সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫

৯. সিদ্ধিদাত্রী



৯. সিদ্ধিদাত্রী
সিদ্ধগন্ধর্বযক্ষাদ্যৈরসুরৈরমরৈরপি।
           সেব্যমানা সদা ভূয়াৎ সিদ্ধিদা সিদ্ধিদায়িনী।।

মাতা দুর্গার নবম শক্তি ‘সিদ্ধিদাত্রী’ নামে পরিচিত।
ইনি সর্বপ্রকার সিদ্ধি প্রদান করে থাকেন। মার্কণ্ডেয়পুরাণ অনুসারে অণিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, ঈশিত্ব এবং বাশিত্বএই আট প্রকারের সিদ্ধি হয়ে থাকে। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে এর সংখ্যা আঠারো বলে উল্লিখিত আছে। যথা- (১) অণিমা (২) লঘিমা (৩) প্রাপ্তি (৪) প্রাকাম্য (৫) মহিমা (৬) ঈশিত্ব, বাশিত্ব (৭) সর্বকামাবসায়িতা (৮) সর্বজ্ঞত্ব (৯) দূরশ্রবণ (১০) পরকায়প্রবেশন (১১) বাকসিদ্ধি (১২) কল্পবৃক্ষত্ব (১৩) সৃষ্টি (১৪) সংহারকরণসামর্থ্য (১৫) অমরত্ব (১৬) সর্বন্যায়কত্ব (১৭) ভাবনা এবং (১৮) সিদ্ধি।
মাতা সিদ্ধিদাত্রী ভক্ত ও সাধকদের এই সব সিদ্ধি প্রদান করতে সমর্থা। দেবীপুরাণ অনুসারে ভগবান শিব এঁরই কৃপায় সকল সিদ্ধি প্রাপ্ত হন। এঁর অনুকম্পাতেই ভগবান শিবের অর্ধেক শরীর দেবীর হয়েছিল। সেজন্যই তিনি জগতে ‘অর্ধনারীশ্বর’ নামে প্রসিদ্ধ। মাতা সিদ্ধিদাত্রী চতুর্ভুজা। ইনি কখনও সিংহবাহনা, কখনও পদ্মাসনা। এঁর দক্ষিণের নিম্নস্থিত হস্তে চক্র, উপরি হস্তে গদা, বামের নিম্নস্থিত হস্তে শঙ্খ এবং উপরিস্থিত হস্তে পদ্মফুল। নবরাত্রি পূজার নবম দিনে এঁর আরাধনা করা হয়। এইদিন শাস্ত্রীয় বিধি-নিয়ম অনুসারে এবং পূর্ণ নিষ্ঠা নিয়ে যিনি সাধনা করেন তাঁরা সকল সিদ্ধি প্রাপ্ত হন। জগতে তার আর কোন কিছুরই অগম্য থাকে না। ব্রহ্মাণ্ডে তার পূর্ণ বিজয় লাভ করার ক্ষমতা হয় ।
প্রত্যেক মানুষেরই কর্তব্য হল মা সিদ্ধিদাত্রী দেবীর কৃপা লাভ করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করা, তাঁর আরাধনায় এগিয়ে চলা। তাঁর কৃপায় অতীব দুঃখময় সংসারে নির্লিপ্ত থেকে সমস্ত সুখভোগ করে সাধক মোক্ষ লাভ করতে সক্ষম হয়।
নবদুর্গার মধ্যে মাতা সিদ্ধিদাত্রী হলেন অন্তিমরূপ। অন্যান্য অষ্টদুর্গার পূজা শাস্ত্র-বিধি অনুযায়ী করে ভক্ত দুর্গাপূজার নবম দিনে এঁর উপাসনায় প্রবৃত্ত হন। সিদ্ধিদাত্রী মাতার উপাসনা পূর্ণকরার পর ভক্ত ও সাধকদের লৌকিক-পারলৌকিক সর্বপ্রকার কামনা পূরণ হয়। কিন্তু সিদ্ধিদাত্রী মায়ের কৃপাপাত্র ভক্তের মধ্যে এমন কোন কামনা আর থাকে না, যা তিনি পূরণ করতে চান। তিনি সকল সাংসারিক ইচ্ছা, প্রয়োজন এবং স্পৃহার ঊর্ধ্বে উঠে মানসিকভাবে মা ভগবতীর দিব্যলোকে বিচরণ করেন। তাঁর কৃপার অমৃতধারা নিত্য পান করে তিনি বিষয় ভোগশূন্য হয়ে যান। মাতা ভগবতীর পরম সান্নিধ্যেই তাঁর পরম প্রাপ্তি হয়ে যায়। এই পরমপদ পাওয়ার পর তার আর কোন বস্তুর প্রয়োজন থাকে না।
মায়ের শ্রীচরণের সান্নিধ্য লাভের জন্য আমাদের সর্বদা নিয়মনিষ্ঠ থেকে তাঁর আরাধনা করা উচিত। মাতা ভগবতীর স্মরণ, পূজা-ধ্যান আমাদের এই জগতের অসারত্ব বোধ করায় এবং প্রকৃত পরম শান্তিদায়ক অমৃত পদের দিকে নিয়ে যায়।     
           

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন