সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

মহানুভবতা : বশিষ্ঠের মহানুভবতা


মানুষের মনে সুপ্রবৃত্তি ও কুপ্রবৃত্তি, ভালো ও মন্দ দুইই আছে। তেমনি আছে সংকীর্ণতা ও মহানুভবতা । মহানুভবতার অর্থ হলো অনুভবের মহত্ব বা বিরাটত্ব-উদারচিত্ততা । ‘উদারচরিতানাং তু বসুধৈব কুটুম্বকম্ ।’ যিনি উদার চরিত্রের অধিকারী বা মহানুভব , সমস্ত
বিশ্বই তাঁর আত্মীয়। যিনি সকল হীনতা, নীচতা, সংকীর্ণতা, সাম্প্রদায়িকতা, অহংকার, ক্রোধ, ঈর্ষা ও গ্লানির ঊর্ধ্বে নিজেকে স্থাপন করতে পারেন, তিনিই মহানুভব। তাঁর এই গুণই মহানুভবতা। মহানুভবতা ধার্মিকেরও লক্ষণ। মহানুভবতা জীবকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে। আত্মাকে উন্নত করে এবং সত্যিকারের ভগবদ্ভক্তে পরিণত করে। মহানুভবতা সম্পর্কে একটি পৌরাণিক উপাখ্যান আমরা জানব। বশিষ্ঠের মহানুভবতা পুরাকালে বশিষ্ঠ নামে এক ঋষি ছিলেন । ব্রহ্মর্ষি ছিলেন তিনি। ব্রহ্মর্ষি মানে ব্রাহ্মণ ঋষি। একই সময়ে আরেক জন রাজা ক্ষত্রিয় হয়েও সাধনার গুণে ঋষিত্ব লাভ করেন। সেই রাজর্ষির নাম বিশ্বামিত্র। বিশ্বামিত্র কিন্তু রাজর্ষি হয়েও সন্তুষ্ট নন। তিনি ব্রহ্মর্ষি হতে চান । তার জন্যে স্বীকৃতি চাই। সূর্যবংশের কুলগুরু বশিষ্ঠ যদি বিশ্বামিত্রকে স্বীকার করেন ব্রহ্মর্ষি বলে, তাহলে সকলেই অম্লান বদনে তাঁকে ব্রহ্মর্ষি বলে মেনে নেবে। কিন্তু ব্রহ্মর্ষি হওয়ার মতো গুণাবলি তখনও বিশ্বামিত্র অর্জন করেন নি বলে বশিষ্ঠ তাঁকে ব্রহ্মর্ষি বলে মেনে নিলেন না। ক্রোধে ও অহংকারে ফেটে পড়লেন বিশ্বামিত্র । তিনি মন্ত্রবলে এক রাজাকে রাক্ষস করে দিলেন। তাকে বললেন, - ‘তুমি যাও । গিয়ে বশিষ্ঠের একশ পুত্রকে ভক্ষণ করো।’ রাক্ষস বিশ্বামিত্রের কথা শুনে তখনি দৌড়াল। একটি একটি করে ভক্ষণ করল বশিষ্ঠের একশ পুত্রকে। এতেও বশিষ্ঠকে টলানো গেল না। তিনি বিশ্বামিত্রকে কিছুই বললেন না। পাল্টা অভিশাপ দিলেন না। কোন শাস্তির ব্যবস্থাও করলেন না। এদিকে বিশ্বামিত্র ঠিক করলেন, বশিষ্ঠ যদি তাঁকে ব্রহ্মর্ষি বলে স্বীকার না করেন, তাহলে তিনি তাঁকে হত্যা করবেন। তিনি একদিন গিয়ে লুকিয়ে রইলেন বশিষ্ঠ যে ঘরে থাকেন, তার পেছনে । বশিষ্ঠের স্ত্রী অরুন্ধতী। অরুন্ধতী জানালেন, ঘরে লবণ নেই। বশিষ্ঠ তখন অরুন্ধতীকে বললেন, -যাও , বিশ্বামিত্রের কাছ থেকে কিছু লবণ নিয়ে এসো। -বিশ্বামিত্রের কাছ থেকে । আশ্চর্য হলেন অরুন্ধতী। -যে আমাদের শত পুত্রের মৃত্যুর কারণ, তুমি আমাকে তার কাছে পাঠাতে চাইছো , তুচ্ছ লবণের জন্যে? বশিষ্ঠ বললেন- - আমি যে বিশ্বামিত্রকে ভালোবাসি। ও পুরোপুরি ব্রহ্মর্ষির যোগ্য হয়নি । তবে হবে। তখন ওকে ব্রহ্মর্ষি বলে স্বীকার করব। ও আরও সাধনা করুক। আমি তাই চাই । আড়াল থেকে এ কথা শুনলেন বিশ্বামিত্র। তিনি তখন ছুটে গিয়ে বশিষ্ঠের পায়ে পড়লেন। বললেন, -আপনি সত্যি মহানুভব। আমি অতি ক্ষুদ্র। আমি ব্রহ্মর্ষি হতে চাই নে। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। তখন বিশ্বামিত্রকে হাত ধরে তুলে বশিষ্ঠ বললেন, ওরে, আজ তুই অহংকার আর ক্রোধ ত্যাগ করেছিস। আমি তোকে আর্শীবাদ করছি। আজ থেকে তুই ব্রহ্মর্ষি হলি। স্তম্ভিত হলেন বিশ্বামিত্র। হঠাৎ যেন সম্বিত ফিরে পেলেন তিনি। আরেকবার বশিষ্ঠের পায়ে পড়লেন। বশিষ্ঠ পরম স্নেহে বিশ্বামিত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন