সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

বেদ


বেদ ঈশ্বরের বাণী, যা প্রাচীন ঋষিদের কাছে প্রতিভাত হয়েছিল। ঋষিগণ শিষ্যদেরকে মুখে মুখে বেদ শিক্ষা দিতেন। কালক্রমে ঋষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব বেদ সংগ্রহ করে লিখিত রূপ দেন। তিনি বেদের মন্ত্রগুলোকে চার ভাগে ভাগ করেন। ফলে বেদ হয়ে যায় চারটি। চারটি
বেদ হলো : ঋক, যজু, সাম ও অথর্ব। এগুলোকে লিপিবদ্ধ করে সংহত করেছেন বলে এর নাম হয়েছে বেদ সংহিতা। বেদ গদ্য ও পদ্যে রচিত। কিছু বেদমন্ত্র আছে যেগুলো সুর সংযুক্ত অর্থাৎ গান। ঋগ্বেদ সংহিতা : ‘ঋক’ শব্দটি অর্থ স্ত্ততি। ঋগ্বেদ সংহিতায় স্ত্ততি ও প্রার্থনামূলক মন্ত্র রয়েছে। ঋষিদের ধ্যানযোগে প্রাপ্ত বাণীগুলো তিন-চার পংক্তির এক একটি কবিতার আকারে প্রকাশ পেয়েছে। এই কবিতা গুলোকেই বলা হয়েছে ঋক বা মন্ত্র। ঋগ্বেদে মোট ১০,৪৭২ টি ঋক বা মন্ত্র রয়েছে। যজুর্বেদ সংহিতা : যজ্ঞে প্রযুক্ত বৈদিক মন্ত্রগুলোকে একত্র সন্নিবেশিত করে ব্যাসদেব যজুর্বেদ সংহিতা প্রণয়ন করেছেন। যজ্ঞ বলতে একটি বিশেষ পদ্ধতির উপাসনা ও অনুষ্ঠান বোঝানো হয়েছে। যজ্ঞে ব্যবহৃত মন্ত্রের নাম যজুঃ। তাই যজুঃ এর সংগ্রহকেই বলা হয়। যজুর্বেদ। যজুর্বেদে গদ্য ও পদ্য উভয় রীতির মন্ত্রই আছে। যজুর্বেদের বিষয়বস্ত্তর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞের কথা আছে। শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া, বিভিন্ন প্রকার বৃত্তি ও পেশাজীবি প্রভৃতি পরিচয়সহ বৈদিক যুগের সমাজ-সভ্যতার পরিচায়ক হিসেবেও যজুর্বেদের একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। সামবেদ সংহিতা : ‘গীতিষু সামাখ্যা’। গীতিযুক্ত বা সুরারোপিত ঋককে ‘সাম’ বলা হয়। সামবেদ সংহিতার অধিকাংশ মন্ত্রই ঋগ্বেদে রয়েছে। সামবেদ বিধৃত ১৮১০টি মন্ত্র আছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৭৫টি ছাড়া বাকি সবগুলো ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত। মোট কথা ঋগ্বেদের ছন্দোবদ্ধ কবিতাগুলোতে সুর সংযোগ করে সামে বা গানে পরিণত করা হয়েছে। সামবেদই প্রাচীন ভারতীয় আর্য গানের উৎস। যজ্ঞ করার সময়ে সামগুলো গীত হয়। কণ্ঠ ও যন্ত্র দু’ প্রকার সঙ্গীত মাধ্যমে সাম গান করা হয়। অথর্ববেদ সংহিতা : যজুর্বেদের মত অথর্ববেদও গদ্য ও পদ্য উভয় রীতিতে রচিত। এতে চিকিৎসা বিজ্ঞান, বাস্ত্তবিদ্যা (গৃহ নির্মাণ) ইত্যাদিসহ জীবনের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হিন্দুধর্মের মূল গ্রন্থ বেদ। বেদ বলতে কেবল একটি মাত্র পুস্তক বোঝায় না, বেদ একটি বিশাল অখণ্ড রচনা। বেদ কেবল ধর্মগ্রন্থই নয়, এটি ভারতবর্ষের প্রাচীনকালের সাহিত্য, সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের আকর ও প্রামাণ্য গ্রন্থ বলেও বিবেচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন