সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫

স্কাউটস ওন -এ পরিবেশনের জন্য কতিপয় উপাখ্যান



স্কাউটস ওন -এ পরিবেশনের জন্য কতিপয় উপাখ্যান

উপাখ্যান-১

হিমালয় নামে একটি পর্বত আছে। তা আমরা সবাই জানি। এই হিমালয়ের গা ঘেষে বয়ে চলেছে রোহিনী নদী। সে অনেক দিন আগের কথা। এই রোহিনী নদীর তীরে একটি সুন্দর নগর ছিল। নাম কপিলবাস্তু। অবশ্য কেউ কেউ একে কপিলাবস্তুও বলে থাকেন। শাক্য বংশের রাজারা এখানে রাজত্ব করতেন। নগরে ছিল একটি মনোরম বাগান।
একদিনের কথা। বালক-রাজকুমার বাগানে বসে আছেন। ধীরে ধীরে বাতাস বইছে। নীরব প্রকৃতি। গাছে গাছে ফুলের সমারোহ। মৌমাছি ফুলে ফুলে উড়ে যাচ্ছে। আর বাগানের উপর দিয়ে সাদা মেঘের মত দলে দলে রাজহাঁস উড়ে যাচ্ছে। সে কী আনন্দ! রাজকুমার এ দেখে দেখে কী যেন ভাবছেন। হঠাৎ তাঁর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল একটি রাজহাঁস। ছটপট করছে। তিনি হাঁসটিকে ধরে দেখলেন, বুকে একটি তীর বিঁধে আছে। তাঁর খুব দুঃখ হল। তিনি পরম যত্নে তীরটি খুললেন। হাঁসটির সেবা করলেন। হাঁসটি কিছুটা সুস্থ হল। তিনি হাত বুলিয়ে হাঁসটিকে আদর করছেন। হাঁসটি তাঁর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভয়ে মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে। এমন সময় রাজকুমারের কাছে এল দেবদত্ত। দেবদত্ত রাজকুমারের খুড়তুতো ভাই হলেও খেলার সাথী। এসেই বলল, “হাঁসটি আমাকে দাও। এই হাঁস আমার। আমি এটিকে মেরেছি।”
দয়ায় একেবারে কাতর হয়ে রাজকুমার বললেন, “ভাই দেবদত্ত, হাঁসটি যদি মরে যেত তা হলে তোমাকে দিতাম। হাঁসটি মরে নি, আহত হয়েছে মাত্র । আর আমি তার জীবন রক্ষা করেছি। তাই হাঁসটি আমার।” এসব কথা শুনেও যখন দেবদত্ত হাঁসের দাবী ছাড়লে না তখন তিনি আরও বললেন, “ভাই দেবদত্ত, তোমারও প্রাণ আছে। তুমি কি পরে দুঃখ বোঝ না? তুমি এই হাঁসটির বিনিময়ে আমার রাজ্য নিতে পারো, তবুও প্রাণ থাকতে আমি হাঁসটি দেবো না।” অতঃপর হাঁসটিকে তিনি আকাশে উড়িয়ে দিলেন। হাঁসটি উড়ে গেল।
বন্ধুরা বলতো এই রাজকুমারের নাম কি? হ্যাঁ, তিনি সিদ্ধার্থ। তাঁর আর এক নাম- গৌতম। যিনি পরবর্তী সময়ে বোধি লাভ করে হন বুদ্ধ। নবম অবতার । ভগবান গৌতম বুদ্ধ। তাঁর প্রবর্তিত ধর্মমতই জগতে বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিত।
প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা“- কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞার এই অংশের সাথে এর সম্পর্ক আছে। আবার “স্কাউট জীবের প্রতি সদয়”-এই স্কাউট আইনের সাথেও এটি সম্পর্কযুক্ত।

উপাখ্যান-২

অনেক দিন আগের কথা। আরব দেশে একদিন এক মহান ব্যক্তি তাঁর সাথীদের নিয়ে এক জায়গায় বসে আছেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এল। হাতে একটি পাখির বাসা। বাসায় দু’টি ছানা। তিনি দেখলেন, কাছেই মা পাখিটা উড়ছে। তিনি লোকটিকে পাখির বাসাটি রেখে দূরে সরে যেতে বললেন। লোকটি সরে গেল। মা পাখিটা কাছে এসে বাচ্চাদের আদর করল। আর ডানা দিয়ে তাদের ঢেকে রাখল।
মহান লোকটি সকলকে বললেন, দেখ, মায়ের কত ভালবাসা। এত লোক দেখেও মা পাখিটা ভয় পায়নি।
লোকটি তার ভুল বুঝতে পারল।
মহান লোকটি তাকে কাছে ডাকলেন। ডেকে বললেন, ছানা দু’টিকে যেখান থেকে নিয়ে এসেছ সেখানে রেখে এস।
বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জান এই মহান ব্যক্তিটি কে- যিনি জীবের প্রতি এত সদয়। তিনি হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)।

‘স্কাউট জীবের প্রতি সদয়’- এই স্কাউট আইনের সাথে উপাখ্যানটি সম্পর্কযুক্ত।

উপাখ্যান-৩

সেদিন ছিল ঈদ। মদীনার ঘরে ঘরে আনন্দ। পথে পথে শিশুদের কলরব। দলে দলে লোক ঈদগাহে চলেছে। তাদের গায়ে নানা রঙের পোশাক। বাতাসে আতর গোলাপের সুবাস।
নামায শেষ হল। খুশিতে মেতে উঠল ছেলেমেয়ের দল। নামায শেষে এক মহান ব্যক্তি বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ দেখলেন ঈদগাহের এক কোণে বসে একটি ছেলে কাঁদছে। তিনি তার কাছে গেলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আদর করে বললেন, কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন?
আদর পেয়ে ছেলেটি কান্না থামাল। বলল, যুদ্ধে আমার আব্বা মারা গেছেন। আম্মাও বেঁচে নেই। ছেলেটি আর কথা বলতে পারল না। কাঁদতে লাগল। লোকটি ছেলেটিকে বুকে টেনে নিলেন। তার চোখের পানি মুছে দিলেন। বললেন, আমিও ছেলেবেলায় আমার আম্মাকে হারিয়েছি । আর আব্বাকে তো দেখিই নি।
লোকটির বুকে মাথা রেখে ছেলেটি সব দুঃখ ভুলে গেল।
পরে ছেলেটিকে নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরলেন এবং স্ত্রীকে ডেকে বললেন, তোমার জন্য একটি ছেলে এনেছি। কথাটি শুনে মহিয়সী মহিলা ছেলেটিকে কোলে তুলে নিলেন। নিজের হাতে গোসল করিয়ে তাকে সুন্দর জামা কাপড় পরালেন। তারপর কাছে বসিয়ে ভাল ভাল খাবার খাওয়লেন। তাঁদের মেয়েটিও এই ছেলেকে খুব আদর করলেন।
ছেলেটির মুখে মধুর হাসি ফুটল। তার মনে আর দুঃখ রইল না।
বন্ধুরা, তোমরা কি জান এই মহান লোকটি কে? 
এই মহান লোকটি হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ।

‘স্কাউট সকলের বন্ধু/স্কাউট জীবের প্রতি সদয়’- এই স্কাউট আইনের সাথে উপাখ্যানটি সম্পর্কযুক্ত। আবার “প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা“- কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞার এই অংশের সাথেও এর সম্পর্ক আছে।

উপাখ্যান-৪

আরব দেশ। চারদিকে ধু ধু মরভূমি। দিনের আকাশে সূর্য সেখানে আগুন ছড়ায়। মরুভূমির বালুরাশি সে আগুনে তেতে ওঠে। পথিকের পথ-চলা কঠিন হয়ে পড়ে। মক্কা এ দেশের একটি বড় নগরী। সেই নগরীর একটি রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে ছিলেন এক বুড়ী। বয়স সত্তর-আশি হবে। বয়সের ভারে শরীরটা কুঁজো হয়ে পড়েছে। শ্রান্ত ক্লান্ত শরীরটা ঘেমে নেয়ে চুপসে গেছে। পথ চলতে খুব কষ্ট। তাই পুঁটলিটা রেখে পথের পাশেই বসে পড়েছেন।
এক মহান লোক সেই পথ ধরে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ‍তিনি বুড়ীকে দেখতে পেলেন। তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মা, কী হয়েছে আপনার? খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি, কোথায় যাবেন?
বুড়ী খুশি হলেন। বললেন, বাবা, পথ চলতে বড় কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি দূরের পাহাড়ে আমার আত্মীয়-স্বজনের কাছে যেতে চাই। কিন্তু পুঁটলিটা নিয়ে চলতে পারছি না। লোকটি বুড়ীকে সান্ত্বনা দিলেন। তারপর বললেন, আমি আপনার পুঁটলিটা বয়ে নিয়ে যাব। চলুন, আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
লোকটি বুড়ীর পুঁটলি নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। তারপর বুড়ীর পিছু পিছু চললেন। অনেক দূর পথ হেঁটে তিনি বুড়ীকে তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে দিলেন।
 বন্ধুরা, তোমরা কি জান এই মহান লোকটি কে? যিনি এত কষ্ট স্বীকার করে বুড়ীর কষ্ট লাঘব করলেন, বুড়ীকে পুঁটলিটা নিতে সাহায্য করলেন, এই মহান লোকটি হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ।

প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা“- কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞার এই অংশের সাথে এর সম্পর্ক আছে।

উপাখ্যান-৫

আরব দেশ। চারদিকে ধু ধু মরভূমি। দিনের আকাশে সূর্য সেখানে আগুন ছড়ায়। মরুভূমির বালুরাশি সে আগুনে তেতে ওঠে। পথিকের পথ-চলা কঠিন হয়ে পড়ে। মক্কা এ দেশের একটি বড় নগরী। সেই নগরীর একটি রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে ছিলেন এক বুড়ী। বয়স সত্তর-আশি হবে। বয়সের ভারে শরীরটা কুঁজো হয়ে পড়েছে। শ্রান্ত ক্লান্ত শরীরটা ঘেমে নেয়ে চুপসে গেছে। পথ চলতে খুব কষ্ট। তাই পুঁটলিটা রেখে পথের পাশেই বসে পড়েছেন।
এক মহান লোক সেই পথ ধরে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ‍তিনি বুড়ীকে দেখতে পেলেন। তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মা, কী হয়েছে আপনার? খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি, কোথায় যাবেন?
বুড়ী খুশি হলেন। বললেন, বাবা, পথ চলতে বড় কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি দূরের পাহাড়ে আমার আত্মীয়-স্বজনের কাছে যেতে চাই। কিন্তু পুঁটলিটা নিয়ে চলতে পারছি না। লোকটি বুড়ীকে সান্ত্বনা দিলেন। তারপর বললেন, আমি আপনার পুঁটলিটা বয়ে নিয়ে যাব। চলুন, আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
লোকটি বুড়ীর পুঁটলি নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। তারপর বুড়ীর পিছু পিছু চললেন। অনেক দূর পথ হেঁটে তিনি বুড়ীকে তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে দিলেন।
এদিকে লোকটির কাঁধে বুড়ীর বোঝা দেখে বুড়ীর আত্মীয়রা খুবই অবাক হল। তারা হল ইহুদি আর এ লোকটি যে তাদের জাতির শত্রু। কিন্তু লোকটির ব্যবহার যে পরম মিত্রেরই মত। তিনি কি করে শত্রু হবেন? বুড়ীর স্বজন ইহুদিরা লোকটির কাছে ক্ষমা চাইল আর  তারা লোকটিকে বলল, তুমি আমাদের বন্ধু, আমাদের ভাই। আমরা তোমার কথা শুনব, তোমার পথে চলব।
 বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ কে এই মহানুভব ব্যক্তি, যিনি ছিলেন সকলের বন্ধু । তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ।

প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা“- কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞার এই অংশের সাথে এর সম্পর্ক আছে। আবার ‘স্কাউট সকলের বন্ধু’- এই স্কাউট আইনের সাথেও উপাখ্যানটি সম্পর্কযুক্ত।

উপাখ্যান-৬

অনেক দিন আগের কথা। আরব দেশ। সে দেশের একটি বড় নগরী মক্কা। এ নগরীর একটি মসজিদে রোজ খুব সকালে এক মহান ব্যক্তি নামায পড়তে যান। আর এক বুড়ী রোজ তাঁর পথে কাঁটা পুঁতে রাখেন । লোকটিকে কষ্ট দেওয়াই তার ইচ্ছা। কিন্তু লোকটি প্রতিদিন পথের কাঁটা সরিয়ে দেন। বুড়ীকে কিছুই বলেন না। বরং হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে দেখেন। দুষ্ট বুড়ীও দূর থেকে তা দেখেন আর হাসেন ।
একদিনের কথা। প্রতিদিনের মত লোকটি সকালে মসজিদে নামায আদায় করতে যাচ্ছেন । দেখলেন, পথে কাঁটা নেই। ভাবলেন কেন এমন হল? নিশ্চয় বুড়ীর অসুখ-বিসুখ হয়েছে। তিনি নামায পড়ে ফেরার পথে বুড়ীর খোঁজ করলেন। জানা গেল, কাছেই বুড়ীর বাড়ি। তিনি বুড়ীর বাড়িতে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, জ্বরের ঘোরে বুড়ী কাতরাচ্ছেন। তাকে দেখবার কেউ নেই। বিছানায় শুয়ে বুড়ি ছটপট করছেন।
লোকটি বুড়ীর বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। বললেন, মা, অসুখে বড় কষ্ট হচ্ছে আপনার। তারপর অসুস্থ বুড়ীর সেবায় লেগে গেলেন। তার বিছানা পরিষ্কার করে দিলেন। তাকে ঔষধ-পথ্য খেতে দিলেন।ধীরে ধীরে বুড়ী সেরে উঠলেন।
বুড়ীর বিস্ময়ের শেষ নেই। লোকটিকে তিনি পরম শত্রু বলেই জানেন। কিন্তু আজ এ কি হল? শত্রু তাকে সেবা করছে। বিপদে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বুড়ী বুঝতে পারলেন লোকটি কত উদার, কত মহান। বুড়ী বুঝতে পারলেন লোকটির মহানুভবতা। কৃতজ্ঞতায় বুড়ীর অন্তর ভরে উঠল।
বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ কে এই মহানুভব ব্যক্তি, যিনি ছিলেন সকলের বন্ধু ।
 তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ।

প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা“- কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞার এই অংশের সাথে এর সম্পর্ক আছে। আবার ‘স্কাউট সকলের বন্ধু’- এই স্কাউট আইনের সাথেও উপাখ্যানটি সম্পর্কযুক্ত।

উপাখ্যান-৭

গভীর রাত। বাড়িতে আর কেউ জেগে নেই। শুধু একটি বালক জেগে আছে। পড়া-লেখা করছে। পাশের একখানা বিছানায় তার মা ঘুমিয়ে আছেন। নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ। হঠাৎ ঘুম থেকে জাগলেন ছেলেটির মা। ছেলেকে ডেকে বললেন, “বাবা, বড়ই পিপাসা পেয়েছে, পানি দাও।” আবার চোখ বন্ধ করলেন।
ঘরের কোণে রাখা কলসিতে ছেলেটি দেখল পানি নেই। ঘরে পানি নেই কি করবে ক্ষণিক ভাবল। সবাই ঘুমে অচেতন। পানির জন্য কাকে জাগাবে? কার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবে? যদি তাদের ঘরেও পানি না থাকে? মায়ের তৃষ্ণা মিটাবে কিভাবে? যে করেই হোক মায়ের তৃষ্ণা মিটাতেই হবে। এ যে মায়ের আদেশ।
গ্রাম থেকে অনেক দূরে ঝরণা। গভীর অন্ধকার রাত। বালকটি একাকী কলসি নিয়ে ছুটে গেল পানি আনতে। পানি নিয়ে এল। মা ততক্ষণে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বালকটি পেয়ালায় পানি নিয়ে মায়ের শয়ন শিয়রে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। মা গুরুজন, ঘুম ভাঙ্গালে অপরাধ হবে। কখন মায়ের ঘুম ভাঙ্গে এই তার প্রত্যাশা।
প্রভাত হল। পুব আকাশ ফর্সা হল, ধীরে ধীরে আঁধার দূর হল। পাখিরা ডেকে উঠল। মা-ও চোখ খুললেন। দেখলেন, শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে তার দশ বছরের ছেলেটি। পানি পেয়ালা তার হাতে কেন, প্রথমে মা বুঝতেই পারলেন না। সহসা মনে পড়ল, গভীর রাতে তিনি পানি চেয়েছিলেন। মায়ের মনে কষ্ট হল। চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলেন না। আহা! ছেলেটি পানি নিয়ে সারা রাত দাঁড়িয়েছিল, একটুও ঘুমোয় নি।
মা ছেলেকে কোলে তোলে নিলেন। আদর করে বার বার চুমু খেলেন। দোয়া করলেন, ছেলেটি যেন জগতের বন্দনাযোগ্য মহাপুরুষ হয়। মায়ের দোয়ার বরকতে বড় হয়ে ছেলেটি পীর-এ-কামেল হয়েছিলেন।
বন্ধুরা, তোমরা জান এই ছেলেটি কে ছিলেন? তিনি হচ্ছেন, হযরত বায়োজিদ বোস্তামী (রহঃ)।

‘কাবেরা বড়দের কথা মেনে চলে’ – এই কাব স্কাউট আইনের সাথে উপাখ্যানটির সম্পর্ক রয়েছে।

উপাখ্যান-৮

অনেক দিন আগের কথা। আরব দেশে তখন শান্তি ছিল না। মানুষে মানুষে হানাহানি চলত। অন্যায়-অবিচারে দেশ ভরে গিয়েছিল। সৃষ্টির কথা, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কথা মানুষ ভুলে গিয়েছিল। দেশ ও দেশের মানুষ এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়। পৃথিবী চায় সত্য ও ন্যায়ের একজন পথ প্রদর্শক। যিনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবেন। অসত্য ও অন্যায়কে ঘৃণা করবেন। যিনি ভাববেন সৃষ্টির কথা, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কথা।
পরম করুণাময় আল্লাহ তা’লার দরবারে আবেদন মঞ্জুর হল। এল সেই আনন্দময় মূহুর্ত।
রাতের শেষ প্রহর। চারদিকে আবছা অন্ধকার। ঘুমজাগা পাখিরা ডানা ঝাপটে ওঠে। মরু প্রান্তরে হাওয়ার মাতামাতি। খেজুর পাতায় সে হাওয়ার কাঁপন লাগে। একটু পরেই আলো ফুটবে। সে এক অপরূপ দৃশ্য।
সেই শুভক্ষণে একটি শিশুর জন্ম হল। দিনটি ছিল সোমবার, আরবি বছরের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল এর ১২ তারিখ, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ। শিশুর মাতার নাম আমিনা। পিতার নাম আবদুল্লাহ। পিতামহের নাম আবদুল মুত্তালিব। শিশুটির জন্মের প্রায় ছয় মাস আগে তাঁর পিতা মারা যান।
শৈশবে শিশুটিকে লালন-পালন করেন যে মহিলা তাঁর নাম বিবি হালিমা। বিবি হালিমা মায়ের মত আদরে ও যত্নে শিশুটিকে বড় করে তোলেন।
শিশুটি বড় হওয়ার পরও বিবি হালিমাকে মনে রেখেছিলেন। দেখা যায় যে, তিনি হয়তঃ তাঁর সাথীদের নিয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনায় রয়েছেন এমন সময় বিবি হালিমা সেখানে হাজির হলেন। তিনি নিজের মাথার পাগড়ি বিছিয়ে বিবি হালিমাকে বসতে দিতেন। গভীর মমতায় তাঁকে মা বলে ডাকতেন।
বন্ধুরা বলত এই মহান ব্যক্তিটি কে? যাঁর আগমনের অপেক্ষায় উতলা ছিল নিখিল ধরণী। যিনি তাঁর শৈশবের লালন-পালনকারিণীকে জননীর মত শ্রদ্ধা করতেন।
হ্যাঁ, তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)।

‘স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত’ এই স্কাউট আইনটির সাথে উপাখ্যানটির সম্পর্ক রয়েছে।






  



1 টি মন্তব্য:

  1. গল্প গুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো। পিডিএফ এ হলে ভালো হতো। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন