সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

৩. চন্দ্রঘণ্টা



৩. চন্দ্রঘণ্টা
পিণ্ডজপ্রবরারূঢ়া চণ্ডকোপাস্ত্রকৈর্যুতা
       প্রসাদং তনুতে মহ্যং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা।।

মা দুর্গার তৃতীয় শক্তির নাম ‘চন্দ্রঘণ্টা’। নবরাত্রি আরাধনার তৃতীয় দিন এঁর বিগ্রহকেই পূজা-অর্চনা করা হয়।
এঁর স্বরূপ পরম শান্তিদায়ক ও কল্যাণকারী। এঁর মস্তকে ঘণ্টার আকারের অর্ধচন্দ্র শোভা পায়, তাই এই দেবীকে ‘চন্দ্রঘণ্টা’ বলা হয়। এঁর গায়ের রঙ স্বণের্র ন্যায় উজ্জ্বল। ইনি দশভুজা। এঁর দশ হাত খড়্গ আদি অস্ত্র ও বাণ আদি অস্ত্র বিভূষিত। এই দেবীর বাহন সিংহ এবং ভঙ্গিমা যুদ্ধের জন্য উদ্যত দশার। তাঁর ঘণ্টার ন্যায় ভয়ানক চণ্ডধ্বনিতে দুরাচারী দানব-দৈত্য-রাক্ষস সর্বদা প্রকিম্পিত থাকে।
নবরাত্রির দুর্গা উপাসনায় তৃতীয় দিনের পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিন সাধকের মন ‘মণিপূর’ চক্রে প্রবিষ্ট হয়। মাতা চন্দ্রঘণ্টার কৃপায় তার অলৌকিক বস্তুর দর্শন হয়; দিব্য সুগন্ধীর অনুভব হয় এবং নানা প্রকার দিব্য ধ্বনি শোনা যায়। এই সময় সাধককে অত্যন্ত সাবধানে থাকতে হয়।
মাতা চন্দ্রঘণ্টার কৃপায় স্ধকের সমস্ত পাপ ও বাধাবিঘ্ন বিনষ্ট হয়। এঁর আরাধনা সদ্য ফলদায়ী হয়ে থাকে। এঁর ভঙ্গি সর্বদা যুদ্ধাভিমুখী। তাই ভক্তদের কষ্ট অতি শীঘ্র ইনি নিবারণ করে থাকেন। এঁর বাহন সিংহ, অতএব এঁর উপাসকগণ সিংহের ন্যায় পরাক্রমী এবং নির্ভয় হয়ে থাকে। এঁর ঘণ্টাধ্বনি সদা-সর্বদা প্রেতাদি বাধা থেকে রক্ষা করে থাকে। এঁকে ধ্যান করলেই শরণাগতের রক্ষার জন্য এঁর ঘণ্টা নিনাদ করে উঠে।
দুষ্টের দমন ও বিনাশ সদা তৎপর হলেও এঁর স্বরূপ দর্শক ও আরাধনাকারীর পক্ষে অত্যন্ত সৌম্য ও শান্তিপূর্ণ হয়ে থাকে। এঁর আরাধনায় এক মস্ত বড় সদ্গুণও প্রাপ্তি হয়; তা হলো- সাহসী এবং নির্ভয় হওয়ার সঙ্গেই তাঁর মধ্যে সৌম্যতা ও বিনম্রতার বিকাশ ঘটে। ভক্তের মুখ, চোখ এবং সারা শরীরের কান্তি বৃদ্ধি পায়। কণ্ঠস্বরে দিব্য, অলৌকিক মাধুর্যের সমাবেশ হয়। মাতা চন্দ্রঘণ্টার উপাসক যেখানেই যান, তাঁকে দেখে মানুষ শান্তি ও সুখ অনুভব করে। এরূপ সাধকের শরীর থেকে দিব্য প্রকাশযুক্ত শক্তির অদৃশ্য বিকিরণ হয়ে থাকে। সাধারণ চোখে এই দিব্য ক্রিয়া দেখা যায় না; কিন্তু সাধক এবং তাঁর ঘনিষ্ট ব্যক্তিগণ এটি অনুভব করতে পারেন।
আমাদের উচিত কায়-মনো-বাক্যে ও কর্মে বিহিত বিধান অনুসারে মাতা চন্দ্রঘণ্টার শরণাগত হয়ে তাঁর পূজা-আরাধনায় তৎপর হওয়া। তাঁর উপাসনা করলে আমরা সমস্ত সাংসারিক কষ্ট থেকে বিমুক্ত হয়ে সহজেই পরম পদের অধিকারী হতে পারি। আমাদের নিরন্তর তাঁর পবিত্র মূর্তি শরণে রেখে সাধনার পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। তাঁর ধ্যান আমাদের ইহলোক ও পরলোকউভয়ের পক্ষেই পরমকল্যাণকারী ওসদ্গতি  প্রদানকারী হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন