সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

৫. স্কন্দমাতা



৫. স্কন্দমাতা
সিংহাসনগতা নিত্যং পদ্মাশ্রিতকরদ্বয়া।
শুভদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী।।

মাতা দুর্গার পঞ্চম রূপটি স্কন্দমাতা নামে পরিচিত। ভগবান স্কন্দ ‘কুমার কার্তিকেয়’র অপর নাম। ইনি দেবাসুর সংগ্রামে দেবতাদের সেনাপতি ছিলেন। পুরাণাদিতে এঁকে কুমার এবং শক্তিধর বলে এঁর মাহাত্ম্যের বর্ণনা করা হয়েছে। স্কন্দের বাহন ময়ূর, তাই এঁকে ময়ূরবাহনও বলা হয়।
এই স্কন্দের মাতা হওয়ায় মা দুর্গার পঞ্চম রূপকে স্কন্দমাতা নামে অভিহিত করা হয়। নবরাত্রি পূজার পঞ্চম দিনে এঁর আরাধনা করা হয়। সাধকের মন এই দিন ‘বিশুদ্ধ চক্রে’ অবস্থান করে।
এঁর বিগ্রহ মূর্তিতে দেখা যায় ভগবান স্কন্দ বালকরূপে এঁর ক্রোড়ে অবস্থান করছেন। স্কন্দমাতৃস্বরূপিণী দেবী চতুর্ভুজা। তিনি দক্ষিণের ওপরের হাতে স্কন্দকে ধরে আছেন এবং নিচের হাতটিকে উপরদিকে করে, তাতে পদ্মফুল নিয়েছেন। বামের উপরিস্থিত হাতটি নিচে নেমেছে বরাভয় মুদ্রারূপে আর নিচের হাতটি উপরে রয়েচে, পদ্মফুল ধারণ করে। স্কন্দমাতা সর্বাঙ্গে শুভ্রবর্ণা এবং পদ্মের উপর উপবিষ্টা, সেইজন্য এঁকে পদ্মাসনা দেবীও বলা হয়। ইনি সিংহকেও বাহনরূপে রাখেন।
নবরাত্র পূজার পঞ্চম দিনের কথায় শাস্ত্রে পুষ্কল মাহাত্ম্য বলা আছে। এই চক্রে চিত্তপ্রতিষ্ঠ সাধকের সমস্ত বাহ্য ক্রিয়া এবং চিত্তবৃত্তি লুপ্ত হয়ে যায়। তিনি বিশুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তাঁর মন সকল প্রকার লৌকিক, সাংসারিক, মায়িক বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পদ্মাসনা মাতা স্কন্দমাতার স্বরূপে সম্পূর্ণভাবে লীন হয়ে যায়। এই সময় সাধককে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে সাধন পথে চলতে হয় এবং সমস্ত ধ্যান-বৃত্তিকে একাগ্র করে যোগপথে অগ্রসর হতে হয়।
মাতা স্কন্দমাতার আরাধনা করলে ভক্তের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয়। এই মর্ত্যলোকেই সে পরম শান্তি ও সুখের অনুভব করতে থাকে। মোক্ষের দ্বার তার কাছে নিজে থেকেই সুলভ হয়ে যায়। স্কন্দমাতার উপাসনা করলে বালকরূপ স্কন্দ ভগবানের আরাধনাও স্বতঃই হয়ে যায়। এই বৈশিষ্ট্য শুধু এঁরই আছে। সুতরাং সাধকের স্কন্দমাতার উপাসনায় বিশেষ লক্ষ্য দেওয়া উচিত। সূর্যমণ্ডলের অধিষ্ঠাত্রি দেবী হওয়ায় তাঁর উপাসকগণ অলৌকিক তেজ ও কান্তিসম্পন্ন হন। এক অলৌকিক প্রভামণ্ডল অদৃশ্যভাবে সর্বদাই তাদের চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত থাকে। এই প্রভামণ্ডল সর্বক্ষণ সাধকদের যোগক্ষেম বহন করে।
অতএব আমাদের একাগ্রভাবে মনকে পবিত্র রেখে মায়ের শরণাগত হওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। এই ঘোর ভবসাগরের দুঃখ হতে মুক্তিলাভ করে মোক্ষের পথ সহজ করার এর থেকে উত্তম উপায় নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন