মহাভারত একখানা বিশাল গ্রন্থ। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেছেন ব্যাসদেব। তাঁর মূল নাম কৃষ্ণদ্বৈপায়ন। কাশীরাম দাস, কালীপ্রসন্ন সিংহ এবং আরও অনেকে বাংলা ভাষায় মহাভারত অনুবাদ করেছেন। তন্মধ্যে কাশীরাম দাস অনুদিত মহাভারত বেশ জনপ্রিয়। মহাভারত-এর মূল উপজীব্য বিষয় হলো কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। তবে এই আখ্যান ভাগের
বাইরেও দর্শন ও ভক্তির অধিকাংশ উপাদানই এই মহাকাব্যে সংযোজিত হয়েছে। উদাহরণরূপ বলা যায়, ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চার পুরুষার্থ সংক্রান্ত একটি আলোচনা এই গ্রন্থে সংযোজিত হয়েছে। মহাভারত এর অন্তর্গত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও উপাখ্যান হলো- ভগবদগীতা, দময়ন্তীর উপাখ্যান, রামায়ণ এর একটি সংক্ষিপ্ত পাঠান্তর ইত্যাদি। এ গুলোকে মহাভারত রচয়িতার নিজস্ব সৃষ্টি বলে মনে করা হয়। মহাভারত-এ এক লক্ষ শ্লোক ও দীর্ঘ গদ্যাংশ রয়েছে। এই মহাকাব্যের শব্দ সংখ্যা প্রায় আঠারো লক্ষ। মহাভারত এর আয়তন ইলিয়াড ও ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের দশগুণ এবং রামায়ণের চারগুণ। এই বিশাল মহাভারত কয়েকটি অংশে বিভক্ত। প্রত্যেক অংশকে বলা হয় পর্ব। মহাভারতে মোট আঠারোটি পর্ব আছে। পর্বগুলো হলো- ১ ) আদি পর্ব, ২) সভা পর্ব, ৩) বন পর্ব, ৪) বিরাট পর্ব, ৫) উদ্যোগ পর্ব, ৬) ভীষ্ম পর্ব, ৭) দ্রোণ পর্ব, ৮) কর্ণ পর্ব , ৯) শল্য পর্ব, ১০) সৌপ্তিক পর্ব, ১১) স্ত্রী পর্ব, ১২) শান্তি পর্ব, ১৩) অনুশাসন পর্ব, ১৪) আশ্বমেধিক পর্ব, ১৫) আশ্রমবাসিক পর্ব, ১৬) মৌসল পর্ব, ১৭) মহাপ্রস্থানিক পর্ব এবং ১৮) স্বর্গারোহণ পর্ব। মূল কাহিনী প্রাচীন ভারতে শান্তনু নামে এক রাজা ছিলেন । পিতৃসত্য পালনের জন্য রাজা শান্তনুর পুত্র দেবব্রত বিবাহ করেন নি ও রাজ সিংহাসনে বসেন নি। এই ভীষণ প্রতিজ্ঞার জন্য তাঁকে ভীষ্ম বলা হয়। ভীষ্মের কনিষ্ঠ ভ্রাতা বিচিত্রবীর্য রাজত্ব চালান। তাঁর ছিল দুইপুত্র- ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু । জ্যেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হওয়ায় পাণ্ডু রাজা হন। কিন্তু পাণ্ডুর অকাল মৃত্যুর পর রাজত্ব ধৃতরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে আসে। সেখান থেকেই শুরু হয় মহাভারতের মহাবিরোধ। কে রাজা হবেন-পাণ্ডুর পুত্র না ধৃতরাষ্ট্রের ? শুরু হয় হিংসা, ষড়যন্ত্র, কপট দ্যূতক্রীড়া, বনবাস ইত্যাদি। কাহিনীর পরিণতি অষ্টাদশ দিবসব্যাপী এক সংহারক যুদ্ধ- যাতে ভারতবর্ষের বহু রাজার প্রাণ যায়। নিহত হন জ্যেষ্ঠ পুত্র দুর্যোধনসহ ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্র। শেষে রাজত্ব পান জ্যেষ্ঠ পাণ্ডুপুত্র যুধিষ্ঠির। সমস্ত কাহিনীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মূখ্য চালকের ভূমিকায় থাকেন। এই কাহিনীর আধ্যাত্মিক সারাংশ হল- ধর্মের জয় ও অধর্মের বিনাশ। রামায়ণের ন্যায় মহাভারতও পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও সমাদৃত গ্রন্থ। রামায়ণের ন্যায় মহাভারত থেকে উপাদান নিয়েও বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্য রচিত হয়েছে। মহাভারত একটি নিত্য পাঠ্য গ্রন্থ। মহাভারত এর কথা অমৃতের ন্যায়। তা শুনলেও পুণ্য হয়। তাই কাশীরাম দাস বলেছেন- মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন