সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

প্রাথমিক প্রতিবিধানের নিমিত্ত রোগী বহন

রোগী বহন
রোগী বহন :  রোগীকে স্থানান্তরিত করা বা বহন করা প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সুতরাং, প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীকে অবশ্যই রোগী বহন পদ্ধতি জানতে হয়। প্রাথমিক প্রতিবিধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অসুবিধাজনক ব্যাপার হলো কোথায়, কি অবস্থায় কি ধরণের রোগী পাওয়া যাবে আর হাতের কাছে কি ধরণের বাহন ব্যবস্থা থাকবে তা কেউ বলতে পারে না। তাই একজন প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী স্কাউটকে হতে হবে অত্যন্ত দক্ষ। অবস্থার নিরীখেই তাকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আঘাতের ধরণ বা রোগীর অবস্থা আঘাতের গুরুত্ব, কতজন নির্ভর যোগ্য সাহায্যকারী পাওয়া যাবে, ঘটনাস্থল থেকে যেখানে স্থানান্তরিত করা হবে তার দুরত্ব, পথের অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বহন পদ্ধতি নিরুপন করতে হবে। নিম্নে রোগী বহনের সহজ এবং সাধারণ কয়েকটি নিয়ম বা পদ্ধতি দেয়া হলো।

১। ক্রেডল (Cradle) বা পাঁজা কোলা :
অল্প বয়স্ক শিশুর ক্ষেত্রে যদি সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয় সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি  ব্যবহার ব্যবহার করা যেতে পারে। এক হাত রোগীর দুই উরুর নীচে রেখে এবং অন্য হাত দিয়ে তার ফিঠে জড়িয়ে ধরে উঠিয়ে পাতা কোলা করে বহন করতে হয়।

২।  হিউম্যান ক্রাচ (Human Cratch) :
রোগীর আহত পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে এক হাতে রোগীর কোমর পেচিয়ে ধরতে হবে এবং রোগীর হাত ঘাড়ের উপ দিয়ে ঘুরিয়ে বুকের উপর এনে নিজের  খালি হাত দিয়ে ভাল করে তার কব্জিতে ধরতে হবে। এভাবে রোগী তার দেহের অর্ধেক তার নিজের সুস্থ পার্শেব এবং আহত পাশের অর্ধেক ভার বহনকারীর ওপর দিয়ে অগ্রসর হতে পারবে।
৩। পিক এ ব্যাক   (Pick-a-Back ) :
 রোগী যদি অচৈতন্য অবস্থায় না থাকে তাহলে তাকে পিঠে করে বহন করতে পার। এক্ষেত্রে রোগী বহনকারীকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে থাকবে। বহনকারী দু’হাতে রোগীর দুই উরু জড়িয়ে ধরে থাকবে।

৪। ফায়ার ম্যান্স লিফট এন্ড ক্যারী ( Fire Men’s lift and Carry ) :


রোগী যখন অচৈতন্য অবস্থায় থাকে এবং অনায়াসে তুলে নেয়া যায় এ ক্ষেত্রে রোগীকে টেনে দাড় করিয়ে রোগীর ডান হাতের কব্জি তোমার বাম হাত দিয়ে ধর  এবং রোগীর তলপেটে তোমার ডান কাঁধের উপর স্থাপন কর আর তার ছড়ানো বাহুর মাঝ দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে ডান হাত দিয়ে রোগীর পা জড়িয়ে ধরে  এবার সোজা দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে রোগীর ডান হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে অগ্রসর হতে হয়।

৫। দুই হাতের আসন (Hook Grip) : 
                               
যদি দেখা যায় যে, রোগী তার হাত দিয়ে বাহককে ধরতে পারছে না
সেক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীর দুই পাশে দু’জন বাহক পরস্পর মুখোমুখি হয়ে পায়ের পাতায় ভর করে বসবে। এক হাত দিয়ে রোগীর কাধের একটু নীচ দিয়ে উভয়েই জড়িয়ে ধরতে হবে অথবা প্যান্ট পরা থাকলে কোমরের বেল্ট শক্ত করে ধরতে হবে। তারপর রোগীর উরুর মধ্যভাগের বরাবর নিচ দিয়ে অপর হাত প্রবেশ করাতে হবে। রোগীর বাম পাশে অবস্থানকারী তার হাত চিৎ করে রাখবে আর ডান পার্শ্বের বাহক অপর জনের হাতের উপর হাত উপুড় করে রাখবে। এরপর উভয়ে এক সাথে হাত মুষ্টিবদ্ধ করবে। এবার উভয় বাহক এক সাথে দাঁড়াবে এবং অগ্রসর হবে।
৬। তিন হাতের আসন (Three Hand Grip) :  রোগী তার উভয় বাহু বা এক হাত দিয়ে যখন বহনকারীদের সাহায্য করতে পারে তখন এই পদ্ধতিতে রোগী বহন করা হয়। বহনকারীদ্বয় রোগীর পিছনে মুখোমুখী দাড়াবে এবং একজন তার নিজের ডান হাত দিয়ে নিজের বামহাত শক্ত করে ধরবে। অন্যজন ডান হাত দিয়ে তার ডান হাতের কব্জি ধরবে। প্রথম ব্যক্তি অন্য বাহকের কব্জি ধরবে। যে বাহকের হাত খালি সে রোগীর আহত পা  ধরবে।
৭। চার হাতের আসন (Four Hand Grip)
 দুইজন বহনকারীর ক্ষেত্রে রোগী তার দুই বাহু এমনকি এক বাহু দিয়েও যদি বহনকারীকে ধরে রাখতে পারে কেবল সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। যে দুই জন বাহকের কাজ করবে তারা প্রথমে পরস্পর মুখো-মুখি দাঁড়িয়ে নিজেদের   ডানহাত দিয়ে বাম হাতে কব্জি ধরবে। তারপর বাম হাত দিয়ে পরস্পরে ডান হাতের কব্জি ধরবে দেখবে এতে সুন্দর চৌকোণা একটি আসন তৈরী হয়েছে। এবার আসনটির ওপর রোগীকে বসিয়ে এবং রোগীর দুহাত দিয়ে দুই বাহকের কাঁধ জড়িয়ে ধরবে। এভাবে আসনে বসিয়ে অনায়াসে রোগীকে  স্থানান্তরিত করা যায়।

৮। দ্যা ফোর এন্ড এফট মেথড (The Four and Aft Method) :  রোগীকে হাতের আসনে বসাতে অসুবিধা পরিলক্ষিত হলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। রোগীর দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে পায়ের দিকে মুখ করে একজন  বাহক  দাঁড়াবে।  অপর বাহক রোগীর  পিছনে দাঁড়িয়ে তার বগলের নিচ দিয়ে ধরবে। প্রথম বাহ এবার রোগীর হাটুর নীচ দিয়ে বাইরের দিক থেকে জড়িয়ে ধরবে এবং উভয়ে এক সাথে রোগীকে ওঠাবে। এক্ষেত্রে উভয় বাহককে একসাথে চলতে হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন