়ৈ নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অস্ত্রায়
নমঃ।
৯। ভূতাপসারণ- ‘ওঁ অস্ত্রায় ফট্’ মন্ত্রে আতপ চালে সাতবার জপ করে তা
ঘন্টাবাদন করতে করতে নিম্নোক্ত মন্ত্রে নারাচ মুদ্রায় (অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী যোগে) চারদিকে ছড়াবে-
ওঁ সর্ববিঘ্নানুৎসারয় হূঁ ফট্ স্বাহা।
ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতা যে ভূতা ভুবি সংস্থিতাঃ।
যে ভূতা বিঘ্নকর্তারস্তে নশ্যন্তু
শিবাজ্ঞয়া।।
(গ) বিশেষ পূজায় ভূতাপসারণের পূর্বে মাসভক্তবলি দিতে
হয়। ভূমিতে
নিজ বামে রক্তচন্দন কিংবা গোময় দ্বারা একটি ত্রিকোণ মণ্ডল করে তার ওপর ওঁ
এতে গন্ধপুষ্পে ভূতাদিভ্যো
নমঃ মন্ত্রে পূজা করবে এবং একটি
পাত্রে মাষকলাই, দই,
হরিদ্রাচূর্ণ ও আলতা মিশিয়ে মণ্ডলের উপর রেখে—ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মাষভক্তবলয়ে নমঃ মন্ত্রে পূজা করবে। তারপর ওঁ এষ মাষভক্তবলিঃ ভূতাদিভ্যো নমঃ মন্ত্রে নিবেদন করবে ও করজোড়ে পাঠ করবে—
ওঁ ভূতাঃ প্রেতাঃ পিশাচাশ্চ যে বসন্ত্যত্র ভূতলে।
তে গৃহ্নন্তু ময়া দত্তং বলিমেনং প্রাসাধিতম্ ৼ
ওঁ পূজিতা গন্ধপুষ্পাদ্যৈর্বলিভিস্তর্পিতাস্তথা।
দেশাদস্মাদ্বিনিঃসৃত্য পূজাং পশ্যন্তু মৎকৃতাম্ ৼ
পরে একটি পাত্রে খই, দূর্বা,
কুশ, চন্দন, শ্বেতসর্ষপ,
তণ্ডুল (চাল) ইত্যাদি
একত্র করে ‘ওঁ অস্ত্রায় ফট্’ এই মন্ত্র তার ওপর সাতবার জপ করে নিম্নোক্ত
মন্ত্রে নারাচ মুদ্রায় (অঙ্গুষ্ঠ
ও তর্জনী যোগে) চারদিকে ছড়াবে ও ঘণ্টা বাদন করবে।-
ওঁ সর্ববিঘ্নানুৎসারয় হূঁ ফট্ স্বাহা।
ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতা যে ভূতা ভুবি সংস্থিতাঃ।
যে ভূতা বিঘ্নকর্তারস্তে নশ্যন্তু
শিবাজ্ঞয়া।।
১০। ভূমিশুদ্ধি- ‘ওঁ রক্ষ রক্ষ হূঁ ফট্ স্বাহা’-মন্ত্রে মুষ্টি-নিঃসৃত জল ভূমিতে নিক্ষেপ করবে।
১১। আসনশুদ্ধি- স্ববামে আসনের নিম্নবর্তী ভূমিতে ত্রিকোণ মণ্ডল এঁকে
‘ওঁ হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে আধারশক্ত্যাদিভ্যো নমঃ’ –মন্ত্রে মণ্ডল পূজা করবে। অতঃপর আসন স্পর্শ করে পাঠ করবে- ‘ওঁ অস্য আসনোপবেশনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠ
ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কূর্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ’। পরে কৃতাঞ্জলিপূর্বক পাঠ-
ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।
ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্ ।।
অতঃপর আসনের উপর ত্রিকোণ মণ্ডল এঁকে ‘হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে আধারশক্তয়ে
কমলাসনায় নমঃ’- মন্ত্রে ঐ মণ্ডল গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে।
১২। গুরুপ্রণাম- হাত জোড় করে প্রণাম করবে। বামকর্ণোর্ধ্বে- ঐঁ গুরুভ্যো নমঃ; তদূর্ধ্বে-
ঐঁ পরমগুরুভ্যো নমঃ; তদূর্ধ্বে-
ঐঁ পরাপরগুরুভ্যো নমঃ; তদূর্ধ্বে-
ঐঁ পরমেষ্ঠিগুরুভ্যো নমঃ; দক্ষিণকর্ণোর্ধ্বে-
ওঁ গণেশায় নমঃ; মধ্যে
অর্থাৎ ললাটে বা হৃদয়ে- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ।
১৩। করশুদ্ধি- ‘হেঁসৌঃ’ মন্ত্রে একটি সচন্দন রক্তবর্ণ পুষ্প নিয়ে
‘আং হূং ফট্ স্বাহা’
মন্ত্রে উভয় করতল দিয়ে মর্দন করে বাম হাতের নারাচ মুদ্রায়
সেই ফুলটিকে মাথার চারদিকে ‘ক্লীং’ মন্ত্রে ঘুরিয়ে ‘ঐং’ মন্ত্রে
ঘ্রাণ নিয়ে ‘ফট্’ মন্ত্রে ঈশানকোণে
নিক্ষেপ করবে।
১৪। পুষ্পশুদ্ধি- ‘ওঁ শতাভিষেক হূঁ ফট্ স্বাহা’ মন্ত্রে পুষ্পে জলের ছিটা দিয়ে ‘ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে পুষ্পচয়াবকীর্ণে
চ হূঁ ফট্ স্বাহা’ মন্ত্রে পুষ্প স্পর্শ করে শোধন করবে।
১৫। ত্রিবিধ বিঘ্নাপসারণ- ‘ওঁ ঐঁ’ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঊর্ধ্বে দৃষ্টিপাতকরতঃ
দিব্যবিঘ্নাপসারণ করবে। তারপর তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম করতলে ঊর্ধ্ব ঊর্ধ্ব
ক্রমে তালত্রয় দিয়ে দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দ্বারা পূর্বদিক থেকে আরম্ভ
করে ঈশানকোণ পর্যন্ত এবং অধঃ ও ঊর্ধ্ব- এই দশ দিকে ‘ফট্’ মন্ত্রে তুড়ি দিয়ে দিগবন্ধন করবে। তারপর ‘ফট্’ মন্ত্রে বামপায়ের গোড়ালি দ্বারা
ভূমিতে তিনবার আঘাত করে ভূমিবিঘ্ন অপসারণ করে ‘অস্ত্রায় ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বদিকে জলের ছিটা দিয়ে অন্তরিক্ষবিঘ্ন
দূর করবে।
১৬। দেবতা ও
পূজাদ্রব্যশুদ্ধি- ‘ওঁ ঐং ফট্’ মন্ত্রে
দেবতা ও পূজাদ্রব্য সামান্যার্ঘ্যের জলে তিনবার প্রোক্ষণ (জলের ছিটা) করবে ও ধেনুমুদ্রা দেখাবে আর ভাবনা করবে যে
সকলই চিন্ময়, ঈশ্বরময়।
১৭। মন্ত্রশুদ্ধি- ‘অং
হ্রীং অং; কং হ্রীং কং; চং হ্রীং চং; টং হ্রীং টং; তং হ্রীং তং; পং হ্রীং পং; যং
হ্রীং যং; শং হ্রীং শং’ –এই মন্ত্র একবার জপ করবে।
১৮। বহ্নিপ্রাকারচিন্তা- ‘রং’ মন্ত্রে নিজের চারদিকে বৃত্তাকার জলধারা দিয়ে আগুনের
প্রাচীর চিন্তা করবে।
১৯। দেহমার্জন ও
আত্মরক্ষা- ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে করতলদ্বয় দ্বারা নিজদেহ মার্জনা করে হৃদয়ে হাত দিয়ে পাঠ করবে-
ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষিণি স্বাহা। ওঁ আং
হূঁ ফট্ স্বাহা।
২০। প্রাণায়াম- ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমা মুষ্ঠিবদ্ধ করে অঙ্গুষ্ঠ
দিয়ে ডান নাসা টিপে বন্ধ করে বাম নাসাপুটে বায়ু আকর্ষণ করতে করতে ৪ বার ‘ওঁ’ (অথবা ‘ঐং’) জপ করবে। অতঃপর অনামিকা ও কনিষ্ঠা দ্বারা বাম নাসাপুট টিপে
বায়ু রুদ্ধ রেখে ‘ওঁ’
(অথবা ‘ঐং’মন্ত্র ১৬ বার জপ করবে। অনন্তর ডান নাসা থেকে অঙ্গুষ্ঠ সরিয়ে নিয়ে ঐ নাসাপুট
দ্বারাই ধীরে ধীরে বায়ু রেচন করবে। রেচনকালে
‘ওঁ’ (অথবা ‘ঐং’মন্ত্র ৮ বার জপ করবে। এইভাবে
পূরক, কুম্ভক ও রেচক করলে
একত্রে একটি প্রাণায়াম হয়। এই পদ্ধতিতে অবিচ্ছেদে তিনবার প্রাণায়াম করবে। সমর্থ হলে ১৬/৬৪/৩২ সংখ্যায়ও প্রাণায়াম করা
যেতে পারে।
২১। ভূতশুদ্ধি
(সংক্ষিপ্ত)- স্বক্রোড়ে বাম হাতের উপর
ডান হাত চিৎভাবে স্থাপন করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করবে-
ওঁ ভূতশৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ
সুষুম্নাপথেন
জীবশিবং পরমশিবপদে
যোজয়ামি স্বাহা ।।১।।
ওঁ যং লিঙ্গশরীরং শোষয়
শোষয় স্বাহা ।।২।।
ওঁ রং সংঙ্কোচশরীরং দহ
দহ স্বাহা ।।৩।।
ওঁ পরমশিব
সুষুম্নাপথেন
মূলশৃঙ্গাটমুল্লসোল্লস
জ্বল জ্বল প্রজ্বল প্রজ্বল
সোহহং হংসঃ স্বাহা
।।৪।।
এখানে, পূজক যে দেবতার পূজা করতে অগ্রসর, তিনি
স্বয়ং সেই দেবতায় রূপান্তরিত হয়েছেন, এরূপ দৃঢ় ভাবনা করতে হবে।
(ঘ) শুধু বিশেষ পূজায় নয়, সমর্থ হলে বিস্তারিত ভূতশুদ্ধি
করা বিধেয় । নিজেকে ব্রহ্মের সঙ্গে এক ভাবাই ভূতশুদ্ধির লক্ষ্য। এই তত্ত্বের ভাবনা এইরূপ—বামহাত
চিৎ করে কোলে রেখে তার ওপর ডানহাত চিৎ করে রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে বসবে। হৃদয়স্থিত প্রদীপ শিখার মত জীবাত্মাকে মূলাধারে এনে
কুলকুণ্ডলিনীতে লীন করবে। পরে ‘হূং’ এই বীজমন্ত্র
মনে মনে আবৃত্তি করে প্রসুপ্তা কুলকুণ্ডলিনীকে জাগ্রতা করবে। ‘সোহহং’ এই মন্ত্র উচ্চারণ করে মূলাধার সংকোচন দ্বারা
সংকোচন দ্বারা জীবাত্মাসহ কুলকুণ্ডলিনীকে সুষুম্নামার্গে উত্থাপিত করবে এবং ক্রমে মূলাধার,
স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞা চক্র যথাক্রমে ৪,
৬, ১০, ১২,
১৬ ও ২ দল পদ্ম ভেদ করে শিরে অবস্থিত অধোমুখ সহস্রদল-কমল-কর্ণিকার মধ্যে পরমাত্মাকে সংযুক্ত করবে এবং
তাতেই ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ, ব্যোম—এই
পঞ্চভূত; শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস,
গন্ধ—এই পঞ্চবিষয়; চক্ষু, কর্ণ,
নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক—এই পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়; বাক্, পাণি,
পাদ, পায়ু, উপস্থ—এই
পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়; প্রকৃতি,
মন, বুদ্ধি ও অহংকার এই ২৪ তত্ত্বকে বিলীন
চিন্তা করবে। সাধক
নিজেকে ব্রহ্মস্বরূপ ভাবনা করবে। পরে
বাম নাসাপুটে ‘যং’
এই ধূম্রবর্ণ বায়ু বীজকে ভাবনা করে প্রাণায়াম বিধি অনুসারে এই বীজ
১৬ বার জপ করে বায়ু দিয়ে দেহ পূর্ণ করবে এবং নাসাপুট রোধ করে ৬৪ বার জপ করবে ও কুম্ভক
করে বামকুক্ষিস্থিত কৃষ্ণবর্ণ পিঙ্গলচক্ষু পাপ পুরুষের ধ্যান করবে। ধ্যান মন্ত্র---
বামপার্শ্বস্থিতং পাপপুরুষং কজ্জ্বলপ্রভাম্ ।
ব্রহ্মহত্যাশিরস্কঞ্চ স্বর্ণস্তেয়ভুজদ্বয়ম্ ৼ
সুরাপানহৃদাযুক্তং গুরুতল্পকটিদ্বয়ম্।
তৎসংসর্গিপদদ্বন্দ্বমঙ্গপ্রত্যঙ্গপাতকম্ ৼ
উপপাতকরোমাণং রক্তশ্মশ্রুবিলোচনম্ ।
খড়্গচর্মধরং ক্রুদ্ধমেবং কুক্ষৌ বিচিন্তয়েৎ ৼ
সূক্ষ্মাকারে যত পাপ
মানুষের অন্তরে লুকিয়ে থাকে তারই পুরুষরূপ কল্পনা করে কুম্ভক করতে করতে ঐ পাপ
পুরুষ লুকিয়ে গেল এরূপ চিন্তা করবে এবং ৩২ বার ‘যং’ বীজ জপ করতে করতে ডান নাক দিয়ে
বায়ু রেচন করবে।
ডান নাকে ‘রং’ এই রক্তবর্ণ
বহ্নিবীজ চিন্তা ও ১৬ বার জপ করতে করতে শ্বাস নিবে এবং মূলাধারস্থিত বহ্নিকে
প্রজ্জ্বলিত করে ঐ পাপপুরুষকে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে এরূপ ভাবনা ৬৪ সংখ্যক ‘রং’ মন্ত্র
জপ করে কুম্ভক করার সময় করবে। ৩২ বার ‘রং’ মন্ত্র জপ করে বাম নাকে শ্বাস রেচন করার
কালে ভস্মীভূত পাপপুরুষের দেহভস্ম বেরিয়ে যাচ্ছে বলে ভাবনা করবে।
পরে বাম নাকে ‘ঠং’ এই
শুক্লবর্ণ চন্দ্রবীজকে ধ্যান ও ১৬ বার জপ করতে করতে শ্বাস আকর্ষণ করবে ও চন্দ্রকে
ললাটে নীত বলে ভাববে।
তারপরে ‘বং’ এই
বরুণবীজ ৬৪ বার জপ করতে করতে কুম্ভক করার কালে ভাববে---চন্দ্র থেকে বিগলিত ৫০টি
মাতৃকাবর্ণরূপ সুধা দিয়ে তোমার সমগ্র দেহ নতুনভাবে রচিত হল; এটি এখন দিব্যদেহ। এখন
‘লং’ এই পৃথ্বীবীজ ৩২ বার জপ করতে করতে বায়ু রেচন করবে ও ভাববে নিজ শরীর সুদৃঢ়।
তারপরে “হংসঃ” এই মন্ত্র উচ্চারণ করে পরমাত্মাতে বিলীন কুলকুণ্ডলিনীসহ জীবাত্মা ও
২৪ তত্ত্ব সুষুম্নামার্গ দিয়ে স্ব স্ব স্থানে আবির্ভূত হলেন---এরূপ ভাবনা করবে।
অর্থাৎ সাধক যে দেবতার পূজা করতে অগ্রসর হয়েছেন তিনি স্বয়ং সেই দেবতায় রূপান্তরিত
হয়েছেন, এরূপ দৃঢ় ভাবনা করতে হবে।
২২। ব্যাপকন্যাস- ‘আং হূঁ ফট্ স্বাহা’ মন্ত্রে মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল এবং পায়ের
আঙ্গুল থেকে মাথা পর্যন্ত উভয় হাত দ্বারা তিনবার
মার্জনা করবে। এতদ্বারা নিজ শরীর, বাক্য ও মন শুদ্ধ হল বলে চিন্তা করবে।
২৩। জীবন্যাস- নতুন রচিত দিব্যদেহে ইষ্টদেবতার (যে দেবতার পূজা
করছে) প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘সোহহং’
(তিনিই আমি) ভাবনা করে লেলিহান মুদ্রায়
হৃদয় স্পর্শ করে পাঠ করবে ও আপনাকে দেবতাময় ভাবনা করবে-
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ প্রাণা ইহ প্রাণাঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ জীব ইহ স্থিতঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ সর্বেন্দ্রিয়াণি।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ বাঙ্
মনশ্চক্ষুস্ত্বক-শ্রোত্র-ঘ্রাণপ্রাণা ইহাগত্য সুখং চিরং তিষ্ঠন্তু স্বাহা।
২৪। মাতৃকান্যাস- কৃতাঞ্জলিপুটে পাঠ- ওঁ অস্য মাতৃকামন্ত্রস্য ব্রহ্ম ঋষির্গায়ত্রীচ্ছন্দো দেবী মাতৃকা সরস্বতী
দেবতা, হলো বীজানি স্বরাঃ শক্তয়ঃ অব্যক্তং কীলকং সর্বাভীষ্টসিদ্ধয়ে লিপিন্যাসে
বিনিয়োগঃ।
তত্ত্বমুদ্রায় স্পর্শ করে বলবে : মস্তকে- ওঁ ব্রহ্মণে ঋষয়ে নমঃ; মুখে- ওঁ গায়ত্রীচ্ছন্দসে নমঃ; হৃদয়ে- ওঁ মাতৃকাসরস্বত্যৈ দেবতায়ৈ নমঃ; মূলাধারে- ওঁ হলভ্যো বীজেভ্যো নমঃ; পাদদ্বয়ে- ওঁ স্বরেভ্যঃ শক্তিভ্যো নমঃ; সর্বাঙ্গে- ওঁ অব্যক্তকীলকায় নমঃ।
২৫। করন্যাস- উভয় হাতের তর্জনী সেই সেই হাতের অঙ্গুষ্ঠ-পৃষ্ঠে দিয়ে
বলবে- অং কং খং গং ঘং ঙং আং
অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ। উভয় হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের তর্জনীর পৃষ্ঠে দিয়ে
পাঠ করবে- ইং চং ছং জং ঝং ঞং ঈং তর্জনীভ্যাং স্বাহা।
উভয় হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের মধ্যমার পৃষ্ঠে দিয়ে পাঠ করবে- উং টং ঠং ডং ঢং ণং ঊং মধ্যমাভ্যাং বষট্ । উভয়
হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের অনামিকার পৃষ্ঠে রেখে পাঠ করবে- এং তং থং দং
ধং নং ঐং অনামিকাভ্যাং হূঁ । উভয় হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের কনিষ্ঠার পৃষ্ঠে দিয়ে
পাঠ করবে- ওং পং ফং বং ভং মং ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্।
অতঃপর অং যং রং লং বং শং ষং সং হং লং
ক্ষং অঃ করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্- এই মন্ত্র পাঠ করে ডান হাতের যুক্ত
তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হাতের তল ও পৃষ্ঠ স্পর্শ করে বাম করতলে তালি দিবে।
২৬। অঙ্গন্যাস- ডান হাতের তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার অগ্রভাগ
দ্বারা বক্ষঃস্থল স্পর্শ করে পাঠ করবে- অং
কং খং গং ঘং ঙং আং হৃদয়ায় নমঃ। ইং চং ছং জং ঝং ঞং ঈং
শিরসে স্বাহা- মন্ত্রে তর্জনী ও
মধ্যমার অগ্রভাগ দ্বারা মস্তক; উং টং ঠং
ডং ঢং ণং ঊং শিখায়ৈ বষট্- মন্ত্রে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের দ্বারা শিখা; এং তং থং দং ধং নং ঐং কবচায় হূঁ-
মন্ত্রে ডান হাতের পঞ্চাঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা বাম বাহুমূল এবং বাম হাতের পঞ্চাঙ্গুলির
অগ্রভাগ দ্বারা ডান বাহুমূল; ওং পং ফং বং
ভং মং ঔং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্- মন্ত্রে তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার অগ্রভাগ
দ্বারা যথাক্রমে দক্ষিণ নেত্র, ঊর্ধ্ব নেত্র (নাসামূল) ও বাম নেত্র স্পর্শ করবে। অং যং রং লং বং শং ষং সং হং লং ক্ষং অঃ
করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্- মন্ত্রে ডান হাতের যুক্ত তর্জনী ও মধ্যমা
দ্বারা বাম হাতের তল ও পৃষ্ঠ স্পর্শ করে বাম করতলে তালি দিবে।
(ঙ) বিশেষ পূজায় এই ন্যাসগুলি করতে হয় ।
অন্তর্মাতৃকান্যাস--- ব্রহ্মরন্ধ্রে পরমাত্মার সহিত কুণ্ডলিনীর সংযোগবশতঃ
অমৃতময় যে মাতৃকাবর্ণসমুদয় ক্ষরিত হচ্ছে,
সেগুলোকে ষট্ পদ্মের দলে দলে ক্রমশঃ চিন্তা করে তত্ত্বমুদ্রায় বা
একটি ফুল দিয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক ন্যাস করতে হবে। যথা—
কণ্ঠে (বিশুদ্ধচক্রে, ষোড়শদলে)— অং নমঃ আং নমঃ ইং নমঃ ঈং নমঃ উং নমঃ ঊং নমঃ ঋং নমঃ র্ঋং নমঃ ৯ং (লিং) নমঃ ৯৯ং (লীং) নমঃ এং নমঃ ঐং নমঃ ওং নমঃ ঔং নমঃ অং নমঃ অঃ নমঃ ।
হৃদয়ে ( অনাহতচক্রে, দ্বাদশদলে)— কং নমঃ খং নমঃ গং নমঃ ঘং নমঃ ঙং নমঃ চং নমঃ ছং নমঃ জং নমঃ ঝং নমঃ ঞং নমঃ টং নমঃ ঠং
নমঃ ।
নাভিতে (মণিপুরচক্রে, দশদলে)— ডং নমঃ ঢং নমঃ ণং নমঃ তং নমঃ থং নমঃ দং নমঃ ধং নমঃ নং নমঃ পং নমঃ ফং নমঃ ।
লিঙ্গমূলে (স্বাধিষ্ঠানচক্রে, ষড়দলে)— বং নমঃ
ভং নমঃ মং নমঃ যং নমঃ রং নমঃ লং নমঃ ।
গুহ্যদেশে (মূলাধারচক্রে, চতুর্দলে)— বং নমঃ শং নমঃ ষং নমঃ সং নমঃ ।
ভ্রুমধ্যে (আজ্ঞাচক্রে, দ্বিদলে)— হং নমঃ ক্ষং নমঃ ।
বাহ্যমাতৃকান্যাস—হাতে কূর্মমুদ্রায় ফুল নিয়ে ধ্যান করবে—
ওঁ পঞ্চাশল্লিপিভির্বিভক্তমুখদোঃপন্মধ্যবক্ষঃস্থলাং
ভাস্বন্মৌলিনিবদ্ধচন্দ্রশকলামাপীনতুঙ্গস্তনীম্ ।
মুদ্রামক্ষগুণং সুধাঢ্যকলসং বিদ্যাঞ্চ হস্তাম্বুজৈ-
র্বিভ্রাণাং বিশদপ্রভাং ত্রিনয়নাং বাগ্দেবতামাশ্রয়ে
ৼ
পরে নিম্নলিখিত মুদ্রায় শরীরের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে
যথাযথ মন্ত্র উচ্চারণ করে এক একটি মাতৃকাবর্ণের (স্পর্শ করে) ন্যাস করবে। মুদ্রা করতে না পারলে তত্ত্বমুদ্রায় বা একটি ফুল নিয়ে
করবে।
মধ্যমা ও অনামা দ্বারা ললাটে- অং নমঃ; তর্জনী, মধ্যমা
ও অনামা দ্বারা মুখমণ্ডলে- আং নমঃ । অঙ্গুষ্ঠ ও অনামা দ্বারা দক্ষিণ চক্ষুতে- ইং নমঃ; বাম চক্ষুতে- ঈং নমঃ
। অঙ্গুষ্ঠপৃষ্ঠ দ্বারা দক্ষিণ কর্ণে- উং নমঃ; বাম কর্ণে- ঊং নমঃ । কণিষ্ঠাঙ্গুষ্ঠ দ্বারা দক্ষিণ নাসায়- ঋং নমঃ; বাম নাসায়- ঋং (দীর্ঘ)
নমঃ । তর্জনী,
মধ্যমা ও অনামা দ্বারা দক্ষিণ গণ্ডে- ৯ং (লিং) নমঃ;
বাম গণ্ডে- ৯৯ং (লীং) নমঃ । মধ্যমা দ্বারা ওষ্ঠে- এং নমঃ; অধরে- ঐং নমঃ । অনামা দ্বারা ওপরের দাঁতের পাটিতে- ওং নমঃ; নিচের দাঁতের পাটিতে-
ঔং নমঃ । মধ্যমা দ্বারা মস্তকে- অং নমঃ; অনামা দ্বারা মুখবিবরে-
অঃ নমঃ । কনিষ্ঠা, মধ্যমা
ও অনামা দ্বারা দক্ষিণ বাহুমূল থেকে চারটি সন্ধিস্থানে ও অঙ্গুলির অগ্রভাগে যথাক্রমে--
কং নমঃ খং নমঃ গং নমঃ ঘং নমঃ ঙং নমঃ । বাম বাহুমূল থেকে চারটি সন্ধিস্থানে ও অঙ্গুলির অগ্রভাগে
যথাক্রমে-- চং নমঃ ছং নমঃ জং নমঃ ঝং নমঃ ঞং নমঃ । দক্ষিণ এবার ডান পায়ের চারটি সন্ধিস্থানে ও অঙ্গুলির অগ্রভাগে যথাক্রমে-- টং নমঃ ঠং নমঃ
ডং নমঃ ঢং নমঃ ণং নমঃ । বাম পায়ের চারটি সন্ধিস্থানে ও অঙ্গুলির অগ্রভাগে যথাক্রমে-- তং নমঃ থং নমঃ দং নমঃ ধং নমঃ নং নমঃ । কনিষ্ঠা, মধ্যমা
ও অনামা দ্বারা দক্ষিণ পাশে- পং নমঃ । বাম পাশে- ফং নমঃ
। পৃষ্ঠে- বং নমঃ
। অঙ্গুষ্ঠ,
মধ্যমা, অনামা ও কনিষ্ঠা দ্বারা নাভিতে-
ভং নমঃ । সকল অঙ্গুলি দিয়ে পেটে- মং নমঃ
। করতল দ্বারা হৃদয়ে- যং নমঃ
। ঐরূপে দক্ষিণ স্কন্ধে- রং নমঃ । ঐরুপে গ্রীবাদেশে- লং নমঃ । ঐরূপে বাম স্কন্ধে- বং নমঃ । ঐরূপে হৃদয় থেকে দক্ষিণ হাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত- শং নমঃ
। ঐরূপে হৃদয় থেকে বাম হাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত- ষং নমঃ । ঐরূপে হৃদয় থেকে ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত- সং নমঃ । ঐরূপে হৃদয় থেকে বাম পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত- হং নমঃ । ঐরূপে হৃদয় থেকে উদর পর্যন্ত- লং নমঃ । ঐরূপে হৃদয় থেকে মুখমণ্ডল পর্যন্ত- ক্ষং নমঃ ।
সংহারমাতৃকান্যাস—(ধ্যান)
ওঁ অক্ষস্রজং হরিণপোতমুদগ্রটঙ্কং
বিদ্যাং করৈরবিরতং দধতীং ত্রিনেত্রাম্ ।
অর্ধেন্দুমৌলিমরুণামরবিন্দসংস্থাং
বর্ণেশ্বরীং প্রণমত স্তনভারনম্রাম্ ৼ
এরূপ ধ্যান করে
বাহ্যমাতৃকান্যাসের বিপরীতক্রমে সেই সেই স্থানে যথোক্ত মুদ্রায় ও মন্ত্রে ন্যাস
করবে। যথা—
করতল দিয়ে হৃদয় থেকে
মুখ পর্যন্ত--ক্ষং নমঃ, হৃদয় থেকে উদর পর্যন্ত--লং নমঃ,
হৃদয় থেকে বাম পায়ের অঙ্গুল্যগ্র পর্যন্ত---হং নমঃ, হৃদয় থেকে ডান
পায়ের অঙ্গুল্যগ্র পর্যন্ত--সং নমঃ, এইরূপে ক্রমশঃ ললাটে অং নমঃ
পর্যন্ত করবে। পরে বর্ণন্যাস করবে---
বর্ণন্যাস--- তত্ত্বমুদ্রায় নিম্নপ্রকার ন্যাস করবে—
হৃদয়ে---
অং আং ইং ঈং উং ঊং ঋং ঋং ৯ং ৯ং নমঃ ।
দক্ষিণহস্তে---
এং ঐং ওং ঔং অং অঃ কং খং গং ঘং নমঃ ।
বামহস্তে---
ঙং চং ছং জং ঝং ঞং টং ঠং ডং ঢং নমঃ ।
দক্ষিণ পদে---
ণং তং থং দং ধং নং পং ফং বং ভং নমঃ ।
বাম পদে--- মং যং
রং লং বং শং ষং সং হং লং ক্ষং নমঃ ।
২৭। গুর্বাদিপূজা- গুরু ও গণেশাদি পঞ্চদেবতার পূজা নিম্নোক্ত
মন্ত্রে গন্ধপুষ্পে করা যেতে পারে। সমস্ত পূজাই সন্মুখবর্তী তাম্রকুণ্ডস্থ জলে
করবে।
ওঁ ঐঁ এতে গন্ধপুষ্পে
শ্রীগুরবে নমঃ।
ওঁ গং এতে গন্ধপুষ্পে
শ্রীগণেশায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় এতে
গন্ধপুষ্পে শিবায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
শ্রীসূর্যায় নমঃ।
ওঁ নমো নারায়ণায় এতে
গন্ধপুষ্পে নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ হ্রীঁ এতে
গন্ধপুষ্পে শ্রীজয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
আদিত্যাদি-নবগ্রহেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ইন্দ্রাদি-দশদিকপালেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
কাল্যাদি-দশমহাবিদ্যাভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
মৎস্যাদি-দশাবতারেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
সর্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
সর্বাভ্যো দেবীভ্যো নমঃ।
(চ) বিশেষ পূজায় শ্রীগুরু, গণেশাদি পঞ্চদেবতা
(গণেশ, শিব, সূর্য, নারায়ণ ও কৌশিকী বা জয়দুর্গা) এবং বাণেশ্বর শিবের পৃথক পৃথক পূজা পঞ্চোপচারে বা দশোপচারে করতে হয় । যথা—
গুরুপূজা— শিরে অবস্থিত সহস্রদল কমলের অন্তর্গত শ্বেতবর্ণ দ্বাদশদল
পদ্মে শ্রীগুরুদেবের করুণাময় বিগ্রহের ধ্যান করবে। এ সময় কূর্মমুদ্রায় হাতে ফুল নিতে হবে। ধ্যান—
ওঁ ব্রহ্মানন্দং পরমসুখদং কেবলং জ্ঞানমূর্তিং
দ্বন্দ্বাতীতং গগনসদৃশং তত্ত্বমস্যাদি লক্ষ্যম্
।
একং নিত্যং বিমলমচলং সর্বধীসাক্ষিভূতং
ভাবাতীতং ত্রিগুণরহিতং সদগুরুং তং নমামি ।
[এই প্রকারেও কেউ কেউ ধ্যান করে থাকেন--- ওঁ ধ্যায়েচ্ছিরসি শুক্লাব্জে দ্বিনেত্রং দ্বিভুজং
গুরুম্ । শ্বেতাম্বরপরিধানং শ্বেতমাল্যানুলেপনম্ ৼ বরাভয়করং শান্তং করুণাময়বিগ্রহম্ । বামেনোৎপলধারিণ্যা শক্ত্যালিঙ্গিতবিগ্রহম্ । স্মেরাননং সুপ্রসন্নং সাধকাভীষ্টদায়কম্ ৼ]
এইভাবে ধ্যান করে ফুলটি সন্মুখের তাম্রপাত্রস্থ জলে
বা বাণেশ্বর শিবের উপর রেখে শ্রীগুরুর সাক্ষাৎ উপস্থিতি কল্পনা করে গন্ধ, পুষ্প, ধূপ,
দীপ, নৈবেদ্য এই পঞ্চ উপচারে পূজা করবে। [গুরুপুজা মনে মনে করতে হয়। এটি মানস পূজা। মানস পূজা না করলে কোন পূজাই সিদ্ধ হয় না। যদি কোন কারণে বাহ্যপূজা করা অসম্ভব হয়, তবে কেবল মানস পূজাতেই সকল পূজার ফললাভ
হয়।] যথা—
ঐং এষ গন্ধঃ শ্রীগুরবে নমঃ।
ঐং ইদং সচন্দনপুষ্পং শ্রীগুরবে
নমঃ।
ঐং ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং শ্রীগুরবে
নমঃ।
ঐং এষ ধূপঃ শ্রীগুরবে নমঃ।
ঐং এষ দীপঃ শ্রীগুরবে নমঃ।
ঐং ইদং নৈবেদ্যং শ্রীগুরবে নমঃ।
নৈবেদ্য না থাকলে আতপ চাল নিয়ে নৈবেদ্যার্থং আমান্নং
বলে দিবে। পরে
প্রণাম করবে।
ওঁ অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্ ।
তৎ পদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃৼ
গণেশপূজা— ধ্যান (কূর্মমুদ্রায়
রক্তপুষ্প নিয়ে)-
ওঁ খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং
লম্বোদরং সুন্দরং
প্রস্যন্দন্মদগন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্ ।
দন্তাঘাতবিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দূরশোভাকরং
বন্দে শৈলসুতাতুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্ ৼ
এই প্রকার ধ্যান করে গুরুপূজার প্রণালীতে পূজা করবে—
গং এষ গন্ধঃ গণেশায় নমঃ।
গং ইদং সচন্দনপুষ্পং গণেশায়
নমঃ।
গং ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং গণেশায়
নমঃ।
গং এষ ধূপঃ গণেশায় নমঃ।
গং এষ দীপঃ গণেশায় নমঃ।
গং ইদং নৈবেদ্যং গণেশায় নমঃ।
এইরূপে নৈবেদ্য পর্যন্ত নিবেদন করে প্রণাম করবে—
ওঁ দেবেন্দ্র-মৌলি-মন্দার-মকরন্দ-কণারুণাঃ ।
বিঘ্নং হরন্তু হেরম্ব-চরণাম্বুজ-রেণবঃ ৼ
একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননম্ ।
বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্
ৼ
শিবপূজা— ধ্যান (কূর্মমুদ্রায়
পুষ্প নিয়ে)-
ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং
রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্ ।
পদ্মাসীনং সমন্তাৎ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং
বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং
ত্রিনেত্রম্ ৼ
এই প্রকার ধ্যান করে পূর্বোক্ত প্রণালীতে পূজা করবে
। পূজার পূর্বে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে
স্নান করাবে—
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।
উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাহমৃতাৎ ৼ
অতঃপর পূজা করবে--
ওঁ নমঃ শিবায় এষ গন্ধঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং সচন্দনপুষ্পং শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় এষ ধূপঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় এষ দীপঃ শিবায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং নৈবেদ্যং শিবায় নমঃ।
এইরূপে নৈবেদ্য পর্যন্ত নিবেদন করে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করে প্রণাম
করবে—
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে ।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্ত্বং পরমেশ্বর ৼ
সূর্যপূজা— সূর্যপূজায় বিল্বপত্র এবং তুলসীপত্র নিষিদ্ধ । ধ্যান
(কূর্মমুদ্রায় রক্তপুষ্প নিয়ে)-
ওঁ রক্তাম্বুজাসনমশেষগুণৈকসিন্ধুং
ভানুং সমস্তজগতামধিপং ভজামি ।
পদ্মদ্বয়াভয়বরান্ দধতং করাজ্বৈ-
র্মাণিক্যমৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম্ ৼ
এই প্রকার ধ্যান করে পূর্বোক্ত প্রণালীতে পূজা করবে—
ওঁ এষ গন্ধঃ শ্রীসূর্যায় নমঃ।
ওঁ ইদং সচন্দনপুষ্পং শ্রীসূর্যায়
নমঃ।
ওঁ এষ ধূপঃ শ্রীসূর্যায় নমঃ।
ওঁ এষ দীপঃ শ্রীসূর্যায় নমঃ।
ওঁ ইদং নৈবেদ্যং শ্রীসূর্যায়
নমঃ।
এইরূপে নৈবেদ্য পর্যন্ত নিবেদন করে প্রণাম প্রণাম
করবে—
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ ।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্
ৼ
নারায়ণপূজা— ধ্যান
(কূর্মমুদ্রায় রক্তপুষ্প নিয়ে)-
ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্তী
নারায়ণঃ সরসিজাসন-সন্নিবিষ্টঃ ।
কেয়ূরবান্ কনককুণ্ডলবান্ কিরীটী-
হারী হিরণ্ময়বপুর্ধৃত-শঙ্খ-চক্রঃ ৼ
এই প্রকার ধ্যান করে পূজা করবে—
ওঁ নমো নারায়ণায় এষ গন্ধঃ নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং সচন্দনপুষ্পং নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং সচন্দনতুলসীপত্রং ওঁ নমস্তে
বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাত্মনে স্বাহা নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ নমো নারায়ণায় এষ ধূপঃ নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ নমো নারায়ণায় এষ দীপঃ নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ নমো নারায়ণায় ইদং নৈবেদ্যং নারায়ণায় নমঃ।
এইরূপে নৈবেদ্য পর্যন্ত নিবেদন করে প্রণাম করবে—
ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিতঃ শ্রীমান্ সদাবিজয়বর্ধনঃ ।
শান্তিং কুরু গদাপাণে নারায়ণ নমোহস্তু তে ৼ
জয়দুর্গা বা কৌষিকীপূজা— ধ্যান (কূর্মমুদ্রায়
রক্তপুষ্প নিয়ে)-
ওঁ হ্রীং কালাভ্রাভাং কটাক্ষৈররিকুলভয়দাং
মৌলি-বদ্ধেন্দুরেখাং
শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্রিশিখমপি করৈরুদ্বহন্তীং ত্রিনেত্রাম্ ।
সিংহস্কন্ধাধিরূঢ়াং ত্রিভূবনমখিলং তেজসা পূরয়ন্তীং
ধ্যায়েদ্দুর্গাং জয়াখ্যাং ত্রিদশপরিবৃতাং সেবিতাং
সিদ্ধিকামৈঃ
এই প্রকার ধ্যান করে পূজা করবে—
ওঁ হ্রীঁ এষ গন্ধঃ জয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
ওঁ হ্রীঁ ইদং সচন্দনপুষ্পং জয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
ওঁ হ্রীঁ ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং
জয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
ওঁ হ্রীঁ এষ ধূপঃ জয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
ওঁ হ্রীঁ এষ দীপঃ জয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
ওঁ হ্রীঁ ইদং নৈবেদ্যং জয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
এইরূপে নৈবেদ্য পর্যন্ত নিবেদন করে প্রণাম করবে।
ওঁ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে ।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তু তে ৼ
২৮। পীঠন্যাস- মৃগমুদ্রায় বক্ষস্থল স্পর্শ করে বলবে- ওঁ হ্রীং পীঠদেবতাভ্যো নমঃ; ওঁ হ্রীং
পীঠশক্তিভ্যো নমঃ।
(ছ) বিশেষ পূজায় (পীঠন্যাস ও পীঠশক্তিন্যাস) : বিশেষ পূজায় প্রত্যেক পীঠদেবতাকে ন্যাস করতে হয়। সর্বত্র প্রথমে ওঁ এবং পরে নমঃ যোগ
করে মৃগমুদ্রায় হৃদয় স্পর্শ করে বলবে—( যথা- ওঁ আধারশক্তয়ে
নমঃ ) ।
আধারশক্তয়ে । প্রকৃত্যৈ । কূর্মায় । অনন্তায় । পৃথিব্যৈ । সুধান্বুধয়ে । মণিদ্বীপায় । চিন্তামণিগৃহায় । পারিজাতায় । কল্পবৃক্ষায় । মণিবেদিকায়ৈ । রত্নসিংহাসনায় । মণিপীঠায় ।
(চতুর্দিকে) মুনিভ্যঃ , দেবেভ্যঃ । (দক্ষিণ স্কন্ধে) ধর্মায় । (বাম স্কন্ধে) জ্ঞানায় । (বাম ঊরুতে) বৈরাগ্যায় । (দক্ষিণ ঊরুতে) ঐশ্বর্যায় । (মুখে) অধর্মায় । (বামপার্শ্বে) অজ্ঞানায় । (নাভিতে) অবৈরাগ্যায়
। (দক্ষিণপার্শ্বে) অনৈশ্বর্যায় । (পুনঃ হৃদয়ে) অং অনন্তায় । পং পদ্মায়
। আনন্দকন্দায় । সম্বিন্নালায় । প্রকৃতিময়পত্রেভ্যঃ । বিকারময়কেশরেভ্যঃ । তত্ত্বময়কর্ণিকায়ৈ । অং অকমণ্ডলায়
দ্বাদশকলাত্মনে । সং সত্ত্বায়
। রং রজসে । তং তমসে
। আং আত্মনে । অং অন্তরাত্মনে
। পং পমোত্মনে । হ্রীঁ জ্ঞানাত্মনে
।
হৃৎপদ্মের পূর্বাদি ঈশানকোণ পর্যন্ত কেশরে— আং প্রভায়ৈ । ঈং মায়ায়ৈ
। ঊং জয়ায়ৈ । এং সূক্ষ্মায়ৈ
। ঐং বিশুদ্ধায়ৈ । ওং নন্দিন্যৈ
। ঔং সুপ্রভায়ৈ । অং বিজয়ায়ৈ
। (মধ্যে) অঃ সর্বসিদ্ধিদায়ৈ ।
২৯। ঋষ্যাদিন্যাস- হাত জোড় করে পাঠ করবে- ওঁ ঐং
সরস্বত্যৈ নমঃ ইত্যস্য মন্ত্রস্য কণ্বঋষির্বিরাড্ গায়ত্রীচ্ছন্দঃ বাগীশ্বরী দেবতা মম সর্বাভীষ্টসিদ্ধয়ে শ্রীসরস্বতী
পূজনে বিনিয়োগঃ।
তত্ত্বমুদ্রায় স্পর্শ করবে;
মস্তকে- ওঁ কণ্বায় ঋষয়ে নমঃ; মুখে-
ওঁ বিরাড্ গায়ত্র্যৈচ্ছন্দসে নমঃ; হৃদয়ে-
ওঁ বাগীশ্বর্যৈ দেবতায়ৈঃ নমঃ।
৩০। করন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত করন্যাসের অনুরূপ)
সাং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ; সীং তর্জনীভ্যাং স্বাহা; সূং মধ্যমাভ্যাং বষট্; সৈং অনামিকাভ্যাং হূং; সৌং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায়
ফট্।
৩১। অঙ্গন্যাস-
(স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত অঙ্গন্যাসের অনুরূপ) সাং হৃদয়ায় নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং কবচায় হূং; সৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায়
ফট্।
৩২। ব্যাপকন্যাস- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ- মন্ত্রে পাঁচবার দুই হাতে মাথা
থেকে পা পর্যন্ত এবং পা থেকে মাথা পর্যন্ত মার্জনা করবে।
৩৩। সরস্বতী ধ্যান- কূর্মমুদ্রায় হাতে ফুল নিয়ে হৃদয়ে জ্যোতির্ময় মূর্তি ভাবনাপূর্বক ধ্যান করবে-
ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভর-নমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে।
নিজ-করকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ
সকলবিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নঃ।।
৩৪। মানসপূজা- ধ্যানান্তে হাতের ফুল মাথায় স্থাপন করে কোলে বাম করতলের উপর
দক্ষিণ করপৃষ্ঠ রেখে মানস উপচারে পূজা করবে। হৃদয়কেই দেবতার আসন কল্পনা করে সেখানে তাঁর আবাহন
করবে। অতঃপর
সহস্রদলকমল-নিঃসৃত
সুধারূপ পাদ্য, মনোরূপ অর্ঘ্য, পূর্বোক্ত
সুধারূপ আচমনীয় ও স্নানীয়, আকাশতত্ত্বরূপ বসন, ক্ষিতিতত্ত্বরূপ গন্ধ, চিত্তরূপ পুষ্প,
প্রাণরূপ ধূপ, তেজস্তত্ত্বরূপ দীপ,
সুধাসমুদ্ররূপ নৈবেদ্য মনে মনে প্রদান করবে। সমর্থ হলে নিম্নোক্ত তান্ত্রিক মন্ত্রপাঠ করে দেবতার
মানসপূজা করবে।
তন্ত্রোক্ত মানসপূজা—
ওঁ হৃৎপদ্মমাসনং দদ্যাৎ সহস্রারচ্যুতামৃতৈঃ
।
পাদ্যং চরণয়োর্দদ্যাৎ মনস্ত্বর্ঘ্য নিবেদয়েৎ
ৼ
তেনামৃতেনাচমনীয়ং স্নানীয়ং তেন চ স্মৃতং ।
আকাশতত্ত্বং বস্ত্রং স্যাৎ গন্ধঃ স্যাৎ গন্ধতত্ত্বকম্ ৼ
চিত্তং প্রকল্পয়েঃ পুষ্পং ধূপং প্রাণান্ প্রকল্পয়েৎ ।
তেজস্তত্ত্বঞ্চ দীপার্থং নৈবেদ্যং স্যাৎ সুধাম্বুধিঃ ৼ
অনাহতধ্বনির্ঘণ্টা বায়ুতত্ত্বঞ্চ চামরং ।
সহস্রারং ভবেচ্ছত্রং শব্দতত্ত্বঞ্চ গীতকম্
ৼ
নৃত্যমিন্দ্রিয়কর্মাণি চাঞ্চল্যং মনসস্তথা ।
সুমেখলাং পদ্মমালাং পুষ্পং নানাবিধং তথা ৼ
অমায়াদ্যৈর্ভাবপুষ্পৈরর্চয়েৎ ভাবগোচরং ।
অমায়মনহঙ্কারমরাগমমদং তথা ৼ
অমোহকমদম্ভঞ্চ অদ্বেষাক্ষোভকৌ তথা ।
অমাৎসর্যমলোভঞ্চ দশপুষ্পং বিদুর্বুধা ৼ
অহিংসা পরমং পুষ্পং পুষ্পমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ
।
দয়াপুষ্পং ক্ষমাপুষ্পং জ্ঞানপুষ্পঞ্চ পঞ্চমম্
ৼ
ইতি পঞ্চদশৈর্ভাবপুষ্পৈঃ সম্পূজয়েৎ শিবম্ ।
বিশেষার্ঘ্য স্থাপন- পূজক নিজের সামনে কোশার বাম দিকে একটি নিম্নমুখ ত্রিকোণ, তার বাইরে
বৃত্ত ও তার বাইরে
চতুষ্কোণ মণ্ডল এঁকে সামান্যার্ঘ্যের জল দ্বারা প্রোক্ষণ করবে এবং ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে আধারশক্তয়ে নমঃ’
মন্ত্রে মণ্ডল পূজা করবে। মণ্ডলের উপর ত্রিপদিকা স্থাপন করে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে
নমঃ’ মন্ত্রে ত্রিপদিকায় পূজা করবে। ‘হূঁ ফট্’ মন্ত্রে শঙ্খ ধুয়ে ত্রিপদিকার উপর রেখে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অং অর্কমণ্ডলায়
দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ’ মন্ত্রে পূজা করবে। পরে ‘ঐং’ মন্ত্র উচ্চারণ করে শঙ্খের তিনভাগ জল দ্বারা পূর্ণ করবে এবং ‘নমঃ’ মন্ত্রে গন্ধপুষ্প, দুর্বা ও আতপ তণ্ডুল দিয়ে অর্ঘ্য রচনা করে
তদুপরি স্থাপনপূর্বক ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
উং সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ’ মন্ত্রে
অর্ঘ্য জলে পূজা করবে। পরে অঙ্কুশ
মুদ্রায় ঐ জল স্পর্শ করে ‘ওঁ
গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি নর্মদে সিন্ধুকাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু’
মন্ত্রে সূর্যমণ্ডল থেকে তীর্থ আবাহন করবে এবং ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে তীর্থেভ্যো নমঃ’ মন্ত্রে তীর্থ পূজা করবে। পরে ‘বষট্’ মন্ত্রে গালিনী মুদ্রা দেখিয়ে পূজা করবে- ‘ওঁ ঐং এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীসরস্বতীদেবতাভ্যো নমঃ’। অতঃপর
আবাহন্যাদি পঞ্চমুদ্রা
দেখিয়ে শঙ্খে দেবতার আবাহন করবে-
‘ওঁ ঐং সরস্বতী দেবি ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ (আবাহনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ (স্থাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ
সন্নিধেহি ইহ সন্নিধেহি (সন্নিধাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সন্নিরুধ্যস্ব ইহ
সন্নিরুধ্যস্ব (সংরোধনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সম্মুখী ভব ইহ সম্মুখী ভব (সম্মুখীকরণ
মুদ্রা দ্বারা) অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ’ (করজোড়ে) বলবে। পরে ‘ওঁ
ঐং এতে গন্ধপুষ্পে সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করে মৎস্যমুদ্রায় অর্ঘ্য আচ্ছাদনপূর্বক ‘ওঁ’ মন্ত্র দশবার জপ করবে। তারপর বাম করতলে দক্ষিণ হস্তের তর্জনী ও মধ্যমা যোগে ‘ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্বে তালত্রয়
দিয়ে ধেনু, যোনি ও পরমীকরণ মুদ্রা
প্রদর্শন করবে। শঙ্খ কাৎ করে কিঞ্চিৎ জল কুশীতে ঢেলে সেই জল ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে নিজের
মাথায় ও পূজাদ্রব্যে ছিটিয়ে দিবে।
৩৫। পীঠপূজা- ‘ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে পীঠদেবতাভ্যো নমঃ; ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে
পীঠশক্তিভ্যো নমঃ’ মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে পূজা করবে। পুনরায় করন্যাস, অঙ্গন্যাস প্রভৃতি---
(জ) বিশেষ পূজায় পীঠদেবতা ও পীঠশক্তি পূজা-
(তাম্রকুণ্ডে কিংবা বাণেশ্বর শিব থাকলে
শিবের উপর পূজা করবে)
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
আধারশক্তয়ে নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে প্রকৃত্যৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে কূর্মায় নমঃ ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
অনন্তায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
পৃথিব্যৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
সুধান্বুধয়ে নমঃ ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
মণিদ্বীপায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে চিন্তামণিগৃহায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে পারিজাতায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে কল্পবৃক্ষায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মণিবেদিকায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে রত্নসিংহাসনায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মণিপীঠায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মুনিভ্যঃ নমঃ। ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে দেবেভ্যঃ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ধর্মায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে জ্ঞানায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বৈরাগ্যায় নমঃ ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ঐশ্বর্যায় নমঃ ।ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
অধর্মায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
অজ্ঞানায় নমঃ ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
অবৈরাগ্যায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অনৈশ্বর্যায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অং অনন্তায় নমঃ ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
পং পদ্মায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে আনন্দকন্দায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সম্বিন্নালায় নমঃ ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
প্রকৃতিময়পত্রেভ্যঃ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বিকারময়কেশরেভ্যঃ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে তত্ত্বময়কর্ণিকায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অং অকমণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সং সত্ত্বায় নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
রং রজসে নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে তং তমসে নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
আং আত্মনে নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অং অন্তরাত্মনে নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
পং পমোত্মনে নমঃ ।ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে হ্রীঁ জ্ঞানাত্মনে নমঃ ।
মন্ত্রে পীঠপূজা করে নিম্নোক্ত পীঠশক্তি পূজা করবে
--
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
আং প্রভায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ঈং মায়ায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ঊং জয়ায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
এং সূক্ষ্মায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ঐং বিশুদ্ধায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ওং নন্দিন্যৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
ঔং সুপ্রভায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
অং বিজয়ায়ৈ নমঃ । ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
অঃ সর্বসিদ্ধিদায়ৈ নমঃ । পরে করন্যাস, অঙ্গন্যাস
প্রভৃতি--
৩৬। করন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত করন্যাসের অনুরূপ)
সাং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ; সীং তর্জনীভ্যাং স্বাহা; সূং মধ্যমাভ্যাং বষট্; সৈং অনামিকাভ্যাং হূং; সৌং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায়
ফট্।
৩৭। অঙ্গন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত অঙ্গন্যাসের
অনুরূপ) সাং হৃদয়ায়
নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং কবচায় হূং; সৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায়
ফট্।
৩৮। ব্যাপকন্যাস- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ- মন্ত্রে পাঁচবার দুই হাতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত
এবং পা থেকে মাথা পর্যন্ত মার্জনা করবে।
৩৯। সরস্বতী ধ্যান- কূর্মমুদ্রায় হাতে ফুল নিয়ে হৃদয়ে জ্যোতির্ময় মূর্তি ভাবনাপূর্বক ধ্যান করবে-
‘ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভর-নমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে।
নিজ-করকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ
সকলবিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নঃ’।।
ধ্যানান্তে হৃদয়স্থ অষ্টদলপদ্মের
দেবতার জ্যোতির্ময় মূর্তি হস্তস্থিত পুষ্পে আবির্ভূত ভাবনা করে সেই পুষ্প তাম্রকুণ্ডে
বা পূজাধারে স্থাপন করবে।
[ এখন অপ্রতিষ্ঠিত মূর্তি বা পট
হলে সেই মূর্তিতে বা পটে এবং ঘটে পূজা হলে ঘটে আবাহন করতে হবে।]
৪০। আবাহন- আবাহন্যাদি
পঞ্চমুদ্রায় আবাহন করবে-
‘ওঁ ঐং সরস্বতী দেবি ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ (আবাহনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ (স্থাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ
সন্নিধেহি ইহ সন্নিধেহি (সন্নিধাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সন্নিরুধ্যস্ব ইহ
সন্নিরুধ্যস্ব (সংরোধনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সম্মুখী ভব ইহ সম্মুখী ভব (সম্মুখীকরণ
মুদ্রা দ্বারা) অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ’ (করজোড়ে)। অতঃপর ‘হূং’ মন্ত্রে মূর্তিতে বা পটে বা ঘটে
অবগুণ্ঠন মুদ্রা দেখিয়ে দেবতার অঙ্গে ষড়াঙ্গন্যাস করতে হবে।
৪১। ষড়াঙ্গন্যাস- এক একটি ফুল নিয়ে ‘সাং হৃদয়ায় নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং করচায় হূং; সৌং
নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্’ ইত্যাদি ক্রমে
দেবতার অঙ্গে নিক্ষেপ করতে হবে। পরে ধেনু মুদ্রা ও পরমীকরণ মুদ্রা প্রদর্শন করবে।
[অপ্রতিষ্ঠিত মূর্তি বা
পটে পূজা হলে এখন চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঘটে বা শালগ্রামে পূজা হলে
এর দরকার নেই।]
৪২। চক্ষুদান- ঘৃত দ্বারা একটি
বিল্বপত্রে কাজল প্রস্তুত করে আর একটি বিল্বপত্রের বোঁটা দ্বারা সেই কাজল নিয়ে ‘ওঁ বাগ্দেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো
দেবি প্রচোদয়াৎ ওঁ’ –সরস্বতীর এই গায়ত্রী মন্ত্র পাঠপূর্বক প্রথমে
ঊর্ধ্বনেত্রে পরে বামনেত্রে তৎপরে দক্ষিণ নেত্রের মণিতে দিয়ে চক্ষুদান করবে।
৪৩। প্রাণ প্রতিষ্ঠা- প্রতিমার
গণ্ডদ্বয় ধরে পাঠ করবে-
ওঁ হংসঃ শুচিষদ্ বসুরন্তরিক্ষসদ্ হোতা বেদিসদ্ অতিথিঃ দুরোণসদ্ নৃষদ্ বরসদ্
ব্যোমসদ্ অব্জা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতং বৃহৎ।
ওঁ প্রতদ্বিষ্ণুঃ স্তবতে বীর্য্যেণ মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠা, যস্যোরুষু
ত্রিষু বিক্রমণেষ্বধিক্ষিয়ন্তি ভুবানি বিশ্বাঃ।
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। উর্ব্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোঃ
মুক্ষীয়মামৃতাৎ।
ওঁ তদ্বিপ্রাসো বিপণ্যবো জাগৃবাংসঃ সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম্।
ওঁ বিষ্ণুর্যোনিং কল্পয়তু ত্বষ্টা রূপাণি পিংসতু। আসিঞ্চতু প্রজাপতির্ধাতা
গর্ভং দধাতু তে।
ওঁ গর্ভং ধেহি সিনীবালি গর্ভং ধেহি সরস্বতি। গর্ভং তে অশ্বিনৌ দেবাবাধত্তাং
পুষ্করস্রজৌ ।।
কুশপুষ্পযুক্ত হস্ত
প্রতিমার মস্তকে স্থাপনপূর্বক ১০৮ বার
মূলমন্ত্র (ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ)
জপ করে গণ্ডস্থল ধরে পাঠ করবে এবং বাম হাতে ঘন্টাধ্বনি করবে-
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ প্রাণা ইহ প্রাণাঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ জীব ইহ স্থিতঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ সর্বেন্দ্রিয়াণি।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং
রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ বাঙ্
মনশ্চক্ষুস্ত্বক-শ্রোত্র-ঘ্রাণপ্রাণা ইহাগত্য সুখং চিরং তিষ্ঠন্তু স্বাহা।
এইবার লেলিহান
মুদ্রায় দূর্বা ও আতপ তণ্ডুল নিয়ে দেবীর হৃদয় স্পর্শ করে বলবে-
ওঁ অস্যৈ প্রাণাঃ
প্রতিষ্ঠন্তু অস্যৈ প্রাণাঃ ক্ষরন্তু চ। অস্যৈ দেবত্বসংখ্যায়ৈ স্বাহা।
ওঁ মনোজূতির্জুষতামাজ্যস্য
বৃহস্পতির্যজ্ঞমিমং তনোত্বরিষ্টং যজ্ঞং সমিমং দধাতু বিশ্বেদেবাস ইহ মাদয়ন্তামোং
প্রতিষ্ঠা।
অতঃপর দেবতা শরীরে অঙ্গন্যাস করবে-
৪৪। অঙ্গন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত অঙ্গন্যাসের
অনুরূপ) সাং হৃদয়ায় নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং কবচায় হূং; সৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্।
পরে যথাশক্তি উপচারে পূজা করবে।
[জ্ঞাতব্য:- পূজার উপচার ত্রিবিধ, ষোড়শোপচার, দশোপচার এবং
পঞ্চোপচার। সমর্থ হলে ষোড়শোপচার, তাতে অসমর্থ হলে দশোপচার, তাতেও অসমর্থ হলে
পঞ্চোপচার , তাতেও অসমর্থ হলে কেবলমাত্র গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা, তাতেও অসমর্থ হলে
কেবলমাত্র জল দ্বারা পূজা করা যায়।
ষোড়শোপচার- আসন, স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক,
পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুনরাচমনীয়, ।
এছাড়াও পুংদেবতার তৈল, পৈতা, উত্তরীয় (চাদর), মালা, তাম্বূল (পান); স্ত্রীদেবতার
শাঁখা, সিন্দুর, আয়না, চিরুনি, কাজল, আলতা এই সবও দেওয়া হয়।
দশোপচার- পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়,
মধুপর্ক (মধুপর্কস্থলে অনেকে স্নানজল দিয়ে থাকেন), পুনরাচমনীয়, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ,
দীপ, নৈবেদ্য।
পঞ্চোপচার- গন্ধ, পুষ্প,
ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য।]
৪৫। দশোপচারে পূজা-
পাদ্য- কুশীতে সামান্যার্ঘ্য জল নিয়ে তাতে অগুরু, চন্দন,
ফুল প্রভৃতি দিবে এবং ‘ওঁ ঐং এতৎ পাদ্যং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে দেবতার চরণযুগল ধুইয়ে দিচ্ছি,
এরূপ চিন্তা করে চরণযুগলের উদ্দেশ্যে অর্পন করবে।
অর্ঘ্য- পূর্বস্থাপিত বিশেষার্ঘ্য হাতে নিয়ে ‘ওঁ ঐং এষঃ অর্ঘ্যঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে দেবতার মস্তকে দিবে।
আচমনীয়- পাত্রস্থিত জল কর্পূরাদি দিয়ে সুবাসিত
করে ‘ওঁ ঐং ইদমাচমনীয়ং সরস্বত্যৈ
নমঃ’ মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশ্যে দিবেন।
স্নানীয়- একটি পাত্রে গন্ধতৈল, ভৃঙ্গারাদি পাত্র বা কুশীতে চন্দন,
কর্পূর, অগুরু প্রভৃতি মিশ্রিত জল নিয়ে তাতে
সচন্দন পুষ্প ও তুলসীপত্র নিবে, একটি আধারে বস্ত্র নিবে এবং
এতদ্সঙ্গে সিন্দুর নিয়ে ‘ওঁ ঐং স্নানীয়োদকং সরস্বত্যৈ
নমঃ’ মন্ত্রে নিবেদন করবে।
গন্ধ- কোন পাত্রে বা বেলপাতায় চন্দন, অগুরু ও সুবাসিত অন্যান্য গন্ধদ্রব্য
একত্র নিয়ে ‘ওঁ ঐং এষ গন্ধঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে নিবেদন করবে।
পুষ্প- পাঁচটি নানাবিধ সদ্য প্রস্ফুটিত (পচা, বাসি,
দলিত, পোকাখাওয়া বাদে) সচন্দন পুষ্প আধারে নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং সচন্দনপুষ্পং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে জ্ঞানমুদ্রায় (তর্জনী-অঙ্গুষ্ঠ যোগে) অর্পন করবে।
বিল্বপত্র- পাঁচটি সচন্দন বিল্বপত্র নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং
সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে জ্ঞানমুদ্রায় দেবতাকে অর্পন করবে।
ধূপ- প্রজ্বলিত ধূপ আধারে স্থাপনপূর্বক ‘ওঁ ঐং এষ ধূপঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল প্রক্ষেপ দ্বারা নিবেদন করে বাম হাতে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে
ডান হাতের মধ্যমা ও অনামার ,মধ্যমপর্বে অঙ্গুষ্ঠাগ্রসংযোগে
ধূপ উত্তোলন করবে এবং দেবতার গায়ত্রী (
ওঁ বাগদেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো দেবি প্রচোদয়াৎ ওঁ ) পাঠ করতে করতে তাঁর নাসিকা পর্যন্ত
তিনবার ঘুরিয়ে নিজের ডান দিকে রাখবে।
দীপ- প্রজ্বলিত দীপ
‘ওঁ ঐং এষ দীপঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে ধূপ নিবেদনের মত দেবতার চোখ পর্যন্ত ভ্রামিত করবে ও দীপ পাত্রে
নিজের বামদিকে রাখবে।
নৈবেদ্য নিবেদন বিধি-
নিম্নোক্ত ক্রমে নৈবেদ্য
নিবেদন করবে। দেবতার সম্মুখে অথবা দক্ষিণে আধারোপরি নৈবেদ্য পাত্র স্থাপন করে ‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-নৈবেদ্যায় নমঃ’ (অন্ন
হলে-‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-অন্নায় নমঃ’)
মন্ত্রে তিনবার জলের ছিটা দিয়ে প্রোক্ষণ করবে। অতঃপর ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ সোপকরণনৈবেদ্যায় নমঃ’ মন্ত্রে নৈবেদ্যে
গন্ধপুষ্প দিবে। গন্ধপুষ্পে পূজা করবে- ‘ওঁ
এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
এতৎ-সম্প্রদানায় সরস্বত্যৈ নমঃ’। অনন্তর ‘হূং’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, চক্রমুদ্রায় অভিরক্ষণ, ‘যং’ মন্ত্রে দোষশোষণ, ‘রং’ মন্ত্রে দহন এবং ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন করে
নৈবেদ্য অমৃতময় ভাবনা করবে। অতঃপর মৎস্যমুদ্রায় নৈবেদ্য আচ্ছাদন করে ‘ঐং’ মন্ত্র দশবার জপ করবে।‘ওঁ ঐং ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং (অন্ন হলে- সোপকরণমন্নং) সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’
মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজল প্রোক্ষণ করে (অঙ্গুষ্ঠ-অনামাযোগে ছিটিয়ে) দেবতাকে নিবেদন করবে । কুশীতে অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা’ মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। বাম হাতের তালুতে জল নিয়ে গ্রাসমুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক
ডান হাতে ‘প্রাণায় স্বাহা’, অপানায় স্বাহা’, ব্যানায় স্বাহা’, ‘উদানায় স্বাহা’, ‘সমানায় স্বাহা’-মন্ত্রে পঞ্চমুদ্রা প্রদর্শন করে কিছুক্ষণ
চিন্তা করবে যে দেবতা নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। ঐ সময় মূলমন্ত্র ‘ঐং’ জপ করবে। পুনরায় অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতাপিধানমসি স্বাহা’-মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর পানীয়,
পুনরাচমনীয় ও তাম্বূল নিবেদন করবে-
পানীয়-
একটি পাত্রে কর্পূরাদি সুবাসিত
জল নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং পানার্থোদকং সরস্বত্যৈ
নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল ছিটিয়ে নিবেদন করবে
।
পুনরাচমনীয়-
একটি পাত্রে কর্পূরাদি সুবাসিত
জল নিয়ে ‘ওঁ ঐং পুনরাচমনীয়োদকং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল ছিটিয়ে নিবেদন করবে
।
তাম্বুল-
সুবাসিত তাম্বুল একটি আধারে
নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং তাম্বুলং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল ছিটিয়ে নিবেদন করবে ।
সরস্বতী পূজার পর
লক্ষ্মীপূজা ও নারায়ণপূজা করবে। পরে লেখনী, মস্যাধার, বাদ্যযন্ত্র, পুস্তক ও দেবীর
বাহনকে পঞ্চোপচারে পূজা করবে। যথা-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে লক্ষ্ম্যৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে নমো নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে লেখন্যৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে মস্যাধারায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে বাদ্যযন্ত্রেভ্যঃ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে পুস্তকেভ্যঃ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে দেবীবাহনেভ্যঃ নমঃ। পরে আবীর দিয়ে-
‘ইদং রাগদ্রব্যং ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ বলে পূজা করবে। শ্রীসরস্বতীদেবীকে আম্রমুকুল ও পলাশফুল
দিতে হয়। পরে পুষ্পাঞ্জলি দিবে।
(ঝ) ষোড়শোপচারে পূজা-
উপচার নিবেদনকালে একটি একটি করে অর্চনা করে একটি একটি করে উপচারদান মন্ত্রে নিবেদন করতে হয়। উপচারগুলো হচ্ছে- আসন,
স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ,
পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুনরাচমনীয়, । এছাড়াও পুংদেবতার তৈল, পৈতা, উত্তরীয়
(চাদর), মালা, তাম্বূল (পান); স্ত্রীদেবতার শাঁখা, সিন্দুর, আয়না, চিরুনি, কাজল,
আলতা প্রভৃতি।
সম্প্রদানবিধি ও মন্ত্র :-
আসন- আসন অর্চনা যথা, আসন (রৌপ্য বা বস্ত্রাদি নির্মিত হতে পারে) সামনের কোন পাত্রে রেখে, ‘বং এতস্মৈ রজতাসনায় নমঃ’ মন্ত্রে তিনবার সামান্যার্ঘ্য জল দ্বারা ছিটা দিয়ে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে রজতাসনায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতৎ সম্প্রদানায় সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে পূজা করবে। এইভাবে
সকল উপচার এক এক করে অর্চনা করে নিবেদন করবে। তারপর হাতজোড় করে পাঠ করবে-
ওঁ প্রসীদ জগতাং মাতঃ সংসারার্ণবতারিণি ।
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা আসনং সফলং কুরু ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং
ইদং রজতাসনং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে প্রদান করবে।
স্বাগত (করজোড়ে বলবে)-
ওঁ যস্যা দর্শনমিচ্ছন্তি দেবাঃ স্বাভীষ্টসিদ্ধয়ে ।
তস্যৈ তে পরমেশানি স্বাগতং স্বাগতঞ্চ মে ৼ
ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাগতং সুস্বাগতয় তে ।
পাদ্য- কুশীতে বা অন্যপাত্রে সামান্যার্ঘ্য জল নিয়ে তাতে অগুরু, চন্দন, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিবে এবং আধারের উপর স্থাপন করে অর্চনা করবে। পরে করজোড়ে পাঠ করবে--
ওঁ পাদ্যং গৃহ্ণ মহাদেবি সর্বদুঃখাপহারিণি ।
ত্রায়স্ব বরদে দেবি নমস্তে সর্বমঙ্গলে ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং এতৎ পাদ্যং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে দেবতার চরণযুগলের উদ্দেশে অর্পণ করবে।
অর্ঘ্য- পূর্বস্থাপিত বিশেষার্ঘ্য (দানার্ঘ্য) হাতে নিয়ে অথবা করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ তাপত্রয়হরং দিব্যং পরমানন্দলক্ষণম্
।
তাপত্রয়বিমোক্ষায় তবার্ঘ্যং কল্পয়াম্যহম্ ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং
এষোহর্ঘ্যঃ সরস্বত্যৈ স্বাহা’ মন্ত্রে
দেবতার মস্তকে দিবে।
আচমনীয়- কুশীতে বা অন্যপাত্রে সামান্যার্ঘ্য জল নিয়ে তাতে অগুরু, চন্দন, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিবে এবং আধারের উপর স্থাপন করে অর্চনা করবে। পরে করজোড়ে পাঠ করবে--
ওঁ ইমা আপো ময়া ভক্ত্যা তব পাণিতলেহর্পিতা ।
আচাময় মহাদেবি প্রীত্যা শান্তিং প্রযচ্ছ মে ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং
ইদমাচমনীয়োদকং সরস্বত্যৈ স্বধা’ এইমন্ত্রে দেবতার চরণ যুগলের উদ্দেশে অর্পণ করবে।
মধুপর্ক- কাঁসার বা রৌপ্য পাত্রে সমপরিমাণ দই,
ঘি, মধু ও চিনি মিশ্রিত করে অল্প জল দিবে। মধুর পরিমাণ অধিক থাকবে। পূর্ববৎ অর্চনা করে হাতজোড় করে পাঠ করবে-
ওঁ মধুপর্কং মহাদেবি ব্রহ্মাদ্যৈঃ
পরিকল্পিতম্ ।
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা গৃহাণ পরমেশ্বরী
তারপর ‘ওঁ ঐং এষ মধুপর্কং সরস্বত্যৈ স্বধা’ এইমন্ত্রে পূর্ববৎ দেবতার উদ্দেশে দিবে।
পুনরাচমনীয়- পূর্ববৎ আচমনীয় অর্চনা করে মন্ত্র পাঠ করবে-
ওঁ উচ্ছিষ্টমপ্যশুচির্বা যস্য স্মরণমাত্রতঃ ।
শুদ্ধিমাপ্নোতি তস্মৈ তে পুনরাচমনীয়কম্ ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং পুনরাচমনীয়োদকং সরস্বত্যৈ স্বধা’ মন্ত্রে পূর্বোক্ত প্রকারে দেবতার উদ্দেশে দিবে।
স্নানীয়- প্রথমে গন্ধতৈল নিবেদন করবে। একটি পাত্রে বা কুশীতে গন্ধতৈল নিয়ে পূর্ববৎ অর্চনাদি
করে পাঠ করবে-
ওঁ স্নেহং
গৃহাণ স্নেহেন লোকানাং হিতকারিণি ।
সর্বলোকেষু শুদ্ধ ত্বং দদামি স্নেহমুত্তমম্ ৼ
‘ওঁ ঐং ইদং গন্ধতৈলং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে প্রদান করবে।
তৎপরে ভৃঙ্গারাদি পাত্রে
বা কুশীতে সুরভিদ্রব্যমিশ্রিত জল নিয়ে তাতে সচন্দন পুষ্প ও তুলসীপত্র নিক্ষেপ করে পূর্ববৎ
অর্চনাদি করবে এবং হাতজোড় করে পাঠ করবে-
ওঁ জলঞ্চ শীতলং স্বচ্ছমিদংশুদ্ধং
মনোহরম্ ।
স্নানার্থং তে ময়া ভক্ত্যা কল্পিতং প্রতিগৃহ্যতাম্ ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং স্নানীয়োদকং সরস্বত্যৈ নমঃ’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
বস্ত্র- সাধ্যমত উত্তম কার্পাস বস্ত্র আধারে স্থাপন করে পূর্ববৎ
অর্চনাপূর্বক পাঠ করবে-
ওঁ তন্তুসন্তানসন্নদ্ধং রঞ্জিতং রাগবস্তুনা ।
মহাদেবি ভজ প্রীতিং বাসন্তে পরিধীয়তাম্ ৼ
‘ওঁ ঐং ইদং বস্ত্রং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
আভরণ— ওঁ দিব্যরত্নসমাযুক্তা বহ্নিভানুসমপ্রভাঃ
গাত্রাণি শোভয়িষ্যন্তি অলঙ্কারাঃ সুরেশ্বরি
ৼ
‘ওঁ ঐং ইদমাভরণং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
সিন্দুর— ওঁ শিরোভূষণসিন্দূরং ভর্তুরায়ুবিবর্ধনম্ ।
সর্বরত্নাধিকং দিব্যং সিন্দূরং প্রতিগৃহ্যতাম্
ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং সিন্দূরং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
অলক্ত/আলতা— ওঁ পাদয়োঃ শোভনং দিব্যমলক্তং সুমনোহরম্ ।
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা স্থানং দেহি পদাম্বুজে ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদমলক্তং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
কজ্জ্বল/কাজল— ওঁ অঞ্জনং পরমং দিব্যং নেত্রয়োর্ভূষণং মহৎ ।
গৃহাণ বরদে দেবি প্রসীদ বররর্ণিনি ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং কজ্জ্বলং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
গন্ধ— কোন পাত্রে বা বেলপাতায় চন্দন, অগুরু ও সুবাসিত অন্যান্য গন্ধদ্রব্য
একত্রে নিয়ে অর্চনা করে পাঠ করবে-
ওঁ পরমানন্দসৌরভ্যপরিপূর্ণদিগন্তরম্ ।
গৃহাণ পরমং
গন্ধং কৃপয়া পরমেশ্বরি ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং এষ গন্ধঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
পুষ্প— নানাবিধ পাঁচটি সদ্য ফোটা ফুল
(পচা, বাসি, দলিত,
পোকাখাওয়া বাদে) চন্দন মিশিয়ে অর্চনা করে
পাঠ করবে--
ওঁ পুষ্পং
মনোহরং দিব্যং সুগন্ধি দেবনির্মিতম্ ।
হৃদ্যমদ্ভুতমাঘ্রেয়ং দেবি দত্তং প্রগৃহ্যতাম্ ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং সচন্দনপুষ্পং সরস্বত্যৈ বৌষট্’ এইমন্ত্রে নিবেদন করে জ্ঞানমুদ্রায় (তর্জনী—অঙ্গুষ্ঠ
যোগে) অর্পন করবে ও দেবতাকে সাজিয়ে দিবে
।
বিল্বপত্র— পাঁচটি সচন্দন নিখুঁত বিল্বপত্র
আধারোপরি রেখে পাঠ করবে---
ওঁ অমৃতোদ্ভবং শ্রীবৃক্ষং শঙ্করস্য
সদাপ্রিয়ম্ ।
বিল্বপত্রং প্রযচ্ছামি পবিত্রং তে সুরেশ্বরি ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং
সরস্বত্যৈ বৌষট্’ এইমন্ত্রে নিবেদন করে জ্ঞানমুদ্রায়
(তর্জনী—অঙ্গুষ্ঠ যোগে) অর্পন করবে ।
পুষ্পমাল্য— আধারে স্থাপনপূর্বক চন্দনাদি দিয়ে
অর্চনা করে পাঠ করবে—
ওঁ সূত্রেণ গ্রথিতং মাল্যং নানাপুষ্পসমন্বিতম্ ।
গন্ধচন্দনসংযুক্তং গৃহাণ পরমেশ্বরি ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং পুষ্পমাল্যং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে ও দেবতাকে পরিয়ে দিবে ।
ধূপ— প্রজ্বলিত ধূপ আধারে স্থাপনপূর্বক
অর্চনা করে পাঠ করবে—
ওঁ বনস্পতিরসো দিব্যো গন্ধাঢ্যঃ সুমনোহরম্ ।
আঘ্রেয়ঃ সর্বদেবানাং ধূপোহয়ং প্রতিগৃহ্যতাম্
ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং
এষ ধূপঃ সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ এইমন্ত্রে অর্ঘ্যজল প্রক্ষেপ দ্বারা নিবেদন করে বামহাতে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে
ডানহাতের মধ্যমা ও অনামার মধ্যমপর্বে অঙ্গুষ্ঠাগ্রসংযোগে ধূপ উত্তোলন করবে এবং দেবতার
গায়ত্রী (ওঁ বাগদেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো দেবি প্রচোদয়াৎ ওঁ) পাঠ করতে করতে তাঁর নাসিকা পর্যন্ত তিনবার
ঘুরিয়ে নিজের ডানদিকে রাখবে।
দীপ— প্রজ্বলিত
দীপ পূর্ববৎ অর্চনা করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করবে—
ওঁ অগ্নিজ্যোতী-রবিজ্যোতিশ্চন্দ্রজ্যোতিস্তথৈব চ ।
জ্যোতিষামুত্তমো দেবি দীপোহয়ং প্রতিগৃহ্যতাম্
ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং এষ দীপঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ এইমন্ত্রে নিবেদন করে ধূপ নিবেদনের মত দেবতার চোখ
পর্যন্ত ভ্রামিত করবে ও দীপ পাত্রে রাখবে।
নৈবেদ্য— নিম্নোক্ত ক্রমে নৈবেদ্য
নিবেদন করবে। দেবতার সম্মুখে অথবা দক্ষিণে আধারোপরি নৈবেদ্য পাত্র স্থাপন করে ‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-নৈবেদ্যায় নমঃ’ (অন্ন
হলে-‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-অন্নায় নমঃ’)
মন্ত্রে তিনবার জলের ছিটা দিয়ে প্রোক্ষণ করবে। অতঃপর ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ সোপকরণনৈবেদ্যায় নমঃ’ মন্ত্রে নৈবেদ্যে
গন্ধপুষ্প দিবে। গন্ধপুষ্পে পূজা করবে- ‘ওঁ
এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
এতৎ-সম্প্রদানায় সরস্বত্যৈ নমঃ’। অনন্তর ‘হূং’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, চক্রমুদ্রায় অভিরক্ষণ, ‘যং’ মন্ত্রে দোষশোষণ, ‘রং’ মন্ত্রে দহন এবং ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন করে
নৈবেদ্য অমৃতময় ভাবনা করবে। অতঃপর মৎস্যমুদ্রায় নৈবেদ্য আচ্ছাদন করে ‘ঐং’ মন্ত্র দশবার জপ করবে। পরে পাঠ করবে—
ওঁ নৈবেদ্যং বিবিধং দিব্যং সুমিষ্টং ফলমূলকম্ ।
শর্করাদিসমাযুক্তং চর্ব্যং চোষ্যং প্রগৃহ্যতাম্
ৼ
‘ওঁ ঐং ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং
(অন্ন হলে- সোপকরণমন্নং) সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজল
প্রোক্ষণ করে (অঙ্গুষ্ঠ-অনামাযোগে
ছিটিয়ে) দেবতাকে
নিবেদন করবে । কুশীতে অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা’ মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। বাম হাতের তালুতে জল নিয়ে গ্রাসমুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক
ডান হাতে ‘প্রাণায় স্বাহা’, অপানায় স্বাহা’, ব্যানায় স্বাহা’, ‘উদানায় স্বাহা’, ‘সমানায় স্বাহা’-মন্ত্রে পঞ্চমুদ্রা প্রদর্শন করে কিছুক্ষণ
চিন্তা করবে যে দেবতা নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। ঐ সময় মূলমন্ত্র ‘ঐং’ জপ করবে। পুনরায় অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতাপিধানমসি স্বাহা’-মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর পানীয়,
পুনরাচমনীয় ও তাম্বূল নিবেদন করবে-
পানীয়— পূর্ববৎ অর্চনা করে পাঠ করবে—
জলঞ্চ শীতলং স্বচ্ছং সুগন্ধি সুমনোহরম্ ।
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা পানীয়ং প্রতিগৃহ্যতাম্ ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং পানার্থোদকং সরস্বত্যৈ নমঃ’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
পুনরাচমনীয়— পূর্ববৎ
তাম্বুল— সুবাসিত তাম্বুল অর্চনা করে
পাঠ করবে—
ফলপত্রসমাযুক্তং কর্পুরেণ সুবাসিতম্ ।
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা তাম্বুলং প্রতিগৃহ্যতাম্ ৼ
তারপর ‘ওঁ ঐং ইদং তাম্বুলং সরস্বত্যৈ নমঃ’ এইমন্ত্রে নিবেদন করবে।
অনন্তর লক্ষ্মীপূজা ও
নারায়ণপূজা করবে। পরে লেখনী, মস্যাধার, বাদ্যযন্ত্র, পুস্তক ও দেবীর বাহনকে
পঞ্চোপচারে পূজা করবে। যথা-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে লক্ষ্ম্যৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে নমো নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে লেখন্যৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে মস্যাধারায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে বাদ্যযন্ত্রেভ্যঃ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে পুস্তকেভ্যঃ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে দেবীবাহনেভ্যঃ নমঃ। পরে আবীর দিয়ে-
‘ইদং রাগদ্রব্যং ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ বলে পূজা করবে। শ্রীসরস্বতীদেবীকে আম্রমুকুল ও পলাশফুল
দিতে হয়। পরে পুষ্পাঞ্জলি দিবে।
৪৬। পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র-
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদবেদান্ত বেদাঙ্গ বিদ্যাস্থানেভ্যঃ এব চ।।
ওঁ ঐং এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ শ্রীসরস্বত্যৈ নমঃ।
অতঃপর কৃতাঞ্জলি হয়ে
প্রার্থনামন্ত্র পাঠ করবে। যথা:-
৪৭। প্রার্থনামন্ত্র-
ওঁ যথা ন দেবো ভগবান্ ব্রহ্মা লোকপিতামহঃ।
ত্বাং পরিত্যজ্য সন্তিষ্ঠেৎ তথা ভব বরপ্রদা।।
ওঁ বেদাঃ শাস্ত্রাণি সর্বাণি নৃত্যগীতাদিকঞ্চ যৎ।
ন বিহীনং ত্বয়া দেবি তথা মে সন্তু সিদ্ধয়ঃ।।
ওঁ লক্ষ্মীর্ম্মেধা ধরা তুষ্টিগৌরী পুষ্টিঃ প্রভা ধৃতিঃ।
এতাভিঃ পাহি তনুভিরষ্টাভির্মাং সরস্বতী।।
অনন্তর প্রণাম করবে।
৪৮। প্রণামমন্ত্র-
ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে
বীণারঞ্জিত পুস্তকহস্তে ভগবতি ভারতি দেবি নমোহস্তুতে।।
ওঁ সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।।
সরস্বতী গায়ত্রীপাঠ- ‘ওঁ বাগদেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো দেবি প্রচোদয়াৎ ওঁ’ এই গায়ত্রী ১০ বার জপ
করবে।
৪৯।
মন্ত্রজপ- মূলমন্ত্র ‘ঐং’ যথাশক্তি জপ করে জপসমর্পণ করবে।
৫০। জপসমর্পণ- ডান হাতে এক
গণ্ডুষ জল নিয়ে ‘ওঁ গুহ্যাতিগুহ্যগোপত্রী
ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্। সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি ত্বৎপ্রসাদান্মহেশ্বরি’ এই
মন্ত্র পাঠ করে গোযোনিমুদ্রায়
দেবীর বামহস্তের উদ্দেশে অর্পণ করবে। অন্নভোগ
না থাকলে সম্ভব হলে পঞ্চপ্রদীপ, কর্পূরদীপ, জলপূর্ণ শঙ্খ, ধৌতবস্ত্র, পুষ্প ও চামর
এই কয়টি দ্রব্যে আরতি করবে। আরতির
পর পূর্ববৎ মন্ত্রে প্রণাম করবে।
পরে ভোগ নিবেদন, আরতি,
হোম ও দক্ষিণান্ত করবে।
[জ্ঞাতব্য- হোম না করলে পুষ্পাঞ্জলি ও
প্রণামাদির পর ‘হ্রীং ক্লীং
সর্বশান্তিকরো ভব’ মন্ত্রে চন্দন (শ্বেত ও রক্ত চন্দন) দ্বারা নিজের ও
অপরের কপালে ফোঁটা দিবে। অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা ও সাষ্টাঙ্গ প্রণাম পর চরণামৃত পান
করে প্রসাদ ধারণ করবে।]
৫১। অন্নভোগ নিবেদন- [ভোগ
নিবেদনে নৈবেদ্য নিবেদনের রীতি অনুযায়ী সমস্ত কর্ম করতে হয় । কেবল নিবেদনের
মন্ত্রে সামান্য পার্থক্য আছে । পাঠকের সুবিধার জন্য এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করা
হল।]
নিম্নোক্ত ক্রমে ভোগ
নিবেদন করবে। দেবতার সম্মুখে অথবা দক্ষিণে আধারোপরি ভোগ পাত্র স্থাপন করে ‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-অন্নায় নমঃ’ মন্ত্রে
তিনবার জলের ছিটা দিয়ে প্রোক্ষণ করবে। অতঃপর ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ সোপকরণ-অন্নায় নমঃ’ মন্ত্রে ভোগে
গন্ধপুষ্প দিবে। গন্ধপুষ্পে পূজা করবে- ‘ওঁ
এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
এতৎ-সম্প্রদানায় সরস্বত্যৈ নমঃ’। অনন্তর ‘হূং’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, চক্রমুদ্রায়
অভিরক্ষণ, ‘যং’ মন্ত্রে দোষশোষণ, ‘রং’ মন্ত্রে দহন এবং ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন করে
ভোগ অমৃতময় ভাবনা করবে। অতঃপর মৎস্যমুদ্রায় ভোগ আচ্ছাদন করে ‘ঐং’ মন্ত্র দশবার জপ করবে। ‘ওঁ ঐং
ইদং সোপকরণমন্নং সরস্বত্যৈ
নিবেদয়ামি’ মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজল প্রোক্ষণ করে
(অঙ্গুষ্ঠ-অনামাযোগে ছিটিয়ে) দেবতাকে নিবেদন করবে । কুশীতে
অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা’ মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। বাম হাতের তালুতে জল নিয়ে গ্রাসমুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক
ডান হাতে ‘প্রাণায় স্বাহা’, অপানায় স্বাহা’, ব্যানায় স্বাহা’, ‘উদানায় স্বাহা’, ‘সমানায় স্বাহা’-মন্ত্রে পঞ্চমুদ্রা প্রদর্শন করে কিছুক্ষণ
চিন্তা করবে যে দেবতা ভোগ গ্রহণ করছেন। ঐ সময় মূলমন্ত্র ‘ঐং’ জপ করবে। পুনরায় অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতাপিধানমসি স্বাহা’-মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর পানীয়,
পুনরাচমনীয় ও তাম্বূল পূর্ববৎ নিবেদন করবে।
৫২। আরাত্রিক- ভোগের পর আরাত্রিক করতে
হয়। সন্ধ্যায় দীপারাধনা নিত্যই বিধেয়। সামান্যার্ঘ্যের পাশে একটি ত্রিকোণ মণ্ডল
করে তদুপরি পঞ্চপ্রদীপ (বা দীপমালা) স্থাপন করবে এবং ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ করে ‘এতস্যৈ
নীরাজনদীপমালায়ৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্যজল দ্বারা অর্চনা করবে। পরে ‘এতদধিপতয়ে দেবায় বিষ্ণবে নমঃ, এতৎসম্প্রদানায়
ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্যজল দ্বারা পূজা করবে।
‘ওঁ ঐং এষা দীপমালা সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্যজলবিন্দু প্রক্ষেপপূর্বক নিবেদন করবে এবং
ডানহাতে দীপ উঠিয়ে বামহাতে ঘণ্টাধ্বনি করতে করতে মূলমন্ত্র (ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ)
সহকারে দেবতার শ্রীচরণে চারবার, নাভিদেশে
দুইবার, মুখমণ্ডলে তিনবার ও সর্বাঙ্গে সাতবার ঘুরিয়ে একপার্শ্বে রাখবে। পরে
যথাক্রমে কর্পূরদীপ, জলপূর্ণ শঙ্খ,
বস্ত্র, পুষ্প ও চামর দ্বারা পূর্ববৎ আরাত্রিক করবে। শেষে সাষ্টাঙ্গে
প্রণাম করবে। অতঃপর হোম করবে।
সংক্ষিপ্ত হোম
উপক্রম- পূর্বমুখে বসে আচমন,
সামান্যার্ঘ্য স্থাপন, আসনশুদ্ধি ও গুর্বাদিপ্রণাম করবে। তারপর বালি দিয়ে
হস্তপ্রমাণ চতুষ্কোণ স্থণ্ডিল রচনা করে সেই স্থণ্ডিলের মধ্যভাগে
তর্জনী-অঙ্গুষ্ঠযোগে কুশমূল দিয়ে বিন্দুগর্ভ ত্রিকোণ (পুংদেবতা হলে ঊর্ধ্বমুখে,
স্ত্রীদেবতা হলে অধোমুখে), তার বাইরে ষটকোণ, তার বাইরে বৃত্ত এবং সেই বৃত্তকে
অষ্টদল পদ্মের কর্ণিকারূপে কল্পনা করে তার আটদিকে আটটি দল আঁকবে, তার চারদিকে
ভূপুর এঁকে তাতে অষ্টদল পদ্মের অগ্নিকোণে (পূর্ব-দক্ষিণ) ‘নমঃ’ মন্ত্রে অর্ধহস্ত পরিমিত উত্তরাগ্র তিনটি রেখা এবং বায়ুকোণে
(উত্তর-পশ্চিম) পূর্বাগ্র তিনটি সরল রেখা আঁকবে।
চিত্র : স্থণ্ডিল (পুরুষ দেবতার ক্ষেত্রে) চিত্র :
স্থণ্ডিল (স্ত্রী দেবতার ক্ষেত্রে)
স্থণ্ডিলপূজা- অতঃপর ‘ওঁ ঐং’ মূলমন্ত্রে স্থণ্ডিল বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশ দিয়ে তাড়ন, ‘হূঁ’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্ব তালত্রয়ে
রক্ষণ, মূলমন্ত্রে পুষ্পাঞ্জলি দান ও প্রণবে (ওঁ) অভ্যুক্ষণ করবে।
যন্ত্রের মধ্যস্থলে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বহ্নের্যোগপীঠায় নমঃ’
মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে। পরে পূর্বাগ্র রেখা তিনটিতে যথাক্রমে পূজা
করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মুকুন্দায় নমঃ,
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ঈশানায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে পুরন্দরায় নমঃ’।
উত্তরাগ্র রেখা তিনটিতেও যথাক্রমে পূজা করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রহ্মণে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বৈবস্বতায় নমঃ, ওঁ এতে
গন্ধপুষ্পে সরস্বতীস্থণ্ডিলায় নমঃ’ মন্ত্রে পূজা করবে।
বাগীশ্বরী ধ্যান- অতঃপর
বাগীশ্বরী ধ্যান করবে-
ওঁ বাগীশ্বরীমৃতুস্নাতাং নীলেন্দীবরসন্নিভাম্। বাগীশ্বরেণ সংযুক্তাং
ক্রীড়াভাবসমন্বিতাম্। সরস্বতীস্বরূপাম্।। [ যে দেবতার পূজা হবে তাঁর নাম যুক্ত হবে।] এবার সমিধ
কাঠ সাজিয়ে নিতে হবে। পরে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে- ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে বাগীশ্বর্যৈ নমঃ। ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে
বাগীশ্বরায় নমঃ।
অগ্নি শোধন- যথাবিহিত অগ্নি এনে বিহিত পাত্রে (কাংস্যপাত্রে
বা সমিধোপরি) স্থাপনপূর্বক মূলান্তে ‘ওঁ
ঐঁ সরস্বত্যৈ বৌষট্’ মন্ত্রে বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশদ্বারা তাড়ন, ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘হূঁ’
মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, ‘বং’
মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন দ্বারা অগ্নি সংস্কার করে ‘রং’ মন্ত্রে কিঞ্চিন্মাত্র অগ্নি নিয়ে ‘হূঁ ফট্ ক্রব্যাদেভ্যঃ স্বাহা’ মন্ত্রে র্নৈঋত (দক্ষিণ-পশ্চিম) কোণে
পরিত্যাগ করবে।
অগ্নি-স্থাপন- অনন্তর ‘ওঁ’
মন্ত্রে দুই হাতে অগ্নি উত্তোলন করে মণ্ডলোপরি তিনবার দক্ষিণাবর্তে ঘুরিয়ে হাঁটু
পেতে বিপরীত দিক থেকে আপনার অভিমুখে মণ্ডলমধ্যস্থলে সেই বহ্নি স্থাপন করবে। পরে ‘রং বহ্নিমূর্তয়ে নমঃ, রং বহ্নিচৈতন্যায় নমঃ’
মন্ত্রদ্বয়ে গন্ধপুষ্প দিয়ে পূজা করবে এবং
‘ওঁ চিৎপিঙ্গল হন হন দহ দহ পচ পচ সর্বজ্ঞাজ্ঞাপয় স্বাহা’ মন্ত্রে
জ্বালিনীমুদ্রা দেখিয়ে অগ্নি প্রজ্বলিত করবে ও করজোড়ে পাঠ করবে- ‘ওঁ অগ্নিং প্রজ্বলিতং বন্দে জাতবেদং হুতাশনম্।
সুবর্ণবর্ণমমলং সমিদ্ধং বিশ্বতোমুখম্।। এরূপে উপাসনা করে অগ্নির নামকরণ
করবে- ‘ওঁ অগ্নে ত্বং সরস্বতীনামাসি’
(যে দেবতার পূজা হবে তাঁর নাম বসবে)।
অগ্নি-আবাহন- অতঃপর
আবাহনাদি পঞ্চমুদ্রায় অগ্নির আবাহন করবে- ওঁ
সরস্বতীনামাগ্নে ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ। ইহ তিষ্ঠ, ইহ তিষ্ঠ। ইহ সন্নিধেহি, ইহ
সন্নিধেহি। ইহ সন্নিরুদ্ধস্ব, ইহ সন্নিরুদ্ধস্ব। ইহ সম্মুখীভব, ইহ সম্মুখীভব।
অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ।
অগ্নি-পূজা- পঞ্চোপচারে ঐ
অগ্নির অর্চনা করবে-
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ গন্ধঃ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং সচন্দনপুষ্পং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ ধূপ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ দীপঃ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং তাম্বুলং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
পরে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অগ্নের্হিরণ্যাদিসপ্তজিহ্বাভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সহস্রার্চিষে হৃদয়ায় নমঃ ইত্যাদ্যগ্নিষড়ঙ্গেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অগ্নয়ে জাতবেদসে ইত্যাদ্যষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ।
বহির্দেশে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রাহ্ম্যাদ্যষ্টশক্তিভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে পদ্মাদ্যষ্টনিধিভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদিলোকপালেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বজ্রাদ্যস্ত্রেভ্যো নমঃ।
স্রুক-স্রুব সংস্কার-
স্রুক ও স্রুব (যা দিয়ে
আহুতি দেওয় হয়) অধোমুখে অগ্নিতে তপ্ত করে উহা বামহস্তে রেখে তার অগ্র, মধ্য ও
মূলদেশ কুশ দিয়ে মার্জন ও জল দিয়ে প্রোক্ষণপূর্বক পুনরায় তপ্ত করে মার্জিত কুশ
অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে এবং নিজের দক্ষিণে কুশোপরি ঐ স্রুক ও স্রুব স্থাপন করবে।
ঘৃত-সংস্কার- কুশোপরি
ঘৃতপাত্র স্থাপন ও ‘ফট্’ মন্ত্রে
প্রোক্ষণ করে তাতে ঘৃত স্থাপন করবে। পরে বীজ (ওঁ ঐং) পাঠ করে ঐ ঘৃত বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশ দ্বারা তাড়ন, ‘হূঁ’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’
মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্ব তালত্রয়ে রক্ষণ ও ‘বং’ মন্ত্রে যোনিমুদ্রা প্রদর্শন করবে। পরে ঘৃত অগ্নিতে গলিয়ে দু’টি
কুশ জ্বালিয়ে ‘হূঁ’ মন্ত্রে তার
ওপর ঘুরিয়ে অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে। অনন্তর এক বিঘৎ (অর্ধহস্ত) পরিমিত দু’টি কুশ
ঘৃতোপরি রেখে ঘৃতকে তিনভাগ করবে। বাম ভাগের ঘৃতকে ইড়া, মধ্য ভাগকে সুষুম্না ও
দক্ষিণ ভাগকে পিঙ্গলারূপ ভাবনা করে হোম করবে।
আহুতি-প্রদান- ‘নমঃ’
মন্ত্রে দক্ষিণ ভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (১) ‘ওঁ
অগ্নয়ে স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির দক্ষিণনেত্রে ( যে স্থানে অগ্নি অল্পমাত্র
জ্বলছে) আহুতি দিবে ও দক্ষিণভাগে রক্ষিত কোন পাত্রে হুতশেষ রাখবে।
পরে ‘নমঃ’ মন্ত্রে বামভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (২)
‘ওঁ সোমায় স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির
বামনেত্রে আহুতি দিবে ও হুতশেষ পূর্বোক্ত পাত্রে রাখবে। হুতশেষ প্রতিবারই রাখবে।
এবার ‘নমঃ’ মন্ত্রে মধ্যভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে
(৩) ‘ওঁ অগ্নীষোমাভ্যাং স্বাহা’
মন্ত্রে অগ্নির ললাটনেত্রে আহুতি দিবে। পুনরায় দক্ষিণ ভাগ থেকে ‘নমঃ’ মন্ত্রে ঘৃত নিয়ে (৪) ‘ওঁ অগ্নয়ে স্বিষ্টিকৃতে স্বাহা’
মন্ত্রে অগ্নির মুখে (যে স্থানে অগ্নি অধিক জ্বলছে) আহুতি দিবে। প্রত্যেক আহুতির
পর হুতশেষ রাখতে হয়। মহাব্যাহৃতি হোম- ঘৃত দ্বারা এই চারটি মন্ত্রে আহুতি দিবে। (১) ওঁ ভূঃ স্বাহা, (২) ওঁ ভুবঃ স্বাহা, (৩) ওঁ
স্বঃ স্বাহা, (৪) ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ স্বাহা। তারপর ‘ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ
সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা’ মন্ত্রে তিনবার ঘৃতদ্বারা আহুতি দিবে। অতঃপর বীজমন্ত্রের সহিত ‘স্বাহা’ পদ যোগ করে (ওঁ ঐং
স্বাহা) ২৫ বার আহুতি দিবে এবং পরে আপনার সহিত অগ্নি ও দেবতার ঐক্য চিন্তা
করে ঐ (ওঁ ঐং স্বাহা) মন্ত্রে ১১
বার আহুতি দিবে।
সঙ্কল্প- তাম্রপাত্রে ( কুশীতে ) মূল ও অগ্রভাগের সহিত
তিনটি কুশ, তিল, তুলসী, হরিতকী, গন্ধ,
পুষ্প, আতপ চাল ও জল নিয়ে বীরাসনে (দক্ষিণ জানু পেতে ) পূর্বমুখী বসবে। বাম করতলে
কুশী স্থাপন করে দক্ষিণ করতল দ্বারা
আচ্ছাদনপূর্বক পাঠ করবেঃ
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য
মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ
শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ
(যজমানের গোত্র ও
নাম)] সরস্বতী প্রীতিকামঃ সরস্বতীপূজাকর্মণি ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাহা’ ইতি
মন্ত্রেণ অষ্টোত্তরশত (বা অষ্টাবিংশতি) সংখ্যক-সাজ্যবিল্বপত্রৈঃ হোমমহং করিষ্যে
(পরার্থে- করিষ্যামি )।
পরে হাতের পাত্রটি ঈশান কোণে উপুড় করে রেখে তার
উপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে আতপ চাল ছড়াবে এবং ঘণ্টা বাজাবে-
ওঁ যজ্জাগ্রতো
দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি।
দূরঙ্গমং জ্যোতিষাং
জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।
অতঃপর হবনীয় বিল্বপত্রে যথাযথভাবে অভ্যুক্ষণ ও
অর্চনা করে পূর্বোক্ত ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ
স্বাহা’ মন্ত্রে মৃগমুদ্রায় এক একটি সাজ্যবিল্বপত্র গ্রহণ করে আহুতি প্রদান
করবে।
তারপর (১)
‘ওঁ ঐং সরস্বতীদেব্যা অঙ্গদেবতাভ্যঃ স্বাহা’, (২) ‘ওঁ ঐং সরস্বতীদেব্যা
আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা’ মন্ত্রে এক একটি আহুতি দিবে। অতঃপর অন্যান্য
(গুরু-গণেশাদি) পূজিত দেবতার প্রত্যেককে এক একটি আহুতি প্রদান করবে।
পূর্ণাহুতি- পান ও কলা (বা
কোন বিহিত ফল) সহ ঘৃতপূর্ণ পাত্র (স্রুব) হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে
পূর্ণাহুতি দিবে- ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ
স্বাহা, ওঁ ইতঃপূর্বং প্রাণবুদ্ধিদেহধর্মাধিকারতো জাগ্রৎস্বপ্নসুষুপ্ত্যবস্থাসু
মনসা বাচা কর্মণা হস্তাভ্যাং পদ্ভ্যামুদরেণ শিশ্না যৎকৃতং যদুক্তং যৎস্মৃতং
তৎসর্বং ব্রহ্মার্পণং ভবতু স্বাহা, মাং মদীয়ঞ্চ সকলং সরস্বতীচরণে সমর্পয়ে’
বলে পাত্রের সকল ঘৃত প্রভৃতি অগ্নিতে দিয়ে মন্ত্র পাঠ করবে-
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। হরিঃ ওঁ তৎসৎ।
অগ্নিবিসর্জন- সংহারমুদ্রায়
দেবতাকে অগ্নি থেকে নিজ হৃদয়ে এনে ‘ক্ষমস্ব’
মন্ত্রে অগ্নি বিসর্জন করবে এবং
‘ওঁ অগ্নে ত্বং সমুদ্রং গচ্ছ’ মন্ত্রে অগ্নিকে দক্ষিণদিকে চালিত করবে। পরে ‘ওঁ পৃথ্বি ত্বং শীতলা ভব’ মন্ত্রে
অগ্নির ঈশান কোণে দধি বা দুগ্ধ (তদভাবে জল) নিক্ষেপ করে অগ্নি নির্বাপিত করবে।
পূর্ণপাত্র উৎসর্গ-- ‘বং এতস্মৈ পূর্ণপাত্রায় (অথবা পূর্ণপাত্রানুকল্পায়
ভোজ্যায়) নমঃ, ওঁ এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতৎসম্প্রদানায় ওঁ ব্রহ্মণে
নমঃ’ এইরূপে যথাবিধি অর্চনা
করে নিম্নোক্ত মন্ত্রে উৎসর্গ করবে-
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য
মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ
শ্রীঅমুকদেবশর্মা (পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ
(যজমানের গোত্র ও নাম ) ] কৃতৈতৎ সরস্বতীপূজাঙ্গীভূতহোমকর্মণঃ সাঙ্গতার্থং
ব্রহ্মদক্ষিণামিদং পূর্ণপাত্রং (অথবা পূর্ণপাত্রানুকল্পং ভোজ্যং) তস্মৈ
ব্রহ্মণেহহং সম্প্রদদে (অপরের জন্য হলে- সম্প্রদদানি) বলে জলবিন্দু প্রক্ষেপ করে উৎসর্গ করবে। এই্ সময়ে
নিম্নোক্ত মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশে দক্ষিণা দান করতে হবে।
দক্ষিণা-- রজতখণ্ড বা
স্বর্ণখণ্ড বা মুদ্রা (বা হরীতকী বা পুষ্প) কোন পাত্রে রেখে অর্চনা করবে। ‘বং এতস্মৈ কাঞ্চনমূল্যায় (রজতখণ্ডায় বা
মুদ্রকায়) নমঃ’ মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজলে প্রোক্ষণ (চিৎ হস্তে জলের ছিটা)
করবে। ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ
কাঞ্চনমূল্যায় (রজতখণ্ডায়) নমঃ’, মন্ত্রে দক্ষিণাদ্রব্যের উপর গন্ধপুষ্প
অর্পণ করবে। নিম্নোক্ত মন্ত্রে আবার গন্ধপুষ্পে পূজা করবে-
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে
এতৎসম্প্রদানায় ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ।
তারপর-
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে
পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য
অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ ( যজমানের গোত্র ও নাম ) ] সরস্বতী
প্রীতিকামনায়া কৃতৈতৎ সরস্বতীপূজাকর্মণঃ সাঙ্গতার্থং দক্ষিণামিদং কাঞ্চনমূল্যং
(রজতখণ্ডমর্চিতং) শ্রীবিষ্ণুদৈবতং সরস্বত্যৈ অহং সম্প্রদদে (অপরের জন্য হলে-
সম্প্রদদানি) বলে অর্ঘ্যজলবিন্দু
প্রক্ষেপ দ্বারা নিবেদনপূর্বক দেবতার উদ্দেশে প্রদান করবে। অতঃপর অচ্ছিদ্রাবধারণ ও
বৈগুণ্য সমাধান করবে।
অচ্ছিদ্রাবধারণ ও বৈগুণ্য সমাধান- প্রথমে করজোড়ে বলবে- ‘ওঁ কৃতৈতৎসরস্বতীপূজাকর্মাচ্ছিদ্রমস্তু’। পরে
দক্ষিণ হস্তে জল গণ্ডুষ নিয়ে বলবে-
‘ওঁ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে
ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে-
অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ ( যজমানের গোত্র ও নাম ) ]
কৃতেহস্মিন্ কর্মণি যদ্বৈগুণ্যং জাতং তদ্দোষপ্রশমনায় শ্রীবিষ্ণুস্মরণমহং করিষ্যে’
এবং ঐ জল সম্মুখস্থ জলপাত্রে ফেলবে। অনন্তর পাঠ করবে- ‘ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
পাঠান্তে ‘ওঁ বিষ্ণুঃ’ এই মন্ত্র
১০ বার জপ করবে। করজোড়ে পাঠ করবে-
‘ওঁ প্রীয়তাং পুণ্ডরীকাক্ষঃ সর্বযজ্ঞেশ্বরো হরিঃ।
তস্মিংস্তুষ্টে জগত্তুষ্টং প্রীণিতে প্রীণিতং জগৎ’।
তারপরে হাতে এক গণ্ডুষ
জল নিয়ে- ‘ওঁ এতৎ কর্ম
শ্রীরামকৃষ্ণার্পণমস্তু’ মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশে ত্যাগ করবে।
পরে দেবতাকে প্রণাম করবে
এবং স্রুবলগ্ন ভস্ম দ্বারা তিলক করবে।
মন্ত্র- ‘হ্রীং ক্লীং সর্বশান্তিকরো ভব’।
ক্ষমাপ্রার্থনা-
করজোড়ে বলবে-
ওঁ বিধিহীনং ক্রিয়াহীনং মন্ত্রহীনং যদর্চিতং
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা পরিপূর্ণং তদস্তু মে।
কর্মণা মনসা বাচা ত্বত্তো নান্যো গতির্মম
অন্তশ্চারেণ ভূতানাং দ্র্রষ্টা ত্বং পরমেশ্বর।।
অতঃপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে
সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে আত্মসমর্পণকরতঃ চরণামৃত পান করে প্রসাদ ধারণ করবে।
ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে
বীণারঞ্জিত পুস্তকহস্তে ভগবতি ভারতি দেবি নমোহস্তুতে।।
ওঁ সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।।
[যাঁরা পুষ্পাঞ্জলি দিতে
ইচ্ছুক এ পর্যায়ে তাঁরা পূর্বোক্ত রীতিতে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করবে।
পরে দেবীকে বিশ্রাম দিবে। বিকালে বৈকালীন দিতে হবে। সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি,
রাত্রিকালীনভোগ ও শয়ন দিতে হবে।]
পরবর্তীদিনের কর্ম
পরদিন সকালে সামান্যবিধি
অনুসারে (নৈবেদ্য দিয়েও করা ভাল) পঞ্চদেবতার পূজা ও বিশেষার্ঘ্য স্থাপন করে
দশোপচারে পূজা করে দইকড়মাদি (দধি, চিড়া ইত্যাদি) দ্রব্য নিবেদন করবে। যথা:- ‘বং
এতস্মৈ দধিকরম্ভায় নমঃ’ মন্ত্রে তিনবার প্রোক্ষণ ইত্যাদিরূপে (নৈবেদ্য নিবেদন রীতি
অনুযায়ী) অর্চনা ও নিবেদন করবে। পরে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে আরতি করবে ও দেবতার শরীরে
সকল আবরণ দেবতা বিলীন চিন্তা করে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে স্তব পাঠ করে শঙ্খজল নিয়ে
মন্ত্রপাঠ ও ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে দেবতাকে একবার বা তিনবার প্রদক্ষিণ করবে। পরে
আত্মসমর্পন করবে।
আত্মসমর্পন--- আসনে বসে হাতে জল নিয়ে
বলবে- ‘ওঁ ইতঃপূর্বং
প্রাণবুদ্ধিদেহধর্মাধিকারতো জাগ্রৎস্বপ্নসুষুপ্ত্যবস্থাসু মনসা বাচা কর্মণা
হস্তাভ্যাং পদ্ভ্যামুদরেণ শিশ্না যৎকৃতং যদুক্তং যৎস্মৃতং তৎসর্বং ব্রহ্মার্পণং
ভবতু স্বাহা, মাং মদীয়ঞ্চ সকলং শ্রীসরস্বতী-দেবতায়ৈ সমর্পয়ে (পরার্থে-
সমর্পয়ামি)।’ বলে দেবতার উদ্দেশে দিয়ে মন্ত্র পাঠ করবে-
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। হরিঃ ওঁ তৎসৎ’।
বিসর্জন-- ‘ওঁ সরস্বতি দেবি
ক্ষমস্ব’ মন্ত্রে ঘটে অর্ঘ্যজল
দিয়ে ঘট ও প্রতিমা সঞ্চালন করবে। সংহারমুদ্রায় ঘট থেকে নির্মাল্যপুষ্প নিয়ে তা
আঘ্রাণ করে দেবতা হৃদয়ে প্রবেশ করলেন মনে করবে ও
হস্ত প্রক্ষালন করে করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ উত্তরে শিখরে দেবি ভূম্যাং পর্বতমূর্ধনি ।
ব্রহ্মযোনিসমুৎপন্নে গচ্ছ দেবি মমান্তরম্।।
ওঁ গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং স্বস্থানং পরমেশ্বরি।
সংবৎসরব্যতীতে তু পুনরাগমনায় চ।।
অতঃপর ঈশানকোণে ত্রিকোণ
মণ্ডল করে তদুপরি ‘ওঁ নির্মাল্যবাসিন্যৈ
নমঃ’ মন্ত্রে কিঞ্চিৎ নির্মাল্য রাখবে। সবশেষে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করবে।
শান্তিজল- পুরোহিত
পঞ্চপল্লব বা কুশ দিয়ে শান্তিমন্ত্র পাঠ করে শান্তি জল দিবেন-
ওঁ ঋচং বাচং প্রপদ্যে মনো যজুঃ
প্রপদ্যে সামপ্রাণং প্রপদ্যে চক্ষুঃ শ্রোত্রং প্রপদ্যে।
বাগৌজঃ সহৌজ ময়ি, প্রাণাপানৌ ।। ১
ওঁ যন্মে ছিদ্রং চক্ষুষোঃ হৃদয়স্য ব্যতিতৃণ্নং,
বৃহস্পতির্মেতদ্দধাতু শংনো ভবতু ভূবনস্য যস্পতিঃ ।। ২
ওঁ স্বন্তি ন ইন্দ্রো
বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষো
অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।
ওঁ দৌঃ শান্তিঃ
অন্তরীক্ষং শান্তিঃ পৃথিবী শান্তিঃ
আপঃ শান্তিরোষধয়ঃ
শান্তিঃ। বনস্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বে দেবাঃ
শান্তির্ব্রহ্ম
শান্তিঃ সর্বং শান্তিঃ শান্তিরেব শান্তিঃ
সামা শান্তিরেধি।। ওঁ
শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।। ৩
সমাপ্ত
পরিশিষ্ট-১
শিবরাত্রি উপলক্ষে
পূজা
যথানিয়মে আচমনাদি থেকে আরম্ভ করে সাধারণ পূজা বা
বিশেষ পূজাক্রমে প্রতি প্রহরে বাণলিঙ্গে বা প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গাদিতে পূজা হয়ে থাকে।
কেবল চারি প্রহরে যথাক্রমে দুগ্ধ, দধি, ঘৃত ও মধু দ্বারা মহাদেবকে স্নান করাবার
পরে প্রতিবার গঙ্গাজল দ্বারা পুনরায় স্নানীয় দিতে হয় এবং প্রতি প্রহরে পৃথক পৃথক
অর্ঘ্য দিতে হয়। স্নানীয় ও অর্ঘ্যদানের বিশেষ বিশেষ মন্ত্রগুলি এখানে প্রহরক্রমে
প্রদত্ত হল।
প্রথম প্রহরে (স্নান মন্ত্র) --- ওঁ হৌঁ ঈশানায় নমঃ ইদং ক্ষীরস্নানীয়ং শিবায়
নমঃ । (গঙ্গাজল) ওঁ নমঃ শিবায় ইদং স্নানীয়ং শিবায় নমঃ ।
(অর্ঘ্যমন্ত্র)---ওঁ শিবরাত্রিব্রতং দেব পূজাজপপরায়ণঃ । করোমি বিধিবদ্দত্তং
গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বর ৼ ওঁ নমঃ শিবায় এষ অর্ঘ্যঃ শিবায় নমঃ মন্ত্রে নিবেদন করবে এবং যথারীতি অন্য উপচারাদি দান
করবে ।
দ্বিতীয় প্রহরে (স্নান মন্ত্র)---
ওঁ হৌঁ অঘোরায় নমঃ ইদং দধিস্নানীয়ং শিবায় নমঃ । পুনরায় গঙ্গাজল দ্বারা পূর্ববৎ স্নানীয় নিবেদন করবে।
(অর্ঘ্যমন্ত্র)--- ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্বপাপহরায় চ । শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং প্রসীদ উময়া সহ ৼ ওঁ নমঃ শিবায় এষ অর্ঘ্যঃ শিবায় নমঃ মন্ত্রে দান করবে ।
তৃতীয় প্রহরে (স্নান মন্ত্র)---
ওঁ হৌঁ বামদেবায় নমঃ ইদং আজ্যস্নানীয়ং শিবায় নমঃ । পুনরায় পূর্ববৎ গঙ্গাজল দ্বারা স্নান করাবে।
(অর্ঘ্যমন্ত্র)--- ওঁ দুঃখদারিদ্র্যশোকেন দগ্ধোহহং পার্বতীপ্রিয় । শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যমুমাকান্ত প্রসীদ মে ৼ পূর্ববৎ দান করবে
।
চতুর্থ প্রহরে (স্নান মন্ত্র)---
ওঁ হৌঁ সদ্যোজাতায় নমঃ ইদং মধুস্নানীয়ং
শিবায় নমঃ । পুনরায়
পূর্বের ন্যায় গঙ্গাজল স্নানীয় দিবে।
(অর্ঘ্যমন্ত্র)--- ওঁ ময়া কৃতান্যনেকানি পাপানি
হর শঙ্কর । শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যম্ উমাকান্ত গৃহাণ মে ৼ পূর্ববৎ দান করবে ।
প্রতি প্রহরে পূজান্তে জপ, বন্দনা ও স্তবাদি পাঠ
করে আত্মনিবেদন করবে ।
শ্রীশ্রীলক্ষ্মী পূজা
[যে কোন পূজার সময় পূজাপদ্ধতির ক্রমিক সংখ্যা
১নং থেকে ২৮নং পীঠন্যাস পর্যন্ত সকল কৃত্য করতে হয়। শ্রীশ্রীলক্ষ্মী পূজার মন্ত্রের বিশেষাংশ এখানে যথাসম্ভব
দেওয়া হল।]
পুণ্যাবাচনে—ওঁ
কর্তব্যেহস্মিন্ শ্রীনারায়ণ কুবেরসহিতশ্রীলক্ষ্মীদেবী পূজাকর্মণি ওঁ পুণ্যাহং
ভবন্তো ব্রুবন্তু ইত্যাদি ক্রমে ঋদ্ধ্যতাম্ পর্যন্ত বলতে হবে। (২য় পৃষ্ঠা
দ্রষ্টব্য)
সঙ্কল্প : বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য আশ্বিন মাসি কন্যা
রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লেপক্ষে পৌর্ণমাস্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রী অমুকদেবশর্মা
(এখানে পুরোহিতের গোত্র ও নাম বসবে) অমুক গোত্রায়াঃ অমুকী দেব্যাঃ বা দাস্যাঃ
(যজমান পত্নীর গোত্র ও নাম এখানে বলতে হবে) পরমবিভূতিলাভকামঃ বা শ্রীলক্ষ্মী
প্রীতিকামঃ শ্রীনারায়ণকুবেরাদিসহিত শ্রীলক্ষ্মীদেবী পূজা কর্মাহং করিষ্যে (পরার্থে
করিষ্যামি)।
পীঠপূজার বিশেষটুকু : ‘আধারশক্ত্যাদি থেকে
জ্ঞানাত্মনে’ পর্যন্তন্যাস করে হৃৎপদ্মের পূর্বাদি কেশরে যথাক্রমে ওঁ বিভূত্যৈ
নমঃ, ওঁ উন্নত্যৈ নমঃ, ওঁ কান্ত্যৈ নমঃ, ওঁ স্থয্যৈ নমঃ, ওঁ কীর্ত্যৈ নমঃ, ওঁ
সন্নত্যৈ নমঃ, ওঁ ব্যুষ্ট্যৈ নমঃ, ওঁ উৎকৃষ্ট্যৈ নমঃ, ওঁ ঋদ্ধ্যৈ নমঃ, মধ্যে
শ্রীকমলাসনায় নমঃ।
ঋষ্যাদিন্যাস : শ্রীং অস্য মন্ত্রস্য
ভৃগুঋষির্নিবৃৎছন্দঃ
শ্রীলক্ষ্মীর্দেবতা সর্বাভীষ্টসিদ্ধয়ে বিনিয়োগ।
তত্ত্বমুদ্রায় ন্যাস করবে যথা : শিরে—ভৃগুঋষয়ে নমঃ, মুখে—নিবৃচ্ছন্দসে
নমঃ, হৃদয়ে—শ্রিয়ৈ দেবতায়ৈ নমঃ। পরে করন্যাস ও অঙ্গন্যাসাদি করবে।
করন্যাস : শ্রাং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ, শ্রীং
তর্জনীভ্যাং স্বাহা, শ্রূং মধ্যমাভ্যাং
বষট্, শ্রৈং অনামিকাভ্যাং হূং, শ্রৌং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্, শ্রং করতলপৃষ্ঠাভ্যাং
অস্ত্রায় ফট্।
অঙ্গন্যাস : শ্রাং হৃদয়ায় নমঃ, শ্রীং শিরসে
স্বাহা, শ্রূং শিখায়ৈ বষট্, শ্রৈং কবচায়
হূং, শ্রৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্, শ্রং করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্।
ব্যাপকন্যাস : ওঁ শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ, এই
মন্ত্রে ৫ বার বা ৭ বার ব্যাপকন্যাস করবে।
ধ্যান :----ওঁ পাশাক্ষমালিকান্তোজ—সৃণিভির্যাম্যসৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনস্থাং
ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্ ।।
গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু ।।
মানসপূজা (৩৪ নং দেখ) ও বিশেষার্ঘ্য স্থাপন করে
পুনরায় ধ্যান করবে এবং ষোড়শোপচার বা দশোপচারে পূজা করবে। যদি প্রতিমায় পূজা হয়,
তবে এখানে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিধি সরস্বতী পূজা দেখ।
পূজার মন্ত্র : ওঁ শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।
লক্ষ্মীপূজার পর নারায়ণ, ইন্দ্র ও কুবের পূজা
(পঞ্চোপচারে) করবে।
লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টাবাদ্য ও ঝুমকাফুল প্রদান নিষিদ্ধ।
লক্ষ্মীপূজায় বিসর্জন করবে না।
নারায়নের ধ্যান ও প্রণাম ১৪
পৃষ্ঠায় দেখ।
ইন্দ্রের পূজা
ধ্যান :- ওঁ চতুর্দন্ত গজারূঢ়ো বজ্রপাণিঃ পুরন্দরঃ।
শচীপতিশ্চ ধ্যাতব্যো নানাভরণভূষিতঃ।।
পূজার মন্ত্র :- ওঁ ইন্দ্রায় নমঃ।
পুষ্পাঞ্জলি :- ওঁ বিচিত্রৈরাবতস্থায় ভাস্বৎ
কুলিশপাণয়ে।
পৌলম্যালিঙ্গিতাঙ্গায় সহস্রাক্ষায় তে নমঃ।।
প্রণাম :- ওঁ ইন্দ্রস্তু মহসা দীপ্তঃ সর্বদেবাধিপো
মহান্।
বজ্রহস্তো
মহাবাহুস্তস্মৈ নিত্যং নমো নমঃ।।
কুবের পূজা
ধ্যান :- ওঁ কুবেরং ধনদং খর্বং দ্বিভুজং পীতবাসসম্।
প্রসন্নবদনং দেবং যক্ষগুহ্যকসেবিতম্।।
পূজার মন্ত্র :- ওঁ শ্রীধনদায় কুবেরায় নমঃ।
প্রণাম :- ওঁ ধনদায় নমস্তুভ্যং নিধিপমাধিপায় চ ।
ভবন্তু
তৎপ্রসাদান্মে ধনধান্যাদি সম্পদঃ।।
লক্ষ্মীর স্তব
ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিতে দেবি কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
যথা ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভব ময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পৎ সৃষ্টিঃ শ্রীঃ পদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সংপূজ্য যঃ পঠেৎ।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেত্তস্য পুত্রদারাদিভিঃ সহ।।
(সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী ‘পুত্রদারাধিভিঃ’ স্থলে ‘শিষ্যৈশ্বর্যাদিভিঃ’
পাঠ করবেন।)
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র :-
ওঁ নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্ত্বদর্চনাৎ।।
এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ ওঁ
শ্রীলক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।
প্রণাম মন্ত্র :-
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মি নমোহস্তুতে।।
শ্রীশ্রীমনসা
পূজা
মনসাদেবীর
ধ্যান :
ওঁ দেবীমন্বামহিনাং শশধরবদনাং চারুকান্তিং বদন্যাং
হংসারূঢ়ামুদারাং সুললিতবসনাং সেবিতাং সিদ্ধিকামৈ।
স্মেরাস্যাং মণ্ডিতাঙ্গীং
কনকমণিগণৈর্নাগরত্নৈরনেকৈর্বন্দেহং
সাষ্টনাগামুরুকুচযুগলাং ভোগিনীং কামরূপাম্।।
অষ্টনাগ পূজা : যথা- ওঁ অনন্তায় নমঃ,
এইরূপে বাসুকয়ে, পদ্মায়, মহাপদ্মায়, তক্ষকায়, কর্কোটকায়, কুলীরায়, শঙ্খায়।
মনসাদেবীর পূজা মন্ত্র : ওঁ মাং মনসাদেব্যৈ নমঃ অথবা
ওঁ মনসাদেব্যৈ নমঃ।
প্রণাম মন্ত্র : ওঁ আস্তিকস্য মুনের্মাতা ভগিনী
বাসুকেস্তথা।
জরৎকারুমুনেঃ পত্নী মনসাদেবী নমোহস্তুতে।।
ওঁ আস্তিকমুনয়ে নমঃ, ওঁ জরৎকারুমুনয়ে নমঃ মন্ত্রে
এদেরও পূজা করবেন।
পরিশিষ্ট-২
প্রশস্ত পুষ্প : সূর্য পূজায় রক্তচন্দন,
জবাদিপুষ্প প্রশস্ত। শিবপূজায় ধুতুরা ফুল, আকন্দ ফুল ও বেলপাতা প্রশস্ত। বিষ্ণু,
শিব, গঙ্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী পূজায় এবং শ্রাদ্ধে সাদা রঙের ফুল প্রশস্ত। তুলসী
পাতা না হলে বিষ্ণু পূজা হয় না। বিষ্ণু পূজায় সমস্ত উপচারে তুলসী পাতা যুক্ত করে
নিবেদন করতে হয়। শক্তি পূজায় রক্তচন্দন, লাল রঙের ফুল ও বেল পাতা প্রশস্ত। শ্যামা
পূজায় যন্ত্রপুষ্প অর্থাৎ পদ্মফুল মুখস্বরূপ, রক্তজবা স্তনস্বরূপ, কৃষ্ণাপরাজিতা
যোনীস্বরূপ, রক্তকরবী লিঙ্গস্বরূপ এবং দ্রোণপুষ্প পাদুকাস্বরূপ প্রশস্ত।
নিষিদ্ধ পুষ্পাদি : পদ্ম
ছাড়া অন্যান্য লাল রঙের ফুল ও রক্তচন্দন বিষ্ণুপূজায় নিষিদ্ধ। আকন্দ ও ধুতুরা ফুল
শিব ছাড়া অন্য পূজায় নিষিদ্ধ। কুন্দ, নবমল্লিকা, যুথী, বকুল, কেতকী, রক্তজবা,
বন্ধুক, সন্ধ্যামালতি, কুঙ্কুম, শেফালী, কুমুদ,রক্তকরবী ও কাঠটগর শিবপূজায়
নিষিদ্ধ। পীতঝিণ্টি, শ্বতঝিণ্টি, টগর, শ্বেতজবা, দ্বিবিধ তুলসী, মন্দার, কহ্লার,
তমাল, কুশ ও কাশফুলে দেবী পূজা করবেন না। মনসা পূজায় ধুনা দিবেন না। কেবল অক্ষত
দ্বারা বিষ্ণুর, তুলসী দ্বারা গণেশের এবং বেল পাতা দিয়ে সূর্যের পূজা করবেন না।
দুর্বাকে পুষ্পের স্থলবর্তী করে তৎ দ্বারাদুর্গাপূজা করবেন না।
নিষিদ্ধ বাদ্য :
শিবমন্দিরে করতাল,সূর্যগৃহে শঙ্খ, দুর্গামণ্ডপে বাঁশি, ব্রহ্মাগারে ঢাক এবং
লক্ষ্মীগৃহে ঘণ্টা বাজাবেন না। অন্য বাদ্যের অভাব হলে কেবল ঘণ্টা বাদ্যেই সকল পূজা
হয়, কারণ ঘণ্টা সর্ববাদ্যময়ী।
প্রতিনিধি : রোগাদি কারণে নিজে কাজ করতে
অসমর্থ হলে পুত্র, জামাতা, সহোদর ভ্রাতা, ভাগিনেয়, গুরু বা পুরোহিতকে শুদ্ধ
অবস্থায় কার্যের ভার দিবেন। দৈবাৎ অশুচি হয়ে পড়লে গুরু বা পুরোহিত স্বয়ং প্রবৃত্ত
হয়ে সেই কার্য করতে পারেন। তা ছাড়া মধুর প্রতিনিধি গুড়, ঘৃতের তিলতৈল, কুশের কাশ
বা দুর্বা, সর্বদ্রব্যের যব, সর্বপুষ্পের দুর্বা কিংবা আতপ চাল, সকল উপচারের
প্রতিনিধি জল এবং সর্ববাদ্যের প্রতিনিধি ঘণ্টা।
উপচার নিবেদন বিধি : বামহস্তে বা একহস্তে কোন উপচার
দ্রব্য নিবেদন করতে নেই। বামহস্ত সংলগ্ন করে দক্ষিণ হস্তে নিবেদন করতে হয়।
আসন- রজতাদি নির্মিত ৮ অঙ্গুলি
দীর্ঘ ও ৮ অঙ্গুলি প্রশস্ত।
পাদ্য- শ্যামাঘাস, পদ্ম ও
অপরাজিতাযুক্ত জল অথবা কেবল জল।
অর্ঘ্য- গন্ধ, পুষ্প, আতপ
তণ্ডুল, যব, কুশের অগ্রভাগ, শ্বেতসর্ষপ, দূর্বা এবং তিল এ হচ্ছে অষ্টাঙ্গ অর্ঘ্য।
অন্যান্য দ্রব্যের অভাব হলে পুষ্প, চন্দন, আতপ তণ্ডুল, দূর্বা ও জল দ্বারা অর্ঘ্য
দেওয়া হয়। অর্ঘ্য দেবতার মস্তকে দিতে হয়।
আচমনীয়- জায়ফল, লবঙ্গসহ
জল, কিংবা কেবল জল মুখে দেয়।
বিশেষ মধুপর্ক- (শক্তি
পূজায় ব্যবহার্য) আড়াই পোয়া দুগ্ধাদি ধরে এরূপ কাঁসার বাটিতে দধি, দুগ্ধ, ঘৃত,
চিনি ও জল; সর্বাপেক্ষা অধিক পরিমিণে মধু এবং সর্বাপেক্ষা কম পরিমাণে জল, ঘৃত, দধি
ও চিনি সমভাবে দিবেন।
সাধারণ মধুপর্কে কাঁসার
পাত্রে দধি, মধু ও ঘৃত দিতে হয়।
স্নানীয়- কর্পূরাদি
গদ্ধদ্রব্য সুবাসিত জল অনুমান চার লিটার।
গন্ধ- কনিষ্ঠার অগ্রভাগে
নিয়ে অঙ্গুষ্ঠ সংযোগে
গন্ধ- কনিষ্ঠার অগ্রভাগে
নিয়ে অঙ্গুষ্ঠ সংযোগে ছিটিয়ে দিতে হয়। তান্ত্রিক পূজায় অনামিকা, মধ্যমা ও
অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগ দ্বারা গন্ধ দিতে হয়। দেবপূজায় চন্দন নিজে ব্যবহার করবেন না,
কারণ উহা উচ্ছিষ্ট হয়।
পুষ্প- যেভাবে উৎপন্ন হয়
ঠিক সেইভাবে অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দ্বারা দিতে হয়, কিন্তু একত্রে বহু পুষ্পদানে কোনও
নিয়ম নেই। বামহস্তে পুষ্প রেখে বা ছিঁড়ে সেই পুষ্প দিবেন না।
সমন্ত্রক নির্জল তুলসী
চিৎ করে এবং সজল বিল্বপত্র উপুড় করে দিবেন।
ধূপ দেবতার বামদিকে এবং
দীপ দক্ষিণদিকে দিবেন। ধূপ এবং দীপ ভূমিতে রাখতে নেই, কোন আধারে স্থাপন করবেন।
নৈবেদ্য দেবতার দক্ষিণে,
বামে ও সন্মুখে দিবেন, পৃষ্ঠে দিবেন না। ভোগ দোবতার বামে দেয়।
পঞ্চগব্য : গোময়,
গোমূত্র, গোদুগ্ধ, গব্যদধি, গব্যঘৃত----মন্ত্র পড়ে এতে কুশোদক দিবেন।
পঞ্চগব্য পরিমাণ—স্মার্তমতে, গোময়ের দ্বিগুণ গোমূত্র, চতুর্গুণ ঘৃত ও দধি এবং অষ্টগুণ দুগ্ধ
প্রদান করবেন।
যজুর্বেদীয় পঞ্চগব্য শোধনমন্ত্র---
১) গোমূত্র—গায়ত্রী পাঠ করে।
২) গোময়—ওঁ গন্ধদ্বারাং দুরাধর্ষাং নিত্যপুষ্টাং করীষিণীম্ । ঈশ্বরীং সর্বভূতানাং
ত্বামিহোপ হ্বয়ে শ্রিয়ম্ ৼ
৩) দুগ্ধ--- ওঁ আ
প্যায়স্ব সমেতু তে বিশ্বতঃ সোমবৃষ্ণ্যং । ভবা বাজস্য সঙ্গথে ৼ
৪) দধি--- ওঁ
দধিক্রাব্নো অকারিষং জিষ্ণোরশ্বস্য বাজিনঃ । সুরভি নো মুখা করৎ প্র ণ আয়ুংষি
তারিষৎ ৼ
৫) ঘৃত--- ওঁ তেজোহসি
শুক্রমস্যমৃতমসি ধামনামাসি । প্রিয়ং দেবানামনাধৃষ্টং দেবযজনমসি ৼ
৬) কুশোদক--- ওঁ
দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেহশ্বিণোর্বাহুভ্যাং পুষ্ণো হস্তাভ্যামাদদে ৼ
সামবেদীয় পঞ্চগব্য
শোধন মন্ত্র---
১) গোমূত্র—গায়ত্রী পাঠ করে ।
২) গোময়—ওঁ গাবশ্চিদ্ঘা সমন্যবঃসজাত্যেন মরুতঃ সবন্ধবঃ । রিহতে ককুভো মিথঃ।
৩) দুগ্ধ--- ওঁ গব্যো
ষু ণো যথা পুরাশ্বয়োত রথয়া। বরিবস্যা মহোনাম্।
৪) দধি--- ওঁ
দধিক্রাব্নো অকারিষং জিষ্ণোরশ্বস্য বাজিনঃ । সুরভি নো মুখা করৎ প্র ণ আয়ুংষি
তারিষৎ ৼ
৫) ঘৃত--- ওঁ ঘৃতবতী
ভুবনানামভিশ্রিয়োবর্বী পৃথ্বী মধুদুঘে সুপেশসা। দ্যাবাপৃথিবী বরুণস্য ধর্ম্মণা
বিষ্কভিতে অজরে ভূরিরেতসা ৼ
৬) কুশোদক--- ওঁ দ্যৌরাপঃ
কণিক্রদং সিন্ধোরাপো মরুতো মাদয়ন্তাং ঘর্ম্মজ্যোতিঃ ৼ
সমস্ত একত্রে মিশিয়ে
গায়ত্রী পাঠ করবে।
পঞ্চামৃত : দধি,
দুগ্ধ, ঘৃত, শর্করা ও মধু ।
ত্রিবেদীয় পঞ্চামৃত
শোধন মন্ত্র---
যে যে বেদোক্ত
পঞ্চগব্য শোধনে দধি, দুগ্ধ, ঘৃত প্রভৃতির শোধনমন্ত্র উল্লেখ করা হয়েছে, পঞ্চামৃত
শোধনেও সেই সেই মন্ত্র প্রয়োগ হবে। কুশোদক শোধনের মন্ত্রে শর্করা শোধন করবে।
(৫) মধু--- ওঁ মধু
বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ মাধ্বীর্ণঃ সন্ত্বোষধীঃ ৼ
ওঁ মধু নক্তমুতোষসি মধুমৎ পার্থিবং
রজঃ ।
মধু দ্যৌরস্তু নঃ পিতা ৼ
ওঁ মধুমান্নো বনস্পতির্মধুমাং
অস্তু সূর্য্যঃ মাধ্বীর্গাবো ভবন্তু নঃ ৼ
ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু ৼ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন