বাংলা ইশারা ভাষায় ফিংগারস্পেলিং
শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আজও আমাদের সমাজে একটি
আলাদা সত্ত্বা নিয়ে বসবাস করছে। এর প্রধান কারণ যোগাযোগের
প্রক্রিয়াগত সমস্যা। আমাদের সমাজে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী
মানুষের সাথে যোগাযোগের সুযোগ নেই বলেই তারা সাধারণ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। এ ধরনের ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ইশারা ভাষা। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় কিংবা ভাষা শিক্ষার আগেই শৈশবে কিংবা পরবর্তী কোন
সময়ে কোন কারণে যাদের শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, তাদের শ্রবণ ও মৌখিক ভাব
বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ইশারার মাধ্যমে শব্দ বা বাক্যাংশ কিংবা আঙুলের সাহায্যে
বর্ণ প্রদর্শন করার নামই আন্তর্জাতিকভাবে ইশারা ভাষা হিসেবে পরিচিত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে পৃথক পৃথক ইশারা ভাষা এবং
রাষ্ট্রীয়ভাবে এর আইনি স্বীকৃতিও রয়েছে। বিশ্বে সর্বপ্রথমে উগান্ডা ১৯৯৫ সালে
তাদের ইশারা ভাষাকে আইনি স্বীকৃতি দেয়। আমাদের দেশে ইশারাভাষীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম একুশে বইমেলার উদ্বোধনী
বক্তৃতায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলা ইশারা ভাষা চালুর ঘোষণা দেন এবং মানুষের
তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে বিটিভিসহ সব টেলিভিশন সংবাদে ইশারা ভাষা চালুর
নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ে
অগ্রভাগে থাকা সংগঠন এসডিএসএলের নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং সরকারের সদিচ্ছায় ২০১২ সাল
থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।
ইশারা ভাষা
মূলত যোগাযোগের এমন একটি মাধ্যম যেখানে আকার-ইঙ্গিত, হাতের ব্যবহার, ফিংগারস্পেলিং
(Fingerspelling) বা আঙুলে বর্ণ প্রদর্শন, ওষ্ঠ পঠন (Lip-reading), মৌখিক অভিব্যক্তি, সর্বোপরি মৌখিক ভাষা ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এই সব ক’টি বিষয়ই কখনও কখনও সমন্বিতভাবে
ইশারা ভাষার সফল যোগাযোগে সহায়তা করে থাকে। বলা আবশ্যক যে, পৃথিবীর অনেক দেশে ইশারা ভাষায় যোগাযোগ
করে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের মূলস্রোতঃধারায় সার্থকভাবে একীভূত
হতে সক্ষম হয়েছে।
আজ এক্ষেত্রে শুধু ফিংগারস্পেলিং সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে। ফিংগারস্পেলিং বা আঙুলে বর্ণ প্রদর্শন হচ্ছে- হস্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শব্দ বানান করার একটি পদ্ধতি। সাধারণত কোন ব্যক্তি বা স্থানের নামের ক্ষেত্রে ইশারা ভাষায় এ পদ্ধতি ব্যবহার
করা হয়। আবার ইশারা ভাষা ব্যবহারকারী কোন ব্যক্তির যদি কোন শব্দের
ইশারা সংকেত জানা না থাকে কিংবা তার যদি ঐ শব্দের সংকেতটি স্মরণে না আসে তখন তিনি ফিংগার
স্পেলিং ব্যবহার করে থাকেন। কোন শব্দের ইশারার
স্পষ্টীকরণের জন্যও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ইশারা ভাষা রয়েছে এবং তারা
দুই হাতেই ফিংগারস্পেলিং করে থাকে। যেমন- বৃটিশ সাইন লেঙ্গুয়েজ (বিএসএল)
দুই হাতেই বর্ণমালা প্রদর্শন করে থাকে তবে আমেরিকান সাইন লেঙ্গুয়েজ
(এএসএল) এ এক হাতেই বর্ণমালা প্রদর্শিত হয়। উল্লেখ্য যে ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশ সাইন লেঙ্গুয়েজ (বিএসএল) অনুসরণ করা হয়। বাংলা ইশারা ভাষারও বর্ণমালা রয়েছে আবার বৃটিশ ইশারা ভাষা অনুসরণ করে রোমান
বা ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করেও বাংলা শেখানো যায়। এই পদ্ধতিই
ভারতবর্ষে বেশি ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে Avro Phonetic (English to Bangla) টুল বার ব্যবহার করে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুকে সহজেই বাংলা
শেখানো যেতে পারে। আবার বাংলা ইশারা বর্ণমালা ব্যবহার
করে বিজয় কী বোর্ড দিয়েও বাংলা শেখানো যেতে পারে। মনের ভাব
লিখে প্রকাশের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি এবং ফিংগারস্পেলিং এর যথাযথ ব্যবহার অত্যাবশ্যক। ইশারা ভাষার বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা নিম্নে প্রদান করা হলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন