সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬

কাবের খেলা



কাবের খেলা

          খেলা মানুষের মধ্যে কাজের একঘেয়েমি দূর করে মানসিক প্রশান্তি আনয়ন করে থাকে। খেলাধুলা কাবদের এক সহজাত প্রবৃত্তি। একটু সুযোগ পেলেই কাব বয়সী শিশুরা খেলতে চায় এবং এর মধ্যে পেতে চায় প্রাণ ভরা আনন্দ। কিন্তু স্কাউটিংয়ে খেলাকে বৈচিত্র্যময় প্রোগ্রামের আওতাধীনে যোগ্যতা বৃদ্ধির অন্যতম সহায়ক কৌশল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। খেলার মাধ্যমে শিশুদের নেতৃত্বের বিকাশ, সবল, কর্মঠ, নিয়মানুর্তিতা, ধৈর্য্যশীল, শৃঙ্খলাবোধের উন্মেষ ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়ে থাকে। বয়স ভেদে চাহিদানুসারে কাব স্কাউট, স্কাউট ও রোভার প্রোগ্রামের কিছু কিছু খেলাধুলা পরিচালনা করা যায়।

কয়েকটি খেলার নাম :
বন্ধন তৈরী, সাত পাথরের খেলা, মৌখিক সংবাদ প্রেরণ ও কিমস গেম।


বন্ধন তৈরী :
স্থান : মাঠ
নিয়ম :  খোলা মাঠে কাবেরা পরিচালকের চার পাশে মহাবৃত্তে দাঁড়াবে। পরিচালক খেলার নিয়ম বলে সকলকে ডানে ঘোরার নির্দেশ দিয়ে নিজে রা-রা বলতে থাকবেন।  আর কাবেরা বৃত্তের বাহিরে একের পিছে পিছে অন্যরা ছুটতে থাকবে।  পরিচালকের ঘোষণা মোতাবেক কাবেরা সামনের দিকে দৌড়ে গিয়ে বন্ধন তৈরী করবে।
1.      (ব্যক্তিগত)- পরিচালক রা-রা বলার মধ্যে একটি সংখ্যা বলবেন যেমন- ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি বলবেন। কাবেরা ততজনই একত্রে মিলিত হয়ে বন্ধন তৈরী করবে। যারা পেছনের দিক দিয়ে আসবে বা কোন বন্ধনে ঢুকতে পারবে না তারা বাদ যাবে। এভাবে কমতে কমতে সর্বশেষ যে ষষ্ঠকের সদস্য সংখ্যা বেশী থাকবে তারা জয়ী হবে।
2.     (দলগত )- পরিচালক রা-রা বলার মধ্যে একটি আকৃতির কথা বলবেন। যেমন- ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত, শিলাবৃত্ত,  মহাবৃত্ত ইত্যাদি বলবেন।  সংগে সংগে ষষ্ঠকের সকলে  ঐ আকৃতিতে নির্ভুলভাবে বন্ধন তৈরী করবে। যাদের আকৃতি সঠিক হবে না বা দেরীতে হবে তারা বাদ পড়বে। সর্বশেষ যে ষষ্ঠক থাকবে তারা জয়ী হবে।

আইন নৃত্যও খেলার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।


সাত পাথরের খেলা :
উপকরণ :
একটি ইট, সাতটি চাড়া (৪ বর্গ ইঞ্চি) একটি টেনিস বা রবারের বল।

স্থান মাঠ :
মাঠের মাঝে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইট রেখে ইটের উপর ৭টি চাড়া একটার উপর একটি সাজিয়ে রাখতে হবে। ইট হতে ১৫ ফুট দূরে একটি দাগ টানতে হবে।

          আক্রমকারী ইটের উপর রাখা চাড়াগুলোকে দাগ থেকে বল ছুড়ে মাটিতে ফেলতে চেষ্টা করবে। আক্রমকারীরা প্রত্যেকে ৫ বার বল ছোড়ার সুযোগ পাবে।

          প্রতিরোধকারী দলকে চাড়াগুলোর পাশে পাশে থাকতে হবে। ইট থেকে চাড়াগুলো পড়ে যাওয়ার সংগে সংগে আক্রমকারী দল মাটিতে পড়ে যাওয়া চাড়াগুলো আবার ইটের উপর সাজিয়ে রাখবে।

          আবার প্রতিরোধকারীকে প্রস্তুত থাকতে হবে বল একবার মাটিতে ড্রপ যাওয়ার পর তারা তা লুফে নিতে পারে। যদি বল লুফে নিতে পারে তবে যে বল ছুঁড়েছিল সে এই রাউন্ডে আউট হয়ে যাবে।

          অন্যদিকে প্রতিরোধকারীরা চেষ্টা করবে চাড়া ইটের উপর সাজিয়ে রাখার আগে যেন বল ছুঁড়ে আক্রমকারীদের কোন খেলোয়া শরীরে আঘাত করতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কোন প্রতিরোধকারী বল নিয়ে ছুটাছুটি করতে পারবে না। যেখানে সে বল পেয়েছে সেখান থেকেই সে আক্রমণকারীদের গায়ে ছুঁড়ে মারবে। আক্রমণকারীরা সুযোগ বুঝে চাড়াগুলো পুনরায় ইটের উপর সাজিয়ে রাখতে পারে তবে তারা ১ পয়েন্ট পাবে। আর চাড়া সাজিয়ে রাখার পূর্বেই যদি ছোঁড়া বল গায়ে লাগে তবে আক্রমণকারীরা সবাই আউট হয়ে যাবে।
          প্রতিরোধকারীরা আক্রমণকারী হয়ে পূর্বের নিয়মে খেলা শুরু করবে। যে দল সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাবে সে দল খেলায় বিজয়ী হবে।




মৌখিক সংবাদ প্রেরণ :
 উপকরণ : খাতা ও কলম
স্থান :  মাঠ

          এই খেলায় কোন সংবাদ শুনে তা অন্যকে হুবহু মৌখিকভাবে বলতে হবে। এ খেলাটি দলগত।

নিয়ম : প্রত্যেক ষষ্ঠকের কাবেরা দশ হাত দূরে দূরে একই দিকে মুখ করে এক জনের পিছনে আর একজন দাড়াবে। প্রত্যেক ষষ্ঠকের প্রথম কাবের হাতে ১৫টি শব্দ বিশিষ্ট (বেশী বা কমও হতে পারে) একটি লিখিত সংবাদ দেয়া হবে। সে এটি পড়ে মুখস্থ  করবে। (মুখস্থ করার সময় পাবে ২ মিনিট) তারপর সংবাদের কাগজটি ইউনিট লিডার অথবা খেলার পরিচালকের নিকট ফেরত দেবে। সাথে সাথেই দ্রত দ্বিতীয় জনের নিকট দৌড়ে গিয়ে মুখস্থ সংবাদটি তার কানেকানে বলবে। এভাবে সর্বশেষ কাব স্কাউট সংবাদটি শুনে কাগজে লিখে নিয়ে খেলার পরিচালকের নিকট জমা দিবে।

          ১০ মিনিটের মধ্যে সংবাদ প্রেরণ করা শেষ করতে হবে। পরিচালক প্রয়োজনে সময় কমাতে বা বাড়াতে পারবেন। সমস্ত  ষষ্ঠকের সংবাদ পাওয়ার পর পরিচালক সেগুলো পরীক্ষা করে ফলাফল ঘোষণা করবেন।

কিমস গেম :

          কিমস গেম খেলার পদ্ধতি : ঘরের মেঝেতে একটা ট্রে বা ঘরের মেঝেতে পরিচিত ২৪ রকমের জিনিস যেমন- পেনসিল, কলম, ঘড়ি, চাবি, পাতা, ফুল, চাকু, বাশি ইত্যাদি এবং কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকবে। উপরে ঢাকনা তুলে এক মিনিট সময় দেওয়া হবে। সবগুলো জিনিস দেখে নিতে হবে। সংগে সংগেই আবার ঢেকে দেয়া হবে। তারপর, স্মৃতি শক্তির সাহায্যে লিখবে কি কি দেখেছে কাব স্কাউটরা।

ন্ততঃ ১৬ রকম জিনিসের নাম ঠিক ঠিক বা শুদ্ধ বানানে সঠিকভাবে লিখতে পারলে এতে পাশ হবে। অবশ্যই বুঝতে হবে কিসম গেম কি করে খেলতে হয়। এ খেলা খেলে কাব স্কাউটরা আনন্দ পাবে এবং স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটাবে।

কিমস গেম ও পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের খেলায় অংশগ্রহণ :

প্রিয় কাব স্কাউট ভাই ও বোনেরা তোমরা অনেক কিছু দেখ; সবকিছু তোমাদের মনে থাকে না। কিছু মনে থাকে, কিছু ভুলে যাও। সবাই সমান মনে রাখতে পার না। তোমাদের মনে রাখার ক্ষমতা কারো বেশি, কারো কম। এবারে তোমাদের এই মনে রাখার ব্যাপার নিয়ে একটি খেলার ব্যবস্থা করি দেখি কিছুক্ষণ পূর্বে দেখা জিনিস কে কতক্ষণ মনে রাখতে পার ।

          ধর, একটা ট্রে বা ঘরের মেঝেতে তোমার পরিচিত ২৪ রকমের জিনিস যেমন পেনসিল, কলম, ঘড়ি, চাবি, পাতা, ফুল, চাকু, বাঁশি ইত্যাদি সাজিয়ে এবং কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকবে। উপরে ঢাকনা তুলে এক মিনিট সময় তোমাকে দেওয়া হবে। সবগুলো জিনিস দেখে নিতে হবে। সংগে সংগেই আবার ঢেকে দেওয়া হবে। তারপর তুমি তোমার স্মৃতি শক্তির সাহায্যে বলবে বা লিখবে কি কি দেখেছ?

ন্ততঃ ১৬ রকম জিনিসের নাম ঠিক ঠিক বা শুদ্ধ বানানে সঠিকভাবে লিখতে পারলে তুমি এতে পাস করবে। অবশ্যই বুঝতে পেরেছ কিমস গেম কি করে খেলতে হয়। এ খেলা খেলে আনন্দ পাবে এবং স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটবে।

        পঞ্চইন্দ্রিয়ের খেলা : তোমরা এর মধ্যে স্মৃতিশক্তির খেলা শিখলে। আরও মজার খেলা আছে তোমাদের জন্যে। যেমন পঞ্চইন্দ্রিয়ের খেলা।

পঞ্চইন্দ্রিয় হচ্ছে- চোখ, কান, নাক, জিহবা, ত্বক। স্মৃতি শক্তির খেলার মাধ্যমে তোমরা চোখের খেলা শিখেছো।

কান : তোমরা নিশ্চয়ই জানো কান দ্বারা আমরা কোন শব্দ শুনি। এ শোনার দক্ষতা অর্জন করতে হলে বিভিন্ন রকম শব্দ কান দিয়ে শুনতে হয়। এ খেলা এভাবে খেলবে।

একটা বদ্ধ ঘরে বিভিন্ন রকম শব্দ করা হবে। যেমন কাঠের জিনিসের উপর আঘাত করা হবে। পর্যায়ক্রমে টিনের উপর শব্দ করা হবে। তামার বা কাসার পাত্রে আঘাত করা হবে। আড়াল থেকে শব্দ শুনে বলতে হবে কোনটা কিসের শব্দ।

নাক :  নাক দিয়ে তোমরা গন্ধ নাও। এবা এ ঘ্রাণশক্তির খেলা তোমরা কিভাবে খেলবে?
পৃথক পৃথক টুকরো কাপড়ে প্যাঁচানো থাকবে গোলাপ ফুল, গরম মশলা, লেবু, কমলার খোসা ইত্যাদি, এক এক করে গন্ধ শুঁকে বলতে হবে কোনটা কিসের গন্ধ। সঠিক জিনিসের গন্ধ শুঁকে জিনিসের নাম বলে দিতে পারলে তুমি খেলায় পাস করবে, জয় হবে।

জিহবা :  জিহবা দ্বারা আমরা সব ধরণের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করি। এই স্বাদ গ্রহণের অনুভূতি পরীক্ষা করতে তোমাদের জন্য মজার খেলা রয়েছে। যেমন তোমাদেরকে মরিচের গুঁড়ো, টক, তেঁতো, গুড়, লবণ ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাদের জিনিস জিহবা দিয়ে পরখ করে বলতে হবে। জিনিসগুলো চোখে দেখতে পারবে না, শুধু স্বাদ নিয়ে বলতে হবে। যদি সঠিকভাবে স্বাদ নিয়ে বলতে পারো তবেই তোমরা খেলায় জয়ী হবে।

ত্বক :  ত্বকের এ অনুভূতি দিয়ে শক্ত,  নরম বিভিন্ন প্রকার জিনিস সনাক্ত্ব করতে পারো। ত্বক-এর খেলা খেলতে তোমাদেরকে কতগুলো বিভিন্ন ধরণের জিনিস দেওয়া হবে। চোখে না দেখে, হাত দিয়ে স্পর্শ করে জিনিসগুলোর নাম বলতে হবে। যেমন- পৃথক পৃথক কাপড়ে বেঁধে দেওয়া হবে চাল, ডাল, তুলা ইত্যাদি জিনিস না দেখে হাত দিয়ে স্পর্শ করে নাম বলতে হবে। যে খেলোয়াড় স্পর্শ করে সঠিক জিনিসের নাম বলে দিতে পারবে সে এই ত্বক এর অনুভূতির খেলায় জয়ী হবে। আশা করি তোমরা এসব শিক্ষণীয় পঞ্চইন্দ্রিয়ের খেলার মাধ্যমে ইন্দ্রয়গুলোর সুষ্ঠু বিকা ঘটাবে। তোমাদের চেতনা শক্তির বিকাশ ঘটবে।

[বাংলাদেশ স্কাউটসের ‘ট্রেনার্স হ্যান্ডবুক ৩’ অনুসরণে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন