সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫

৮. মহাগৌরী



৮. মহাগৌরী
                                            শ্বেতে বৃষে সমারূঢ়া শ্বেতাম্বরধরা শুচিঃ।
মহাগৌরী শুভং দদ্যান্মহাদেবপ্রমোদদা।।

মাতা দুর্গার অষ্টম শক্তি হলেন মহাগৌরী।
এঁর গাত্রবর্ণ সম্পূর্ণ গৌর। সেই গৌরবর্ণ তুলনা করা হয় শঙ্খ, চন্দ্র, এবং কুন্দফুলের সঙ্গে। এঁর বয়স আট বছর বলে মানা হয়‘অষ্টবর্ষা ভবেদ্ গৌরী’। এঁর বস্ত্র এবং অলঙ্কারও শ্বেতবর্ণের। ইনি চতুর্ভুজাবিশিষ্টা এবং বৃষভ বাহনা। এঁর ডানদিকের উপরের হস্তে অভয়মুদ্রা এবং নিম্নের হস্তে ত্রিশূল। বামের উপর হস্তে ডমরু এবং নিচের হস্তে রয়েছে বরমুদ্রা। তাঁর ভঙ্গিমা অতিশয় শান্ত।
ইনি পার্বতীরূপে ভগবান শিবকে পতিরূপে লাভ করার জন্য অত্যন্ত কঠোর তপস্যা করেছিলেন। ইনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ‘ব্রিয়েহহং বরদং শম্ভুং নান্য দেবং মহেশ্বরাৎ’ (নারদ পাঞ্চরাত্র)। গোস্বামী তুলসীদাসও বলেছেন যে, ইনি শিবকে বরণের জন্য কঠোর সঙ্কল্প করেছিলেন
জন্ম কোটি লগি রগর হমারী ।
বরউঁ সম্ভু ন ত রহউঁ কুঁআরী ।।
এই কঠোর তপস্যায় তাঁর শরীর একেবারে কালো হয়ে গিয়েছিল। এঁর তপস্যায় প্রসন্ন ও সন্তুষ্ট হয়ে যখন ভগবান শিব এঁকে গঙ্গার পবিত্র জলে স্নান করালেন তখন তাঁর শরীর বিদ্যুৎ প্রভার ন্যায় অতি কান্তিমান গৌরবর্ণ হয়ে উঠল। তখন তেকেই এঁর নাম হল মহাগৌরী।
দুর্গাপূজার অষ্টমদিনে মহাগৌরী পূজার বিধান। এঁর শক্তি অমোঘ এবং সদ্য ফলদায়িনী। এঁর উপাসনা করলে ভক্তের সকল কলুষ নাশ হয়, তার পূর্বসঞ্চিত পাপও দূর হয়ে যায়। ভবিষ্যতেও পাপ-সন্তাপ, দৈন্য-দুঃখ কখনও তার কাছে আসে না। সে সর্বপ্রকার পবিত্র ও অক্ষয় পুণ্যের অধিকারী হয়।
মাতা মহাগৌরীর ধ্যান-স্মরণ, পূজা-আরাধনা ভক্তের পক্ষে সর্ববিধ কল্যাণপ্রদ হয়। আমাদের সর্বদা এঁর শরণে থাকা উচিত। এঁর কৃপায় অলৌকিক সিদ্ধিলাভ হয়। মনকে অনন্যভাবে একনিষ্ট করে তাই মানুষের সর্বদা এঁর পাদপদ্মের ধ্যান করা উচিত। তিনি ভক্তজনের কষ্ট অবশ্যই দূর করেন। এঁর উপাসনার দ্বারা আর্তব্যক্তির অসম্ভব কাজও সম্ভব হয়ে যায়। সুতরাং এঁর চরণে শরণ পেতে আমাদের সর্বতোভাবে চেষ্টা করা উচিত। পুরাণে এঁর মহিমার প্রচুর আখ্যান পাওয়া যায়। ইনি মানুষের চিন্তাধারাকে সত্যানুসন্ধানের দিকে চালিত করেন এবং অসৎ বৃত্তির নাশ করেন। আমাদের সর্বাঙ্গীনভাবে সর্বদা তাঁর শরণাগত থাকা উচিত।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন