সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫

৭. কালরাত্রি



৭. কালরাত্রি

 একবেণী জপাকর্ণপূরা নগ্না খরাস্থিতা ।
      লম্বোষ্ঠী কর্ণিকাকর্ণী তৈলাভ্যক্তশরীরিণী ।।
                                   বামপাদোল্লসল্লোহলতাকণ্টকভূষণা ।
  বর্ধনমূর্ধধ্বজা কৃষ্ণা কালরাত্রির্ভয়ঙ্করী ।।

মাতা দুর্গার সপ্তম শক্তি কালরাত্রি নামে পরিচিত।
এঁর গাত্রবর্ণ ঘন অন্ধকারের মত কালো। মাথার চুল এলোমেলো, গলায় বিদ্যুৎ চমকের মত উজ্জ্বল মালা। ইনি ত্রিনেত্র বিশিষ্ট এবং নেত্রগুলো ব্রহ্মাণ্ডের মত গোল গোল, তার থেকে বিদ্যুতের মত দ্যুতি নিঃসরণ হচ্ছে। এঁর নাসিকার শ্বাস-প্রশ্বাসে ভয়ঙ্ক অগ্নিশিখা নির্গত হতে থাকে। এঁর বাহন গর্দভ। উপরিস্থিত ডান হাতে বরমুদ্রায় সকলকে বর প্রদান করছেন; ডানদিকের নিচের হাতটি রয়েছে অভয়মুদ্রায়। বামের উপরিস্থিত হাতে লোহার কাঁটা ধারণ করে আছেন, নিচের হাতে ধরে আছেন খড়্গ।
মাতা কালরাত্রির রূপ দেখতে ভয়ানক হলেও ইনি সর্বদা শুভফলই প্রদান করে থাকেন। তাঁর আর এক নাম তাই ‘শুভঙ্করী’। সুতরাং তাঁর মূর্তি দেখে ভক্তদের কোনভাবে ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
দুর্গাপূজার সপ্তম দিনে মা কালরাত্রির পূজা করার বিধান। সেই দিন সাধকের মন ‘সহস্ত্রার চক্রে’ অবস্থান করে।  তাঁর জন্য ব্রহ্মাণ্ডের সকল সিদ্ধির দ্বার অবারিত হয়ে যায়। এই চক্রে অবস্থিত সাধকের মন সম্পূর্ণভাবে মাতা কালরাত্রির স্বরূপে অবস্থান করে। তাঁর সাক্ষাৎ পেলে সাধক মহাপুণ্যের ভাগী হন। তাঁর সমস্ত পাপ ও বাধা-বিঘ্ন নাশ হয় এবং তিনি অক্ষয় পুণ্যধাম  প্রাপ্ত হন।
মাতা কালরাত্রি দুষ্টের বিনাশ করেন। উপাসক এঁকে স্মরণ করামাত্রই দৈত্য-দানব-রাক্ষস-ভূত-প্রেত ইত্যাদি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়ন করে। ইনি গ্রহ-বাধাও দূর করেন। এঁর উপাসনাকারীর কখনও অগ্নিভয়, জলভয়, জন্তুভয়, শত্রুভয়, রাত্রিভয় থাকে না। এঁর কৃপায় এঁর ভক্তগণ সর্বতোভাবে ভয়মুক্ত হন।
মানুষের উচিত মাতা কালরাত্রির বিগ্রহ-রূপ হৃদয়ে স্থাপন করে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে আরাধনা করা। তার উচিত যম, নিয়ম, সংযম পূর্ণভাবে পালন করা এবং কায়-মনো-বাক্যে পবিত্র থাকা। ইনি শুভঙ্করী দেবী। এঁর উপাসনায় প্রাপ্য শুভফলের কোন গণনা করা যায় না। আমাদের নিরন্তর তাঁর স্মরণ-ধ্যান ও পূজা করা উচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন