ক্যাম্প ফায়ার বা তাঁবু জলসা
স্কাউটিং এর শুরু থেকেইে বি.পি ক্যাম্প ফায়ার বা
তাঁবু জলসার প্রচলন করেন। আফ্রিকায় থাকাকালে বি.পি লক্ষ্য
করতেন জুলুরা দিন শেষে সন্ধ্যার পর স্তুপীকৃত কাঠে আগুন জ্বালিয়ে
আগুনের চারপাশে বসে নাচ-গান করে আনন্দ উপভোগ করতো। এরূপ আগুন জ্বালানোর
ফলে চারপাশ আলোকিত হতো, এছাড়াও আগুন দেখে হিংস্র পশু আর ধারে কাছে আসতোনা। তারা এ
আগুনেই মাংস পুড়িয়ে খেতো। এতে তারা উত্তাপ পেত, কিছু
সময়ের জন্য ঠাণ্ডা থেকে রেহাই পেত।
জুলুদের আগুন জ্বালানোর
এ ব্যবস্থাটি বি.পি’র খুবই ভালো লেগেছিল। তাই তিনি স্কাউটিংয়ের ক্যাম্প ফায়ারের
প্রচলনের মাধ্যমে নির্মল আনন্দ লাভের বা চিত্তবিনোদনের সাথে সাথে কতগুলো উদ্দেশ্য
হাসিলের তাগিদ প্রদান করেন। ক্যাম্প ফায়ারের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া সদস্যদের এগিয়ে
দেয়া, স্কাউটদের লাজুকতা ও জড়তা দূর করা, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি,
নেতৃত্ববোধের উন্মেষ ঘটানো যায়।
স্কাউট ক্যাম্পে স্কাউটরা আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে বিভিন্ন প্রকার
নাচ-গান, অভিনয় ও আনন্দ করে থাকে। আগুন জ্বালানোর পরিবর্তে প্রতীকি হিসেবে বিকল্প ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এতে এক দিকে সারা দিনের কর্মক্লান্তি দূর হয়, অন্য দিকে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। চারদিক থেকে চারজন
চারটি মশাল জ্বালিয়ে তাদের আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং একত্রে ক্যাম্প ফায়ারের অগ্নি
প্রজ্বলন করে। আগুন জ্বালানোর সাথে সাথে অগ্নি প্রজ্বলনের
গান গাওয়া হয়। প্রতিটি গান-নাচ বা অভিনয়ের পর অংশ গ্রহণকারীদের
উৎসাহ দেয়ার জন্য আনন্দ ধ্বনি বা ইয়েল দেয়া হয়। ক্যাম্প
ফায়ারে রুচিসম্মত ও শিক্ষামূলক
বিষয় পরিবেশন করা শ্রেয়। ক্যাম্প ফায়ারের সামগ্রিক কাজ
পরিচালনা করেন ক্যাম্প ফায়ার লিডার।
ক্যাম্প ফায়ার লিডার :
ক্যাম্প
ফায়ার যিনি পরিচালনা করেন তিনি ক্যাম্প ফায়ার লিডার নামে অভিহিত হন। ক্যাম্প ফায়ার লিডারের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার
জন্য তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী লিডার মনোনীত করবেন ও
দায়িত্ব ভাগ করে দিবেন। ক্যাম্প ফায়ার
লিডারের নির্দেশিত সহকারি লিডারগণ সুষ্ঠুভাবে ক্যাম্প ফায়ার সমাপণ করেন।
ইয়েল
’ইয়েল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ উচ্চস্বরে চিৎকার, আনন্দ চিৎকার,তীব্র গর্জন; অর্থাৎ চিৎকার বা গর্জন করে মনের ভাব প্রকাশ। স্কাউট
বয়সীরা চিৎকার করতে ভালোবাসে। আর এ কারণে স্কাউটিং এর গোড়া
থেকেই কোন আনন্দ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সর্বসম্মতভাবে ইয়েলের প্রচলন রয়েছে।
ইয়েল শুধু চিৎকার করে হয় তা নয়, বিভিন্ন কৌশলে নানা অঙ্গভঙ্গীতে আনন্দদায়ক শিক্ষনীয় ইয়েল হতে পারে। এমন ইয়েল যুগ যুগ ধরে সকলের কাছে সর্বত্র খুবই সমাদৃত
হয়েছে।
সবাই
একত্রে : আমরা সবাই এক সাথে এই আগুন প্রজ্জ্বলিত করলাম। এ আগুনের শিখা যেমন
উর্ধ্বগামী আমাদের আশাকাঙ্খাও তেমনি
উর্ধ্বগামী হোক। এ আগুন যেমন চারদিক আলোকিত করছে আমাদের সুপ্ত প্রতিভা তেমনি বিকশিত হোক, আগুন যেমন জ্বালানীকে ভস্মীভূত করছে তেমনি আমাদের কু-রিপুগুলো ভস্মীভূত হোক। আগুন প্রজ্জ্বলনের সাথে সাথে নিম্নরূপ গান গাওয়া হয়ে থাকে :
(ক্যাম্প ফায়ার
গান-১)
ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ার
এই হলো গো ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ার ।।
দাও ইয়েল, দাও ইয়েল, দাবানল জ্বললো
লাল জিহবা তার আকাশে উড়লো।
ধরলো আগুন দ্বিগুণ তেজে
রূপ নিলো আজ এ কোন সাজে
দিকবাহার, দিকবাহার,
দিকবাহার।।
ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ার
এই হলো গো ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ার ।।
সারা মাঠ ভরলো আলোর বানে
উল্লাস উঠলো গানের তানে
হউক জয় এইবার, এইবার, এইবার
ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ার
এই হলো গো ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ার ।।
গীতিকার- নিকোলাস ডি রোজারিও
স্কাউটার, সেন্ট গ্রেগোরী স্কুল, ঢাকা
সুরকার : সমর দাস
সময়কাল : ১৯৬৫-৬৬
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন