৪. কূষ্মাণ্ডা
সুরাসম্পূর্ণকলসং রুধিরাপ্লুতমেব চ।
দধানা হস্তপদ্মাভ্যাং কূষ্মাণ্ডা
শুভদাস্তু মে।।
মা দুর্গার চতুর্থ
রূপের নাম হলো কূষ্মাণ্ডা। তিনি স্বল্প হাস্যসহ অণ্ড বা ব্রহ্মাণ্ডকে উৎপন্ন করায় তাঁকে
কূষ্মাণ্ডাদেবী নামে অভিহিত করা হয়।
যখন জগৎ-সংসারের
কোন অস্তিত্ব ছিল না, চতুর্দিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল, সেই সময় এই দেবী তাঁর ঈষৎ হাস্য
দ্বারা ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেন। সুতরাং ইনিই হলেন জগতের আদি-স্বরূপা, আদি শক্তি। এঁর
আগে ব্রহ্মাণ্ডের কোন অস্তিত্বই ছিল না।
ইনি সূর্যমণ্ডলের
অন্তর্লোকে বাস করেন। সূর্যলোকে বাস করার ক্ষমতা ও শক্তি একমাত্র এঁরই আছে। এঁর দেহকান্তি
এবং প্রভাও সূর্যের ন্যায় দেদীপ্যমান তথা ভাস্বর। তাঁর তেজের তুলনা শুধু তাঁরই সঙ্গে
করা যায়। অন্য কোন দেব-দেবীই তাঁর তেজ ও প্রভাবের সমকক্ষ নয়। তাঁর তেজ ও দ্যুতিতে দশদিক
প্রকাশিত। ব্রহ্মাণ্ডের সকল বস্তু এবং প্রাণীর মধ্যে অবস্থিত তেজ সবই এঁর ছায়ামাত্র।
দেবী কূষ্মাণ্ডা
অষ্টবাহু সমন্বিতা। তাই তিনি অষ্টভুজা দেবী নামেও বিখ্যাত। তাঁর সাতটি হাতে তিনি যথাক্রমে
কমণ্ডলু, ধনুক, বাণ, পদ্মফুল, অমৃতপূর্ণ কলস, চক্র এবং গদা ধারণ করে আছেন, অষ্টম হাতে
রয়েছে সকল সিদ্ধি এবং নিধি প্রদানকারী জপমালা। এঁর বাহন সিংহ। কুমড়োকে সংস্কৃতে কূষ্মাণ্ড
বলা হয়। সকল বলি প্রদত্ত নৈবেদ্যের মধ্যে কুমড়ো বলি তাঁর সর্বাধিক প্রিয়, এই কারণেও
তাঁকে কূষ্মাণ্ডাদেবী বলা হয়।
নবরাত্রি পূজার চতুর্থ
দিনে এই কূষ্মাণ্ডাদেবীরই পূজা করা হয়। এই দিন সাধকের মন ‘অনাহত চক্রে’ অবস্থান করে।
সুতরাং এই দিন সাধকের উচিত অত্যন্ত পবিত্র ও অচঞ্চল মনে কূষ্মাণ্ডাদেবীর ধ্যান করতে
করতে পূজা আরাধনা করা। মাতা কূষ্মাণ্ডার উপাসনা করলে সমস্ত রোগ-শোক দূরীভূত হয়। এঁর
প্রতি ভক্তির দ্বারা আয়ু, যশ, বল এবং আরোগ্য বৃদ্ধি হয়। মাতা কূষ্মাণ্ডা সামান্য সেবা
ও ভক্তিতেই প্রসন্না হন। মানুষ যদি পবিত্র হৃদয়সহ এঁর শরণাগত হয়, তা হলে সে অত্যন্ত
সুষ্ঠুভাবেই পরমপদ লাভ করতে সক্ষম হয়।
আমাদের উচিত শাস্ত্র-পুরাণাদিতে
বর্ণিত নিয়ম-বিধি অনুসারে মাতা দুর্গার উপাসনা
করা এবং ভক্তিমার্গে অহর্নিশ অগ্রসর হওয়া।
মায়ের ভক্তি-মার্গে কিছু দূর এগোলেই ভক্ত সাধকের হৃদয়ে তাঁর কৃপা সূক্ষ্মভাবে অনুভূত
হতে থাকে। এই দুঃখস্বরূপ সংসার তার কাছে সুখপ্রদ ও সুগম হয়ে ওঠে।
মাতৃ উপাসনা মানুষের
জন্য সহজে ভবসাগর পার হওয়ার সর্বাধিক সুগম ও শ্রেয়স্কর পথ। মাতা কূষ্মাণ্ডার উপাসনা
মানুষকে আধি-ব্যাধি থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত করে। সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতির শিখরে নিয়ে
যায়। সুতরাং যারা লৌকিক ও পারলৌকিক উন্নতি চায় তাদের দেবী কূষ্মাণ্ডার আরাধনায় সর্বদা
তৎপর হওয়া উচিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন