৬. কাত্যায়নী
চন্দ্রহাসোজ্জ্বলকরা শার্দূলবরবাহনা।
কাত্যায়নী শুভং দদ্যাদ্দেবী
দানবঘাতিনী।।
মাতা দুর্গার ষষ্ঠ
রূপের নাম কাত্যায়নী। তাঁর কাত্যায়নী নাম হওয়ার পিছনে কাহিনী হল—‘কত’ নামে এক বিখ্যাত
মহর্ষি ছিলেন। তাঁর পুত্র হলেন ঋষি কাত্য। সেই ‘কাত্য’ গোত্রে বিশ্বপ্রসিদ্ধ মহর্ষি
কাত্যায়ন জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ভগবতী পরাম্বার উপাসনায় বহু বছর ধরে কঠিন তপস্যা করেছিলেন।
তাঁর একান্ত প্রার্থনা ছিল মাতা ভগবতী তাঁর গৃহে কন্যারূপে আবির্ভূতা হন। ভগবতী মা
তাঁর এই প্রার্থনা মেনে নেন।
কিছুকাল পরে যখন
দানব মহিষাসুরের অত্যাচার পৃথিবীতে অত্যন্ত বেড়ে গেল, তখন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর
তাঁদের নিজ নিজ তেজের অংশ দিয়ে মহিষাসুরের বিনাশের জন্য এক দেবীকে সৃষ্টি করলেন। মহর্ষি
কাত্যায়ন সর্বপ্রথম এঁর আরাধনা করেন। তাই এঁকে দেবী কাত্যায়নী বলা হয়।
এমনও বলা হয়ে থাকে
যে, ইনি মহর্ষি কাত্যায়নের গৃহে কন্যারূপে জন্মগ্রহণও করেন। আশ্বিনের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে
জন্মগ্রহণ করে শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী---এই তিন দিন মাতা কাত্যায়নী কাত্যায়ন
ঋষির পূজা গ্রহণ করে দশমীর দিন মহিষাসুরকে বধ করেন।
মাতা কাত্যায়নী অমোঘ
ফলদায়িনী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করার জন্য গোপিনীগণ কালিন্দী-যমুনা তীরে এঁরই
আরাধনা করেছিলেন। ইনি ব্রজমণ্ডলের অধিষ্ঠাত্রীদেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত। এঁর রূপ অতি সুষমামণ্ডিত
এবং দিব্য। এঁর গাত্রবর্ণ স্বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বল, ভাস্কর। ইনি চতুর্ভুজা। মাতার দক্ষিণের
উপর হস্ত অভয়মুদ্রায় এবং নিচের হস্ত বরমুদ্রায় আছে। বামের উপর হস্ত তলোয়ার আর নিচের
হস্ত পদ্মপুষ্পে শোভিত। ইনি সিংহবাহনা।
দুর্গাপূজার ষষ্ঠ
দিনে দেবীর এই রূপের পূজা হয়। এই দিন সাধকের মন ‘আজ্ঞা চক্রে’ স্থিত হয়। যোগ সাধনায়
এই আজ্ঞা চক্রের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চক্রে স্থিত মন-সাধক মা কাত্যায়নীর
শ্রীচরণে নিজের সর্বস্ব নিবেদন করেন। পরিপূর্ণভাবে আত্মনিবেদনকারী এরূপ ভক্তের সহজভাবে
মাতা কাত্যায়নীর দর্শন লাভ হয়। মাতা কাত্যায়নীর প্রতি ভক্তি ও আরাধনায় মানুষ অতি সহজেই
ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ রূপ ফল প্রাপ্ত হয়। তিনি ইহলোকে অবস্থান করেও অলৌকিক তেজ ও প্রভাবের
অধিকারী হন। তাঁর রোগ-শোক-সন্তাপ-ভয় ইত্যাদি সর্বতোভাবে বিনষ্ট হয়। জন্ম-জন্মান্তরের
পাপ দূর করার জন্য মায়ের আরাধনার থেকে বেশি সুগম ও সরল পথ আর নেই। এঁর উপাসক নিরন্তর
এঁর সান্নিধ্যে থেকে পরমপদের অধিকারী হয়ে যান। অতএব আমাদের সর্বতোভাবে মায়ের শরণাগত
হয়ে তাঁর পূজা-অর্চনায় তৎপর থাকা উচিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন