শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ
আশ্রম, সুনামগঞ্জ -এ রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা আয়োজনের একটি প্রস্তাবনা।
# ভূমিকা :
বৈদিকধর্ম বা সনাতনধর্ম তথা হিন্দুধর্ম প্রাচীনতম একটি ধর্ম। এই ধর্ম প্রাগৈতিহাসিক
কালে আবির্ভূত হয়ে বর্তমান কাল অবধি প্রচলিত রয়েছে। এটি বিভিন্ন সময়ে প্রচণ্ড
আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে; বাধাগ্রস্ত হয়েছে; তবুও লুপ্ত হয়নি, নিজ মহতী
শক্তিগুণে স্বমহিমায় আজও টিকে আছে। তা থেকে উদ্ভূত হয়েছে জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম,
বৈষ্ণবধর্ম, শিখধর্মসহ বহু মত ও পথ, সম্প্রদায়ের পর সম্প্রদায়। সাময়িক বাধাগ্রস্ত
হয়েছে ঠিকই কিন্তু থেমে থাকেনি, বরং দুনিয়ার তাবৎ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করে
সকল মত, পথ ও সম্প্রদায়কে সর্বোতভাবে আত্মসাৎ করে নিজের বিরাট দেহ পুষ্ট থেকে
পুষ্টতর করেছে।
স্বামী বিবেকানন্দের কথায়, “সর্বোৎকৃষ্ট বেদান্তজ্ঞান হইতে
নিম্নস্তরের মূর্তিপূজা ও আনুষঙ্গিক নানাবিধ পৌরাণিক গল্প পর্যন্ত সবকিছুরই, এমনকি
বৌদ্ধদের অজ্ঞেয়বাদ, জৈনদের নিরীশ্বরবাদ—এগুলিরও স্থান
হিন্দুধর্মে আছে”। হিন্দুধর্ম মানুষের
মঙ্গল এবং জীব ও জগতের কল্যাণে নিবেদিত। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরে বিশ্বাস, আত্মমুক্তি ও
জগতের হিতসাধন হিন্দুধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য। হিন্দুধর্মের এসব বৈশিষ্ট্য স্মরণ রেখে এবং ধর্মের প্রতি অনুগত থেকে হিন্দু নর-নারীগণ
সকলের হিতে ব্রতী হন। ধর্ম মানুষের চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটিয়ে পরিপূর্ণতা আনয়ন করে,
মানুষকে পৈশাচিক চিন্তারাজ্য থেকে বের করে নিয়ে এসে মানবিকতা অর্জনে সহায়তা করে। আবার মানবিকতার ঊর্ধ্বে দেবত্বে উন্নীত হতেও
সহায়তা করে ধর্ম।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি
পর্যন্ত ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ফলে দেশের
হিন্দু শিক্ষার্থীগণ আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
এ ছাড়া হিন্দু শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা লাভের আরও কোন সুযোগ আছে বলে আমার জানা
নেই। ফলে তরুণ শিক্ষার্থীদের মনে ধর্ম
সম্পর্কে কোন প্রশ্নের উদ্রেগ হলে কিংবা ধর্মের কোন বিষয় সম্পর্কে তার মনে কৌতূহল
জাগলে বা ধর্মীয় কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করতে চাইলে সে আর কোন সুযোগ পাচ্ছে না। আবার
ধর্মীয় কোন বিষয়ের উপর মুক্ত আলোচনা বা পর্যালোচনার কোন সুযোগ তারা কোথাও পাচ্ছে
না। সীমিত পরিসরে হলেও শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, সুনামগঞ্জ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে আর তরুণ-তরুণীরা এক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার
যথাযথ প্রয়োগ ও বিকাশ ঘটাতে পারে। এই কার্যক্রমের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন
করতে পারে ‘বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, সুনামগঞ্জ’। বিশেষ কোন তিথি উপলক্ষে
কিংবা আশ্রমে উদযাপিত কোন না কোন অনুষ্ঠানকালে তারা (‘বিবেকানন্দ শিক্ষা ও
সংস্কৃতি পরিষদ, সুনামগঞ্জ’) রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করতে পারে। এই রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে
অংশগ্রহণ করবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা এই বয়সের তরুণ-তরুণী।
আবারও বলি পুরো কার্য়ক্রমের নেতৃত্ব, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় থাকবে ‘বিবেকানন্দ
শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, সুনামগঞ্জ’।
পরবর্তীতে কয়েকটি প্রতিযোগিতার বাছাইকৃত
আর্টিক্যাল নিয়ে সংকলন/স্মরণিকা প্রকাশ করা যেতে পারে।
# উদ্দেশ্য
: এই কার্যক্রম শেষে-
(১) বিষয়বস্তু
বিশ্লেষণপূর্বক অনুধাবন করে উদার ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া;
(২) ধর্মীয়
বিষয়বস্তু অবলম্বনে প্রবন্ধ লিখতে পারা এবং
(৩) ধর্মীয়
বিষয়বস্তু/ অবতার ও মহাপুরুষদের নিয়ে গঠনমূলক বক্তৃতা করতে পারা।
# যৌক্তিকতা
: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে তথ্য আজ হাতের মুঠোয়। দিবা-রাত্র
বিভিন্ন টেলিভিশন সম্প্রচার করছে নানান তথ্য, ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যাচ্ছে রাশি
রাশি তত্ত্ব ও তথ্য কিন্তু এসব তত্ত্ব ও তথ্য কতটুকু যথাযথ তা নিরূপন করার
সামর্থ্য কত জনের রয়েছে। তা আবার Share করার মত কোন
সংগঠনও নেই। জানার সুযোগ না পেয়ে বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে তরুণ-তরুণীরা সন্দেহের
দোলায় দোলছে। নিজ ধর্ম-দর্শনের প্রকৃত তাৎপর্য না জেনে না বুঝে অনেকেই সন্দিগ্ধ
কিংবা নাস্তিক ভাবধারায় বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। আমাদের সমাজে ধর্ম ও দর্শন
চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা লোপ পাওয়ায় এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
তাই ধর্মীয় বিষয়বস্তুর উপর রচনা লেখা এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা উপকৃত হবে। ধর্মীয় তত্ত্ব ও
তথ্যের যথাযথ জ্ঞানসঞ্চালন (Sharing), বিশ্লেষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সংকীর্ণতা কাটিয়ে উঠবে।
নিজ ধর্ম-দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। নিজের চিন্তা ও চেতনার সম্প্রসারণ ঘটাবে।
সীমিত পরিসরে হলেও নিজের ধর্ম ও দর্শন চর্চার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা
আবশ্যক।
# কর্মপদ্ধতি
: শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম, সুনামগঞ্জ সারা বছরই বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করে
থাকে। যেমন- ঠাকুর, মা, স্বামীজীর তিথিপূজা, দুর্গাপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা প্রভৃতি।
এছাড়া অন্য যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান/তিথি যেমন- জন্মাষ্টমী, কালীপূজা, সরস্বতীপূজা,
বারুণীস্নান, দোলপূর্ণিমা প্রভৃতি উপলক্ষেও রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের
ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
# রচনা
প্রতিযোগিতায় কর্তৃপক্ষের করণীয় :
(১) আহ্বায়ক
কমিটি (বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ) কর্তৃক প্রতি সেপ্টেম্বর মাসে পরবর্তী
বছরের (জানুয়রি—ডিসেম্বর) রচনা
লেখার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে আশ্রম পরিচালনা কমিটি কর্তৃক অনুমোদন করানো। (২) লেখকদের
সাথে মত বিনিময় ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য পরামর্শক টিম গঠন করা।
(৩) লেখা
আহ্বান করা। আলোচনা অনুষ্ঠানের একমাস পূর্বে লেখকদের থেকে লেখা সংগ্রহ করা। আলোচনা
অনুষ্ঠানের তিনমাস পূর্বে লেখা আহ্বান করা যেন লেখকগণ দুইমাস সময় পায়। এ সময়ের
প্রথম মাসের প্র্রথমার্ধের কোন সুবিধাজনক দিনে পরামর্শকদের সাথে (প্রয়োজনে) মত
বিনিময় সভায় মিলিত হওয়া। এ ক্ষেত্রে রচনা লেখার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও
সহায়তা পাওয়া যাবে।
(৪) নির্ধারিত
তারিখে লেখা সংগ্রহ করে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে এর পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে
হবে। প্রথম স্থান অধিকারী, প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে অনুষ্ঠানে থাকবে। আলোচক
প্রাপ্তির লক্ষে তার রচনাটি কপি করে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকারীর নিকট
পর্যালোচনা এবং আরও সংযোজনের জন্য পাঠাতে হবে। তারা রচনাটি পর্যালোচনা করে ১৫
দিনের মধ্যে আহ্বায়কের নিকট পাঠাবে। আহ্বায়ক, একটি কমিটির মাধ্যমে এই লেখাগুলো
মূল্যায়ন করিয়ে কমিটির সুপারিশক্রমে এদের আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ
জানাবে।
(৫) লেখা
আহ্বানের পূর্বেই কখন কোন্ কাজ কার দ্বারা সম্পাদন করা হবে তা নির্ধারণপূর্বক
কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে কমিটির সভায় আহ্বায়ক কর্তৃক তা অনুমোদন করে নিতে হবে।
# আলোচনা
সভার জন্য করণীয় :
১) উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য অনুষ্ঠান শেষে প্রবন্ধ
উপস্থাপক ও আলোচকদের উপহার হিসেবে ধর্মীয় বই দেয়া যেতে পারে।
২)
অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনার জন্য বক্তব্য/ আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন
করা। এ জন্য শিল্পী ও সংগীত কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে বাছাই করে অনুষ্ঠানসূচিতে
অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতি,
প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, প্রবন্ধ উপস্থাপক (প্রথম স্থান অধিকারী) এবং আলোচক
(২য়, ৩য় এবং ৪র্থ স্থান অধিকারী) থাকবে।
৩) আলোচ্য
প্রবন্ধটির ফটোকপি শ্রোতৃমণ্ডলীতে বিতরণ করতে হবে এবং আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষ
পর্যায়ে দর্শক-শ্রোতাদের সাথে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
# আলোচনা
অনুষ্ঠানের সময় : সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা।
# আলোচনা ও
মত বিনিময় সভার স্থান : শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, সুনামগঞ্জ -এর প্রাঙ্গনে
সুবিধাজনক কোন স্থান।
# বাজেট :
অনুষ্ঠানের আগেই আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক বাজেট তৈরি করে আশ্রম কমিটির অনুমোদন নিতে
হবে। বাজেট সীমিত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
# রচনা
প্রতিযোগিতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের পরে করণীয় :
১) অনুষ্ঠান
সম্পন্ন হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে হিসাব আশ্রম কমিটির নিকট পেশ করে অনুমোদন করাতে
হবে।
২) অনুষ্ঠান
সম্পন্ন হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক পুরো কার্যক্রমের সাফল্য ও
ব্যর্থতা লিখিতভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এবং
৩) পরবর্তী
কার্যক্রম গ্রহণে কীভাবে সাফল্য বজায় রেখে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠা যেতে পারে তার উপায়
নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন