বেদ, উপনিষদ প্রভৃতির ন্যায় রামায়ণও একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মগ্রন্থ। মহর্ষি বাল্মীকি সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ রচনা করেছেন। রামায়ণকে আদি কাব্যও বলা হয়। স্বয়ং ভগবান ত্রেতাযুগে অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্ররূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হন। তিনি জগতে
পিতৃভক্তি, ভ্রাতৃস্নেহ, পত্নীপ্রেমের আদর্শ এবং সত্যরক্ষা, প্রজানুরঞ্জন প্রভৃতি সদ্গুণের আদর্শ স্থাপন করেন। লোক কল্যাণের নিমিত্ত তাঁর জীবন চরিত্র মাহাত্ম্য প্রকাশই রামায়ণের মূল বিষয়বস্ত্ত। এছাড়াও আরও অনেক উপাখ্যান ও উপদেশ রামায়ণে রয়েছে যার মাধ্যমেও মানব সমাজের আদর্শ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভারতবর্ষের সমাজ ও জীবনে রামায়ণের গুরুত্ব অসীম। এখনও হিন্দুদের ঘরে ঘরে রামায়ণ পঠিত হয়। আদর্শ রাজা, আদর্শ ভাই প্রভৃতির চিত্র ও চরিত্র আজও জীবনাদর্শরূপে অনুসরণ করা হয়। হিন্দি ও বাংলা সাহিত্যসহ ভারতবর্ষের আরও অনেক ভাষায় রামায়ণের অনুবাদ করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় কবি কৃত্তিবাস ওঝা-র শ্রীরাম পাঁচালী বা কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং হিন্দি ভাষায় কবি তুলসীদাস গোস্বামীর রামচরিতমানস শীর্ষক রামায়ণ অত্যন্ত জনপ্রিয়। আবার অনেক ভাষার সাহিত্য রামায়ণ থেকে উপাদান নিয়ে নতুন সাহিত্য রচনা করা হয়েছে। সংস্কৃত সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি কালিদাস ‘রঘুবংশ ’ নামক কাব্য এবং বাংলা সাহিত্যের কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর মহাকাব্য ‘মেঘনাদ বধ’ রামায়ণ থেকে উপাদান নিয়ে রচনা করেছেন। এছাড়াও ইংরেজিসহ পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বহুভাষায় রামায়ণ অনূদিত হয়েছে। রামায়ণ পাঠ করলে অন্তর পবিত্র হয়। রামায়ণের উপাখ্যানসমূহের মধ্যে রয়েছে ধর্মের দর্শন ও সুমহান আদর্শের পরিচয়। সমগ্র রামায়ণ সাতটি ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগকে কাণ্ড বলে। এই সাতটি কাণ্ড হচ্ছে - ১) আদি কাণ্ড, ২) অযোধ্যা কাণ্ড, ৩) অরণ্য কাণ্ড ৪) সুন্দর কাণ্ড, ৫) কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড ৬) লঙ্কা কাণ্ড এবং ৭) উত্তর কাণ্ড ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন