গোল্লাছুট
গোল্লাছুট
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন খেলা। দু’টি দলে এ খেলা হয়ে থাকে। টসের মাধ্যমে গোল্লাদল
ও ছুটদল স্থির করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় নিয়ম কানুন অনুযায়ী এ
খেলা হয়ে থাকে। এক এক অঞ্চলে এর নিয়ম কানুনের কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। তবে এই
খেলার সাধারণ নিয়ম কানুন প্রায় একই ধরনের। এই খেলার মাধ্যমে একাত্ববোধ, সমন্বয় ক্ষমতা,
পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব প্রভৃতি গড়ে ওঠে। খেলায় অংশগ্রহণকারীর শারীরিক শক্তি,
কর্মদক্ষতা, তেজ ও ক্ষিপ্রতা বাড়ায়।
সাধারণ
নিয়মাবলি :
(ক)
মাঠ- ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩৫ মিটার প্রস্থ (কিছুটা
কম বেশি হলেও চলে)।
(খ) খেলোয়াড়ের সংখ্যা- প্রতি দলে সমান সংখ্যক ৮ থেকে ১২ জন।
(গ) যারা গোল্লাকে কেন্দ্র করে হাত ধরে ছুটতে
শুরু করে তারা গোল্লাদল আর যারা মাঠের সর্বত্র ছড়িয়ে থেকে গোল্লাদলকে বাধা দান করে
তাদের ছুটদল বলা হয়। দু’দলের আলাদা জার্সি থাকবে। তবে জার্সির অভাবে রঙিন ফিতা
ব্যবহার করা যায়।
(ঘ) প্রতিযোগিতার সময় : ৬০ মিনিট এবং
প্রতি ‘গোট্টা’-র (কোথাও ‘লোনা’ বলা হয়) মাঝে ২ মিনিট বিরতি। শিক্ষার্থীদের ক্লাস
চলাকালীন সময়ে খেলা ৩০ মিনিট ধরে চলতে পারে।
(ঙ) খেলা পরিচালক : ১জন রেফারি, ১জন
স্কোরার, ১জন আম্পায়ার, ১জন সময় রক্ষক।
(চ) গোল্লাধারী : গোল্লাদলের একজনকে
গোট্টা দানের জন্য গোল্লধারী ঠিক করে নিতে হবে। তার সাথে হাত মিলিয়ে গোল্লাদলের অন্য
খেলোয়াড়রা শিকল বানাবে।
(ছ)
গোট্টা : গোল্লাধারী তার
অবস্থান থেকে সরে ছুটদলের ছোঁয়া এড়িয়ে নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে অন্য প্রান্তে
পৌঁছাতে পারলে একটি গোট্টা হবে। যে দল বেশি গোট্টা পাবে সেই দলই জয়ী হবে।
(জ)
লাল : একটি লাল সমান সাতটি
গোট্টা। ছুটদলের ছোঁয়া এড়িয়ে গোল্লাদলের যারা অন্য প্রান্তের নির্ধারিত সীমা
অতিক্রম করবে তাদের পাক্কা বলে। গোল্লাদলের কারো পাক্কা হওয়ার কাজ শেষ হলে মুখে
আওয়াজ করবে (মুখে হাত চেপে চেপে) সাথে সাথে গোল্লাধারীও অনুরূপ আওয়াজ করলে পাক্কা
খেলোয়াড় গোল্লার কাছে ফিরে আসবে এবং একে একে গোল্লার অবস্থান থেকে অন্য প্রান্তের
দিকে লম্বা লাফ দিবে। প্রতি লাফের সাথে সাথে গোল্লাধারীর অবস্থান এগিয়ে যাবে। এই
অবস্থান থেকে আবার শিকল করে খেলা চলতে থাকবে। এভাবে যদি গোল্লাধারী তার দলের কোন
না কোন খেলোয়াড়কে নিয়ে অপর প্রান্তের নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করতে পারে তবে তারা
একটি লাল পাবে।
(ঝ)
পৌঁছান পদ্ধতি : গোল্লাধারী
খেলোয়াড় ১০/১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের একটি বৃত্তে দাঁড়াবে কিংবা বৃত্তে তার একটি
পা রেখে দাঁড়াবে। মাঠের চারদিকে সীমানা নির্ধারিত থাকলেও অপর প্রান্তে গোল্লাদলের
অতিক্রম করার জন্য সীমানাটি বিশেষভাবে নির্ধারণ করা থাকবে। গোল্লাধারী তার বৃত্তে
থাকবে এবং তার দলের অন্যান্য খেলোয়াড়রা তাকে ধরা অবস্থায় একে অন্যের হাত ধরাধরি
করে শিকল তৈরির মাধ্যমে লম্বা হয়ে যাবে। গোল্লাধারীকে কেন্দ্রে রেখে সকলে ঘুরবে। এ
অবস্থায় ছুটদলের কাউকে স্পর্শ করলে সে আউট হবে। ছুটদলের খেলোয়াড়রা সারা মাঠে ছড়িয়ে
থাকবে এবং গোল্লাদলের খেলোয়াড়দের মাঠের অপর প্রান্তে সীমানা অতিক্রমে বাধা দিবে।
(ঞ)
দল বদল : নিম্নলিখিত কারণে গোল্লাদল, ছুটদল এবং ছুটদল, গোল্লাদল হবে।
১)
গোল্লাধারী তার অবস্থান স্থল ত্যাগ করে অন্য প্রান্তের নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম
করার আগে ছুটদলের খেলোয়াড় কর্তৃক ছোঁয়া হলে;
২)
গো্লোধারী ছাড়া গোল্লাদলের সকলে আউট হয়ে যাওয়ার পর রেফারির সংকেতের ২ মিনিটের
মধ্যে গোল্লাধারী অন্য প্রান্তের সীমানা অতিক্রম করতে না পারলে;
(চ)
কখন কে আউট :
১.
গোল্লাদলের কেউ (শিকল ছাড়া অবস্থায়) কিংবা ছুটদলের কেউ সম্পূর্ণরূপে মাঠের সীমানার
বাইরে চলে গেলে অর্থাৎ কোর্টের বাইরে গেলে আউট বলে ধরা হবে।
২.
গোল্লাধারী কিংবা গোল্লাধারীকে ছোঁয়া বা ধরা অবস্থায় ছুটদলের কাউকে ছুঁইলে ছুটদলের
সেই খেলোয়াড় আউট হবে।
৩.
গোল্লাধারী থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় খেলোয়াড়কে ছুটদলের কেউ ছুইলে গোল্লাদলের সেই
খেলোয়াড় আউট হবে।
দলীয় ক্রীড়া কৌশল :
গোল্লাদল
1. চতুর ও বুদ্ধিমান খেলোয়াড়কে গোল্লাধারী করা।
2. শিকল
ভেঙ্গে ছোট দলে ভাগ হয়ে ছুটদলের খেলোয়াড়দের কাছে আসার সুযোগ দেওয়া।
3. পাক্কা হওয়ার ভান করা।
4. ছুটদলের দৃষ্টি এড়িয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করা।
5. অল্প সময়ে বেশি সংখ্যক পাক্কা হওয়ার কৌশল
অবলম্বন করা।
6. সুযোগ হলে একজন আউট হয়ে নিজ দলের ২/৩ জনকে
পাক্কা হওয়ার কৌশল অবলম্বন করা ইত্যাদি।
ছুটদল
1.
গোল্লাধারীকে পাহারা দেওয়ার জন্য দু’ একজন চতুর
খেলোয়াড় নিয়োজিত করা।
2.
পাক্কা
হতে না দেওয়ার জন্য মাঠের অন্য প্রান্তে দু’ একজনকে দায়িত্ব দেওয়া।
3.
তাড়া
করে ছুঁতে পারে এমন একজন দ্রুতগামী খেলোয়াড়কে ঠিক করে নেওয়া।
4.
টুকরা
হয়ে যাওয়া গোল্লাদলকে একত্রিত হওয়ার সুযোগ না দেওয়া।
5.
গোল্লাদলের
বেশি সংখ্যক খেলোয়াড়কে আউট করে বিপক্ষ দলকে দুর্বল করার কৌশল অবলম্বন করা।
লক্ষণীয় বিষয় :
1.
গোল্লাধারী
তার অবস্থান স্থলের বাইরে কখনো বের হলে অবশ্যই তাকে ছুটদলের ছোঁয়া এড়িয়ে নির্ধারিত
সীমানা পার হতে হবে কিংবা ছুটদলের নিকট ধরা দিয়ে আউট হতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন