অনেক অনেককাল আগে এক দেশে এক রাজা ছিলেন। নাম তার রন্তিদেব। তিনি শুধু রাজা ছিলেন না, ছিলেন রাজার রাজা মহারাজা। সম্রাট। কিন্তু সম্রাট হয়েও রন্তিদেব পার্থিব বিষয়ের প্রতি আসক্ত নন। শ্রীকৃষ্ণের চরণকেই তিনি একমাত্র সম্পদ বলে জ্ঞান করেন।
শ্রীকৃষ্ণে সবকিছু সমর্পণ করে তিনি নিলেন অযাজক বৃত্তি। অযাজক বৃত্তি হচ্ছে, ভিক্ষা চাওয়া যাবে না, লোকে ইচ্ছে করে যা দেবে, তাই দিয়েই দিন যাপন করতে হবে। একবার রাজা রন্তিদেবের আটচল্লিশ দিন একনাগাড়ে অনাহারে কাটছে । তিনিও খেতে চান নি, কেউ ইচ্ছে করে কিছু দেয় নি। ঊনপঞ্চাশ দিনের দিন এক ভক্ত তাঁকে অন্ন আর পায়েস দিয়ে গেলেন। এবার তাঁর উপবাস ভঙ্গ হবে। হঠাৎ তাঁর সামনে যেন মাটি ফুঁড়ে উঠল একটি লোক। খেটে- খাওয়া, জীর্ণ চেহারা সাথে আবার একটা পোষা কুকুর। ‘ক’দিন ধরে কিছুই খেতে পাইনি, দয়া করে আমাকে কিছু খেতে দিন। আমার কুকুরটাও না খেয়ে আছে।’ বলল লোকটা। ক্ষুধার্ত লোকটির করুণ অবস্থা দেখে রাজা রন্তিদেবের চোখে জল এলো। কুকুরটি ক্ষুধায় ধুঁকছিল। তিনি যে অন্ন আর পায়েস ভিক্ষা পেয়েছিলেন, তার পুরোটাই লোকটিকে আর তার কুকুরটিকে দিয়ে দিলেন। ‘পেট ভরল না।’ -লোকটি জানাল। হাত জোড় করে জানালেন রাজা রন্তিদেব, ‘আর তো কিছু নেই, ভাই।’ এরই নাম মানবতাবোধ । গভীর মমতাবোধ থাকলে আটচল্লিশ দিন না খেয়ে থাকার পরেও খাদ্য নিজে না খেয়ে অন্যকে বিলিয়ে দেওয়া যায়। হঠাৎ আরও অবাক করা একটি ঘটনা ঘটল । রাজা রন্তিদেব দেখেন, তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ক্ষুধার্ত লোকের রূপ ধরে এসে ভগবান পরীক্ষা করেছিলেন, রাজা রন্তিদেবের মানবতাবোধ কতটুকু। সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন রাজা রন্তিদেব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন