ইশারা ভাষায় ফিংগারস্পেলিং শিখন-শেখানো কৌশল
আমাদের দেশের কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রবণ ও বাক
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার কথা নয় কারণ এ ধরনের শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো
কার্যাবলির উপর আমাদের দেশের শিক্ষকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। শিক্ষকদের কোন
প্রশিক্ষণ না থাকলেও স্থানীয় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী
শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে পাঠদানও করা হয়।
শ্রবণ ক্ষমতা না থাকায় এসব শিশু কোন কিছু শোনে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না এবং তার
কোন উপলব্ধিই মৌখিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না তারপরও এই শিশুগণ ব্যক্তিগত কলা-কৌশল
প্রয়োগ করে তাদের সাধ্যমত শিখে এবং অঙ্গভঙ্গি করে ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে পারে
কিংবা লিখে
প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু ইশারা ভাষায় যোগাযোগের উপর শিক্ষকের
প্রশিক্ষণ থাকলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রমিত ইশারা ভাষায় যোগাযোগ করতে পারতেন এবং
শিক্ষার্থীর শিখন সহজ সাধ্য হত; শিক্ষার্থীর প্রকাশ বা প্রয়োগ কৌশলও হত সাবলীল।
বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত এ ধরনের শিশুদের শিখন-শেখানো কাজে যাতে কিছুটা সহায়তা করা যায়
কিংবা সচেতন কোন অভিভাবক যাতে শিশুটির শিখনে কিছুটা সাহায্য করতে পারেন তাই
এক্ষেত্রে ব্রিটিশ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (বিএসএল) অনুসরণে ফিংগারস্পেলিং আয়ত্ত করার কলা-কৌশল
সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
১. শিক্ষার্থী-শিক্ষক মুখোমুখি থাকবেন
যাতে ইশারা দেখতে ও ওষ্ঠ-পঠনে কারো অসুবিধা না হয়। তারপর শিক্ষক বর্ণ/শব্দাংশ মৌখিক উচ্চারণসহ
ইশারায় প্রকাশ করবেন।
২. শিক্ষার্থীকে প্রথমে A, E, I, O, U পরে U, O, I, E, A তারপরে M,
N, L/ L, M, N এর ইশারা অনুশীলন করাতে হবে।
এই আটটি বর্ণের ইশারা রপ্ত করানোর পরে H এর ক্ষেত্রে এক হাতের তালু ঘসে আঙুলের অগ্রভাগের দিকে আরেক হাতের আঙুলগুলো
নিয়ে H র ইশারা দেখানো যেতে পারে। আবার
চিত্রের ন্যায় মধ্যমার অগ্রভাগ থেকে অপর হাতের তর্জনী হাতের তালুতে ঘসে এনে J এর ইশারাও এবারেই শেখানো যেতে পারে।
তারপর শিক্ষার্থীদের
ধারাবাহিকভাবে A থেকে Z পর্যন্ত ২৬টি বর্ণ অনুশীলন করাতে হবে।
৩. প্রতিটি বর্ণের ইশারা অনুশীলনের সময় শিক্ষার্থীর সম্মুখে
বর্ণ দ্বারা গঠিত শব্দের বস্তু/বস্তুর মডেল/বস্তুর ছবির সংগে লেখা শব্দটিতে বর্ণটি উজ্জ্বল রঙে দেখানো এর সাথে পৃথকভাবে
বড় ও ছোট হাতের লেখা বর্ণ যেমন-
A a দেখানো আবশ্যক। ইশারায় মাধ্যমে প্রতিটি বর্ণ আয়ত্ত করার পরে শিশু লেখার কৌশল অনুসরণ করে বর্ণ
লেখা শিখবে। এক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক
English For Today অনুসরণ করা যেতে পারে।
4. ইশারায় বর্ণমালা আয়ত্ত করার পরে শিশুকে তার পরিচিত সকল বস্তু বা ব্যক্তির
নাম পূর্বের ন্যায় বাস্তব বস্তু/মডেল বা ছবির সাথে মিল করে
ফিংগারস্পেলিং শেখাতে হবে। ফিংগারস্পেলিং রপ্ত
করার পরে নামগুলো খাতায় লিখবে।
৫. ইংরেজি বর্ণমালায় বাংলা শেখানোর জন্য ফিংগারস্পেলিং এর সাথে
সাথে কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। তারপর বাংলা অক্ষরে দৃশ্যমান শব্দটি খাতায় লিখে লেখার অনুশীলন করতে হবে। বাংলা অনুশীলনের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক এবং প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ অনুসরণ করা যেতে পারে কারণ এ দুটি
পুস্তকেই ছবিসহ শব্দ ও বর্ণ দেওয়া আছে।
প্রতিনিয়ত
ক্রমাগত অনুশীলনের ফলে এক পর্যায়ে দেখা যাবে যে, শিশু এলোমেলোভাবে শব্দ ব্যবহার করে মনের ভাব প্রকাশ করছে, সম্পূর্ণ বাক্য প্রকাশ করতে পারছে না তখন ইশারা ভাষা ব্যবহার করে শিশুকে
বুঝাতে হবে। এভাবে ক্রমান্বয়ে শিশুর কল্পনা, চিন্তন ও ভাষার বিকাশ ঘটাতে হবে। মনে রাখতে হবে- নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার
মাধ্যমেই শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীসহ সকল শিশুরই ভাষার বিকাশ ঘটে এবং শিশুর ভাষার বিকাশ
ধীরে ধীরে পূর্ণতা লাভ করে।
-নির্মল চন্দ্র শর্মা, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, পিটিআই, কিশোরগঞ্জ।
Good idea
উত্তরমুছুন